অমৃতকথা

চৈতন্যবৈভব

প্রকৃতপক্ষে শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবলোকে চৈতন্যবৈভব যেমন চমকপ্রদ তেমনি মনোহর, যা দেখেশুনে অনেকেই শ্রীরামকৃষ্ণজীবনে শ্রীচৈতন্যলীলার পুনরভিনয় কল্পনা করেছেন। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ কি সত্যসত্যই শ্রীচৈতন্যের পুনরাবির্ভাব? শ্রীরামকৃষ্ণের সমকালীন ব্যক্তিদের কয়েকজন ও পরবর্তীকালেরও কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যেই সাড়ে তিনশ বছর পরে শ্রীরামকৃষ্ণদেহে লীলাবিলাস করে গেছেন। এর পিছনে তাঁদের উদ্ধৃত শাস্ত্রপ্রণাম ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের সমর্থন লক্ষ্য করাবার মতো। চৈতন্য-ভাগবতে দেখা যায়, শ্রীচৈতন্য সন্ন্যাস গ্রহণের পূর্বে জননী শচীদেবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আরো দুই জন্ম এই সংকীর্তনারম্ভে। / হইব তোমার পুত্র আমি অবিলম্বে।’ এর ফলে ‘শুনিয়া শচীর কিছু স্থির হইল মন।’ নবদ্বীপের শোকাকুল ভক্তগণকেও তাঁর আরও দুবার পুনরাবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন, ‘এই জন্মে যেন তুমি-সব আমা-সঙ্গে।/ নিরবধি আছ সংকীর্তন-সুখ-রঙ্গে।।/এইমত আরো আছে দুই অবতার।/কীর্তন-আনন্দ রূপ হইব আমার।।/ তাহাতেও তুমি-সব এই মত রঙ্গে।/ কীর্তন করিবা মহাসুখে আমা-সঙ্গে।।’ আনন্দঘন শ্রীরামকৃষ্ণের ‘কীর্তন-আনন্দ রূপ’ এবং তাঁর মধ্যে অন্তর্দশা, অর্ধবাহ্যদশা ও বাহ্যদশার বিস্ফুরণ দেখে কেউ কেউ, বিশেষ করে বৈষ্ণবশাস্ত্র ও তন্ত্রশাস্ত্রে পারঙ্গমা বিদুষী সাধিকা ভৈরবী ব্রাহ্মণী শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যে আবিষ্কার করেছিলেন শ্রীচৈতন্যের পুনরাবির্ভাবের লক্ষণসমূহ। শ্রীচৈতন্যের মতো শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবেশে স্পর্শ করে অপরের মধ্যে ধর্মভাব উদ্দীপ্ত করে দিতেন। দ্বিতীয়ত, ঈশ্বর-বিরহ-বিধুর শ্রীচৈতন্যের গাত্রদাহ প্রশমিত হত স্রক্‌চন্দনাদি ব্যবহার করে। ঈশ্বরানুরাগের প্রাবল্যে শ্রীরামকৃষ্ণের গাত্রদাহ দেখা দিলে ব্রাহ্মণীর নির্দেশে তাঁর শরীরে চন্দনের প্রলেপ ও ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হলে তিনদিন পরেই তাঁর শরীরের জ্বালা একেবারে দূর হল। তৃতীয়তঃ ব্রাহ্মণী শ্রীচৈতন্যের ন্যায় শ্রীরামকৃষ্ণবপুতে উনিশটি ভাবের সম্মিলন যে মহাভাব—তার অভিস্ফুরণ সনাক্ত করলেন। চতুর্থতঃ ব্রাহ্মণী শ্রীরামকৃষ্ণের নিকট শুনলেন তাঁর দেড় বছর পূর্বের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। শ্রীরামকৃষ্ণ পালকিতে চড়ে কামারপুকুর থেকে শিহড়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ লক্ষ্য করেন তাঁর দেহের মধ্য থেকে দুটি কিশোর সুন্দর বালক বেরিয়ে এসে মাঠে ছোটাছুটি করছে—কখনও ফুলের খোঁজে দূরে চলে যাচ্ছে, কখনও বা পালকির নিকটে এসে তাঁর সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করছে, কথাবার্তা বলতে বলতে চলেছে। অনেকক্ষণ পর্যন্ত আনন্দে বিহার করে তারা দুজনেই শ্রীরামকৃষ্ণদেহে প্রবেশ করে। এই ভাবদর্শনের কাহিনী শুনে ব্রাহ্মণী বলেন, ‘বাবা, তুমি ঠিক দেখেছ; এবার নিত্যানন্দের খোলে চৈতন্যের আবির্ভাব—শ্রীনিত্যানন্দ ও শ্রীচৈতন্য এবার একসঙ্গে একাধারে এসে তোমার ভিতরে রয়েছেন।’ ব্রাহ্মণী তাঁর দাবির সমর্থনে চৈতন্যভাগবত থেকে শ্লোক উদ্ধার করে বলেন, ‘অদ্বৈতের গলা ধরি কহেন বারংবার/ পুনঃ যে করিব লীলা মোর চমৎকার।/কীর্তনে আনন্দরূপ হইবে আমার।।/ অদ্যাবধি গৌরলীলা করেন গৌররায়।/কোন কোন ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।।’ কিন্তু ব্রাহ্মণীর সিদ্ধান্ত মথুরানাথ-প্রমুখ অনেকেই মেনে নিতে পারলেন না। অতএব পণ্ডিতদের সভা ডাকা হল। বিচারে আমন্ত্রিত হয়ে আসেন পণ্ডিত সাধক বৈষ্ণবচরণ গোস্বামী। বৈষ্ণবচরণ তাঁর সাধনপ্রসূত সূক্ষ্মদৃষ্টিসহায়ে শ্রীরামকৃষ্ণকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে ব্রাহ্মণীর অভিমতই সমর্থন করলেন। 
স্বামী প্রভানন্দের ‘বাংলার যুগলচাঁদ: শ্রীচৈতন্য ও শ্রীরামকৃষ্ণ’ থেকে
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা