অভিনয়, পরিচালনা দুই নিয়েই অসম্ভব ব্যস্ত পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। আজ লন্ডন তো কাল মুম্বইয়ে তিনি। একাধিক প্রজেক্ট মুক্তির প্রতীক্ষায়। গুঞ্জন টলিউডে এক সঙ্গীত 
পরিচালকের দাম্পত্যে ভাঙনের নেপথ্যেও তিনি।  সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় বাইপাস সংলগ্ন হোটেলের পাঁচতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে অভিনন্দন দত্তের বাউন্সার সামলালেন এই টলি নায়ক।

লন্ডন থেকে কবে ফিরলেন?
এই তো নভেম্বরের শেষে।
করোনা পরবর্তী সময় ওখানে ‘ঘরে ফেরার গান’ ছবির শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কীরকম?
অনেক কিছুই বদলেছে। ওখানে এখন সেভাবে মাস্ক পরা নিয়ে কড়াকড়ি নেই। বেশিরভাগ মানুষের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে করোনা নিয়ে আতঙ্ক অনেকটাই কমেছে। তাছাড়া অরিত্র (ছবির পরিচালক) ওখানে পড়াশোনা করেছে। আগে তো প্রতি বছরই যেতাম। তাই সবকিছুই চেনা। খুব ভালোভাবেই শ্যুটিং শেষ করতে পেরেছি। 
‘অন্তর্ধান’ ছবির মুক্তিতে এত দেরি হল কেন?
আসলে গত বছর পয়লা বৈশাখেই ছবিটা মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মার্চ থেকে লকডাউন সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছিল। অবশেষে ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে এটাই ভালো খবর। 
একই দিনে আপনার দুটো প্রজেক্ট রিলিজ করছে। বাংলায় এই ছবিটা আর ওটিটিতে হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘আরণ্যক’। নিরুদ্দেশ মেয়েকে ঘিরে দুটো গল্প এগিয়েছে। বিষয়টা কি কাকতালীয়? নাকি এদের মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে?
(হেসে) ভীষণভাবেই কাকতালীয়! দুটো গল্পের মধ্যে কিন্তু কোনও মিল নেই। 
‘পরী’র পর বলিউডে ‘আরণ্যক’  তো আপনার অন্যতম বড় কাজ হতে চলেছে। 
আমি কিন্তু মাঝে ‘ব্ল্যাক উইডোজ’ ও ‘রামপ্রসাদ কি তেরভি’ করেছি। তবে হ্যাঁ, এটায় মুখ্য চরিত্র। বিপরীতে রবিনা ট্যান্ডন রয়েছেন। তাই সেদিক থেকে বিচার করলে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 
রবিনার সঙ্গে কাজ করে কী মনে হল?
ছোট থেকে ওঁর কাজ দেখে বড় হয়েছি। বলা যেতে পারে আমি ওঁর ভক্ত। ভীষণ শক্তিশালী অভিনেত্রী। রাশভারী দেখতে লাগলেও আদতে মোটেও ওরকম নন। শ্যুটিংয়ে একসঙ্গে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি। 
এই সিরিজে আপনার চরিত্র অঙ্গদ আর রবিনার চরিত্র কস্তুরীর মধ্যে তো একটা মতবিরোধ রয়েছে। 
হ্যাঁ, সেটা ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে। দুটো চরিত্রের মধ্যে বিস্তর ফারাক। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে পরে হয়তো ওরা কোথাও একই পথে এগতে থাকে। এর বেশি আর কিছু বলব না (হাসি)। 
ওঁর সঙ্গে এখনও নিশ্চয়ই আপনার কথাবার্তা হয়?
হ্যাঁ। কথা তো হতেই থাকে। এই তো আবার সিরিজটার প্রচারে মুম্বই যাব। তখন নিশ্চয়ই আবার ওঁর সঙ্গে দেখা হবে। 
‘আরণ্যক’ নামটার সঙ্গে বাঙালির একটা নস্টালজিয়া জড়িয়ে রয়েছে। এই বিষয়টা নিয়ে ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে?
(হেসে) এটা দেখলাম ইউনিটের কয়েকজন জানে। সিরিজের অন্যতম প্রযোজক রোহন সিপ্পির স্ত্রী বাঙালি। দেখলাম, ওঁর দৌলতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস সম্বন্ধে অবগত রোহনও।
বাংলায় এখন অনির্বাণ ভট্টাচার্য পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘মন্দার’ নিয়ে খুব চর্চা চলছে। দেখেছেন?
কাজের ব্যস্ততায় ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু দেখার সময় পাই না। তবে, ‘মন্দার’দেখা শুরু করেছি। 
হুমা কুরেশির সঙ্গেও তো দার্জিলিঙে একটা নতুন প্রজেক্টে কাজ করলেন। 
হ্যাঁ একটা থ্রিলার। নামটা এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে ‘চিট’। এখন এর বেশি আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।   
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’-এর কী অবস্থা?
পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শেষ। সম্প্রতি গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটা দেখানো হল। দুঃখের বিষয় আমি যেতে পারিনি। কিন্তু পাওলি (দাম) গিয়েছিল। বিদেশের বেশ কয়েকটা উৎসবেও ছবিটা দেখানো হয়েছে। খুব ভালো ফিডব্যাক। ধীরে ধীরে এখানে রিলিজের পরিকল্পনা করব।
একটা অন্য প্রসঙ্গে আসি। সম্প্রতি অনুপম রায় ও পিয়া চক্রবর্তীর বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে এসেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে নিন্দুকদের বক্তব্য, এর জন্য দায়ী নাকি আপনি। এমনকী, কিছু সংবাদমাধ্যমেও আপনার নাম উল্লেখ করা হল। কী বলবেন?
(একটু ভেবে) দেখুন, এই বিষয়টা নিয়ে আমি বিশেষ কিছু বলতে চাই না। এখন তো কোনটা খবর আর কোনটা নয়, সেটাও বুঝতে পারি না। কারও গালে একটা ব্রণ হয়েছে, কারও কান কাকে নিয়ে গেল—সেটাও খবর! কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা তা বিচারের দায় কারও নেই। কারণ এখন অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই কীভাবে মানুষকে চমকে দেওয়া যায় সেই খেলায় মেতেছে। পৃথিবীতে সিনেমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের মধ্যে আমিও একজন। সকলকেই জীবনে চড়াই-উতরাই পেরতে হয়েছে। ভালো কথার পাশাপাশি চারটে খারাপ কথা শুনতে হয়েছে। আমাকেও না হয় হল। তবে, এ বিষয়ে আমার নাম জড়ানো ঠিক হয়নি। এমনিতেও তখন আমি লন্ডনে ছিলাম। তাই এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি। 
এই ধরনের খবর কানে এলে খারাপ লাগে না?
দেখুন, যাঁরা লিখছেন তাঁদের হয়তো পেশার তাগিদে গসিপ লিখতে হয় বলে লিখছেন। আগে কারা গসিপ লেখেন, কারা খবর লেখেন সেগুলো বোঝা যেত। খবরের সত্যতা বিচার করাটা খুবই জরুরি। এখন তো আলাদা করে শ্রেণিবিভাগ করা মুশকিল। তবে হ্যাঁ, আমিও তো একটা সাংবাদিক পরিবার থেকে উঠে এসেছি। তাই আমার মনে হয় সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কোনও গুজব তৈরির আগে একবার অন্তত ভাবা প্রয়োজন। মানুষকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া উচিত। 
নেই নেই করে ইন্ডাস্ট্রিতে দু’দশক পূর্ণ করতে চলেছেন। ফিরে তাকালে এই সময়টাকে কীভাবে দেখেন?
চল্লিশ বছর বয়স হল। ভাবলে, চোখের সামনে অনেকগুলো জীবনকে দেখতে পাই। অনেকগুলো ভূমিকা। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক। বাপরে! কীভাবে এতটা সময় পেরিয়ে গেল ভাবতেই অবাক লাগে। দর্শকদের আর ইন্ডাস্ট্রির শুভাকাঙ্ক্ষীদের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। এখনও অনেকটা পথচলা বাকি। 
বলিউডে নতুন কোনও কাজের অফার?
ক্রিকেট নিয়ে একটা স্পোর্টস ফিল্মে অভিনয় করব। আগামী বছর আরও একটা মাল্টিস্টারার ছবি নিয়ে কথা চলছে। আমার প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারেও দুটো কাজ হতে পারে।   
ক্রিকেট নিয়ে ছবিটা কি ঝুলন গোস্বামীর বায়োপিক ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’?
না না! ওই ছবিটার তো আপাতত কাজ থেমে আছে। এই তো সেদিনও প্রসিতের (ছবির পরিচালক) সঙ্গে কথা হল। ওটার জন্য আমাকে কোনও চরিত্র অফার করা হয়নি।