যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
সবচেয়ে চাপের মধ্যে আছে কংগ্রেস, কারণ এই পাঁচ রাজ্যের খেলাতেই উপস্থিত তারা। অন্যদিকে, বিজেপি লড়াইয়ে আছে মাত্র তিনটি রাজ্যে। ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে তাদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা কংগ্রেসের সঙ্গে। ভারতে বিজেপির ভাগ্য দ্রুত নিম্নগামী। তেলেঙ্গানায় সম্মুখসমরে অবতীর্ণ বর্তমান শাসক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) এবং কংগ্রেস। মিজোরামে প্রধান খেলোয়াড় দুটি আঞ্চলিক দল—বর্তমান শাসক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) এবং সেখানকার উল্লেখযোগ্য বিরোধী শক্তি জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম)। অতীতের রেকর্ড বলছে, কংগ্রেসই ওই রাজ্যে তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি, বিজেপি নামেই প্রতিদ্বন্দ্বী সেখানে।
ভোটের ইস্যুগুলি
মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বের মতো দুটি মারাত্মক ইস্যুর দীর্ঘ ছায়া এই নির্বাচনের উপর স্পষ্ট। জরুরি ইস্যু দুটি নরেন্দ্র মোদি পাশ কাটিয়ে গেলেও, প্রচার পর্বে কংগ্রেস ওই দুটিতেই ভীষণ জোর দিয়েছে। কর্ণাটক মডেলের সাফল্য মনে রেখে, কংগ্রেসের ‘গ্যারান্টি’ই এই ভোটের শক্তিশালী অস্ত্র। জাতিভিত্তিক সমীক্ষার ইস্যুতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভোটে মোদিজির একমাত্র হাতিয়ার ছিল দুর্নীতি। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু তাই বলে এটাকেই সাধারণ নির্বাচনের পূর্বাভাস
বলে জাহির করতে পারি না, সেটা হবে ব্যাখ্যার বাড়াবাড়ি। এই প্রসঙ্গে ২০১৮ এবং ২০১৯-এর টাটকা শিক্ষার কথা মাথায় রাখা দরকার।
ছত্তিশগড়: সবাই ভাবছেন ছত্তিশগড়ে একটা সাদামাঠা ভোট হয়ে গেল। ৭ নভেম্বর। এই রাজ্যে প্রথম দফার ভোট নেওয়া হল। একই দিনে ভোট হয়েছে মিজোরামেও। ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, বিজেপি ছত্তিশগড়ে টানা তিন টার্ম ক্ষমতায় ছিল। ২০১৭-১৮ সালের শেষে ছত্তিশগড় ছিল ভারতের অত্যন্ত দরিদ্র রাজ্যগুলির একটি। ওই রাজ্যের ৩৯ শতাংশ বাসিন্দাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচতে হয়েছে। ২০১৮ সালে মানুষ ভোট দিয়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় এনেছে। কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুবাদে রাজ্যটি হয়ে উঠেছে ‘ভারতের ধানের গোলা’। ওই রাজ্যের মাথাপিছু আয় ২০১৮ সালে ছিল ৮৮,৭৯৩ টাকা। অঙ্কটা বেড়ে ১,৩৩,৮৯৭ টাকা হয়েছে ২০২৩ সালে। মাত্র পাঁচ বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের দারিদ্র্যমুক্তি হয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যের কোনও নেতার ‘মুখ’ ছাড়াই এই নির্বাচনে নেমেছে বিজেপি। সর্বত্র বিরাজমান একজনই—তিনি নরেন্দ্র মোদি। সমৃদ্ধির উত্থানেই সিলমোহর পড়েছে ছত্তিশগড়ে—কংগ্রেসই বিজয়ী হবে।
মধ্যপ্রদেশ: এখানে আসতে চলেছে ‘পরিবর্তন’। বর্তমান বিজেপি সরকারকে সকলে অন্যায় দখলদার মনে করে। ২০২০ সালের মার্চে দলবদলুদের নিয়ে শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতা দখল করেছিল সেখানে। জনগণ এটাও জানে যে বিজেপির মাতব্বররা চৌহানকে এখন বিশ্বাস করেন না। অতএব আর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বানাবে না গেরুয়া শিবির। শিবরাজের ক্ষমতা খর্ব করতে তাদের একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাংসদকে ময়দানে নামিয়েছে বিজেপি। এটা যেন চৌহানের দীর্ঘ ১৪ বছরের মেয়াদ বনাম ‘লাডলি বেহনা’ প্রকল্পের লড়াই! আশা করা হচ্ছে, ‘কখনও-হার-না-মানা’ কমলনাথ কংগ্রেসকে অর্ধেকটা পথ একাই পার করে দেবেন। দু’পক্ষই জিতছে বলে বুক ফোলাচ্ছে। কিন্তু পুরস্কারটি শেষমেশ সেই দলেরই হাতে উঠে আসবে যার সংগঠন মজবুত এবং বুথ ম্যানেজমেন্টে যে দড়।
রাজস্থান: রাজস্থান একটি রহস্যের নাম। ১৯৯৩ সালে দশম সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে একটা প্রবণতা তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, রাজ্যে বিজেপি এবং কংগ্রেস পাল্টাপাল্টি করেই ক্ষমতায় এসেছে। সেই ধারণা মতে, এবারও সরকার পাল্টে যাবে। অশোক গেহলট অবশ্য আত্মবিশ্বাসী এবং ‘নির্দলদের’ সাহায্যও নিতে পারেন। ভাগ্যের পরিহাস এটাই যে, ‘নির্দলদের’ উপর ভরসা করতে পারে বিজেপিও—অন্য রাজ্যগুলির মতো এখানেও অবশ্য বিজেপির স্থানীয় কোনও ‘মুখ’ নেই—সর্বত্র এটাই চেনা গল্প নরেন্দ্র মোদির। ‘নির্দল’ প্রার্থীরা আর কেউ নন, দুই দলের টিকিট না-পাওয়া কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোকজন। তাঁরা দুই দলেরই ‘গোপন অস্ত্র’ বলে মনে হচ্ছে। কোনও পক্ষই তার নিজের কোমরের জোরে পুরো পথের অর্ধেকটা পেরতে পারবে না। ৩ ডিসেম্বরের পর কে কাকে কতটা সাহায্য করবে, জয়পুরে আলোচনার কেন্দ্রে এখন সেটাই। ভোট-পরবর্তী নাটকই হতে চলেছে নির্বাচনী প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
অন্যান্য ঘোড়া
তেলেঙ্গানা রয়েছে তার নিজস্ব ঘরানায়। তেলেঙ্গানার বিগত দিনের ‘ক্রুসেডার’ বা ‘ধর্মযোদ্ধা’ চন্দ্রশেখর রাওকে মানুষ ‘ফার্মহাউস চিফ মিনিস্টার’ বলে ডাকে। সরকার পরিচালনা করছে একটি পরিবার। বিআরএসের এটাই শক্তি এবং এটাই দুর্বলতা।
অকুতোভয় রেবন্ত রেড্ডির নেতৃত্বে কংগ্রেসের যে অগ্রগতি ঘটেছে সেটা চমকপ্রদ। এই তেজি কংগ্রেস এবার বিআরএস’কে পিছনে ফেলে দেওয়ারই হুঙ্কার দিচ্ছে। গ্রামীণ তেলেঙ্গানায় সরকার-বিরোধী একটি ঢেউ লক্ষ করেছেন পর্যবেক্ষকরা। প্রচারে বিজেপিকে পাওয়া গিয়েছে ম্যাড়মেড়ে চেহারায়, তবু এরাজ্যে তারা কয়েকটি আসনে জিততে পারে। বিআরএসের ক্ষমতা পুনর্দখলের সুযোগ সামান্য কারণে ঝুলে গেলে তাদের ত্রাতা হয়ে উঠতে পারে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) এবং বিজেপি। এআইএমআইএম ৬-৭টি আসন পেতে পারে এবং বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা বড় জোর ৬টি আসনে। অন্যদিকে, কংগ্রেস যদি বিআরএসকে হারাতে পারে, সেটা সম্ভব হবে গ্রামীণ মানুষজন এবং যুব শ্রেণির আশীর্বাদে। আমরা একটি ‘সারপ্রাইজ’ আশা করতেই পারি।
মিজোরাম: মিজোরামের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে একটাই ইস্যু—মণিপুরের কুকি জনগণের ওই রাজ্যে চলে আসা। জোমো এবং কুকিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের ইস্যুকে মূলধন করে ভোট চেয়েছে এমএনএফ এবং জেডপিএম উভয় দলই। জনগণের ক্ষোভের আঁচ পেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তাই মিজোরামে তাঁর ভোট চাইতে যাওয়ার প্ল্যান তিনি বাতিল করেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, গত ৩ মে মণিপুরে হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হওয়া থেকে মোদি মণিপুর সফরেও যাননি। অতএব মিজোরামে এবারের ভোটের লড়াইটা একেবারেই এমএনএফ এবং জেডপিএমের মধ্যেকার। যে-ই জিতুক, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলকেই তারা সমর্থন করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং জাতীয় ক্ষেত্রে এই ফলাফলের কোনও প্রভাব পড়বে না।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে হবে—এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল সেটাই নির্ধারণ করে দেবে। জনগণের কাছে সবচেয়ে চিন্তার বা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিও চিনিয়ে দেবে এই নির্বাচন।
মতামত ব্যক্তিগত