যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
শহরটির অ্যাডিলেড থেকে উত্তরে ৮৪৬ কিমি দূরে। মরুভূমির মধ্যে। জায়গাটি কার্যত মনুষ্য বসবাসের অনুপযোগী। ২০০৬ সালের জনগণনা অনুযায়ী সেখানের লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার ৯১৬। গরমের সময় এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। আর শীতকালে তাপমাত্রা নেমে আসে শূন্য ডিগ্রিরও নীচে। তবে বছরের প্রায় সব সময়ই এখানকার তাপমাত্রা ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এর উপর আছে বালি ঝড়, প্রচণ্ড জলকষ্ট। এ সত্ত্বেও কুবার পেডিতে গড়ে উঠেছে এক মজার অত্যাধুনিক শহর। অবশ্যই মাটির উপরে নয়, মাটির তলায়। কী নেই সেখানে! রেস্তরাঁ, বইয়ের দোকান, বিনোদন কেন্দ্র, উপাসনালয়, ক্লাব, ব্যাঙ্ক, বাজার সব কিছু। পৃথিবীর যে কোনও আধুনিক শহরের সঙ্গে কুবার পেডির তুলনা করা যেতে পারে। সেখানে গল্ফ খেলার মাঠও আছে, তবে সেই মাঠে ঘাসের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাবে না। গল্ফ খেলা হয় রাতে এবং এমন বল ব্যবহার করা হয়, যা রাতের অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে।
অস্ট্রেলিয়ার এই শহরটি কিন্তু একদিনে গড়ে ওঠেনি। আদতে এলাকাটি খনি অঞ্চল। এর পাথুরে জমির সঙ্গে মিশে আছে বিশেষ এক ধরনের রত্ন— ওপাল। জানা যায়, ১৯১৫ সালে উইলি হাচিনসন যখন প্রথম এখানে ওপাল খনি আবিষ্কার করেন, তখন থেকেই এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। ১৯১৬ সাল থেকে এখানে ওপালের খনিতে খননকাজ শুরু হয়। সেইসঙ্গে পথচলা শুরু হয় এই কুবার পেডি শহরের। তার আগে এই অঞ্চল ছিল সাপ, পোকামাকড় ও এমু পাখির বিচরণ ভূমি। অপর একটি মতানুসারে, ১৮৫৮ সালে জন ম্যাকডুয়াল স্টুয়ার্ট নামে স্কটল্যান্ডের এক বাসিন্দা এই অঞ্চলটি প্রথম আবিষ্কার করেন।
একসময় রত্ন-লোভী মানুষজন দলে দলে ছুটে আসে কুবার পেডিতে। চলতে থাকে খোঁড়াখুঁড়ি। কুবার পেডি নামের পেছনে ছোট একটি ইতিহাসও আছে। সেখানকার আশপাশের অধিবাসীরা মাইনারদের খোঁড়াখুঁড়ি দেখে তাঁদের ভাষায় স্থানটির নাম দিয়েছিলেন ‘কুপা পিটি’। যার অর্থ হল মাটিতে সাদা মানুষের গর্ত। সেটাই পরে পরিবর্তন হয়ে গিয়ে কুবার পেডি। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে রত্ন সন্ধানীরা উপরে না থেকে নীচে শহর বানালেন কেন? আসলে মরুভূমিতে দিনে প্রচণ্ড গরম আর রাতে হাড় কাঁপানো শীত। এর থেকে রেহাই পেতেই তাঁরা মাটির নীচে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। মাটির নীচে কিছুটা গেলেই সহনশীল তাপমাত্রা পাওয়া যায় সারা বছরই। আর রত্ন সন্ধানীদের তো দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটাতে হতো মাটির নীচেই। তাই সেখানেই থাকার ঘর করে নিলে মন্দ কি! বরং ধুলোঝড় থেকেও বাঁচা যায়। এইভাবেই গড়ে উঠেছে আজকের কুবার পেডি শহর।
কুবার পেডি থেকে প্রতিদিন অ্যাডিলেডে নিয়মিতভাবে বাস যাতায়াত করে। ক্রিস রেয়ন এই শহর নিয়েই তাঁর বই ‘ওয়াইল্ড ফায়ার’ লিখেছেন। তিনি যখন বইটি লিখেছেন তখন সেখানে মাত্র তিনটি বাড়ি মাটির ওপরে ছিল এবং বাকি পুরো শহরটাই মাটির নীচে।
এছাড়াও মাটির নীচে আরও একটি শহরের কথা জানা যায়। সেটি হল ডেরিংকুয়ু আন্ডারগ্রাউন্ড সিটি। এই শহরটি তৈরি করেছিলেন তুরস্কের প্রাচীন ফেজিয়ান জনগোষ্ঠীর লোকজন। অনুমান করা হয় খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম-অষ্টম শতাব্দী থেকে খ্রিস্ট পরবর্তী দশম শতাব্দী পর্যন্ত এই নগরের স্থায়িত্বকাল ছিল। প্রাচীন তুরস্কের ক্যাপাডোসিয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি ভূগর্ভস্থ নগর ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং গভীর ছিল ডেরিংকুয়ু ভূগর্ভস্থ নগর। এই নগরটি ছিল সত্যিই বিস্ময়। গুহার মতো বিশাল এই নগরের কোনও কোনও জায়গা ১১তলা পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০ থেকে ৫০ হাজার অধিবাসীর বসবাস এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক গৃহপালিত পশু রাখার ব্যবস্থা আজকের মানুষকেও বিস্মিত করে।