যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
এরপর দেখা যায়, শাহরুখ খানের মধ্যেই বিদ্রোহ বিদ্রোহ আচরণের পরিবর্তে স্ট্র্যাটেজি বদল। কয়েকটি ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা, ভারত সরকারকে সাধুবাদ জানান তিনি। আর তার ফলও পাওয়া যায়। ‘জওয়ান’ নামক সিনেমা অনায়াসে রিলিজ করল। কোনও বিষয়েই আপত্তি অথবা বিক্ষোভ হয়নি। সে ছবিও নাকি কয়েকশ কোটি টাকার বাণিজ্য করল।
কিন্তু এই তথ্যগুলি নিছক প্রেক্ষাপট। প্রকৃত একটি মাস্টারস্ট্রোক দিতে দেখা গেল কুশলী শাহরুখ খানকে সদ্য। সেটি হল, হঠাৎ কলকাতা নাইট রাইডার্স নামক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দলে তিনি গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে এলেন টিম মেন্টর হিসেবে। গম্ভীরও খুশি হয়ে যোগ দিলেন শাহরুখ খানের মালিকানাধীন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে। গৌতম গম্ভীরের ক্রিকেটার ছাড়া
অন্য একটি পরিচয় কী? তিনি বিজেপির এমপি। দিল্লির হাইপ্রোফাইল আসন থেকে নির্বাচিত। আসন্ন লোকসভা ভোটেও নিশ্চিত আবার প্রার্থী হবেন। আগামী দিনে বিজেপি জয়ী হলে মন্ত্রীও হতে
পারেন কেন্দ্রে।
শাহরুখ খানের বিরুদ্ধে আগামী দিনে আর কি বিজেপি ভক্ত কিংবা উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সরব আক্রমণে নামতে পারবে? শাহরুখ খান দলের জয় নিশ্চিত করতেই হয়তো গম্ভীরকে এনেছেন। কিন্তু গম্ভীরের ওই রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত সঙ্ঘ পরিবারের ক্ষোভ বিক্ষোভের রাস্তাও কি বন্ধ করে দিলেন না? কারণ বিজেপির এমপিই তাঁর কোম্পানির মেন্টর!
২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধন। রামলালার মূর্তি মাথায় করে নিয়ে গিয়ে অধিষ্ঠিত করবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন করবেন তিনিই। তার আগে ডিসেম্বর মাসে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে লক্ষকণ্ঠে গীতাপাঠ অনুষ্ঠান হবে। সেখানেও আসছেন মোদি। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আবহে এই সপ্তাহেই হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গিয়েছেন মথুরায়। কৃষ্ণ জন্মভূমিতে প্রণাম ও পুজো করতে। বুধবার থেকেই প্রচার চলছে যে, এই প্রথম স্বাধীন ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমিতে পা রাখবেন। মন্দিরে পূজার্চনায় অংশ নেবেন।
এতদিনে জানা হয়ে গিয়েছে, একদিকে যেমন অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দীর্ঘকালের একটি রাজনৈতিক ইস্যুর পরিসমাপ্তি হতে চলেছে, ঠিক তেমনই সূক্ষ্মভাবে আরও দুটি ইস্যু নিয়ে ক্রমেই আইনি ও রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাশী ও মথুরা। দুটি ক্ষেত্রই আদালতে বিচারাধীন। এবং রামমন্দিরের পর এই দুই মন্দিরও যে ক্রমেই অন্যতম একটি ইস্যুতে পরিণত হবে, সেটাও স্পষ্ট। আদালতের রায়ের দিকে উৎসুক হয়ে যেমন গোটা দেশ তাকিয়ে থাকবে, তেমনই আবার এই দুই মন্দিরকে ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতাও তুঙ্গে উঠবে।
অর্থাৎ ২০৪৭ সালে ভারত হবে অর্থনৈতিকভাবে তৃতীয় শক্তিশালী দেশ। ২০২৫ সালে ভারত হবে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি, ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন হবে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হবে, প্রচুর জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা ইত্যাদি নানাবিধ ইতিবাচক ও ফিল গুড ফ্যাক্টরের প্রচার চললেও এখনও বিজেপির কাছে ভোট জয়ের প্রধান ভরসা যে হিন্দুত্বই সেটা প্রমাণিত। তাই মোদি দু’দিকেই সমান ভারসাম্য বজায় রেখে এগলেও ভোটের আগে সর্বদাই একটু ঝুঁকে পড়েন হিন্দুত্বের দিকে। এখনও তাই হচ্ছে।
বিজেপি আমলে দেশে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক তথা জাতপাতের বিভাজন অনেক বেড়ে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কতটা সহায়তা করেছে সেটা দীর্ঘমেয়াদে বোঝা যাবে।
গোটা দেশকে সঙ্গে নিয়ে যদি একটি সম্মিলিত অর্থনীতির দৌড় শুরু করা যায়, তাহলে তা বিপুল সুফল প্রদানকারী হবে। অর্থাৎ হিন্দু মুসলিম, দলিত, উচ্চবর্ণ ওসব কিছুই দেখা হবে না। যে সম্প্রদায় ও জাত যে কাজে পটু তাদের সেই কাজে সম্পূর্ণ সাহায্য করবে রাষ্ট্র। নির্ভয়ে প্রতিটি নাগরিক নিজেদের পেশায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। যাতায়াতের পথে, ভোট এলে কিংবা কোনও ধর্মীয় পরবে ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না যে, এই বুঝি দাঙ্গা হল, উস্কানি হল। তাহলে এমন একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে যে, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের আশাতীত উৎপাদন হবে। রপ্তানি বাড়বে। দেশের রাজস্ব বাড়বে। আর এজন্য হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের নেতৃত্বকেই তৎপর হতে নির্দেশিকা দিতে হবে রাষ্ট্রকে। কোনও পক্ষের কোনও প্ররোচনা সহ্য করা হবে না।
ভারতের সবথেকে বড় শক্তি হতে পারত ঐক্যবদ্ধ এক ওয়ার্ক ফোর্স। অথচ ভারতকে সবথেকে দুর্বল করল এই বিভাজনের রাজনীতি। হিন্দু ও মুসলিমকে পরস্পরের শত্রুতে পরিণত করা হচ্ছে। দলিত ও উচ্চবর্ণকে আরও বেশি প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। বিভাজন হয়ে উঠছে শাসকের শক্তি, রাষ্ট্রের দুর্বলতা।
নরেন্দ্র মোদি নিজের দলের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অবশ্যই যেটা তাঁর কাছে সবথেকে ভালো মনে হবে তাই করবেন। তাঁর নিশ্চয়ই মনে হয়েছে যে, অন্য সব ইস্যু তো আছেই, কিন্তু সবথেকে বৃহৎ প্রভাব ফেলবে হিন্দুত্ব ইস্যু। আর সেই কারণেই তিনি অর্থনীতিকে আপাতত পিছনের সারিতে রেখে লোকসভা ভোট পর্যন্ত হিন্দুত্বকেই দিয়েছেন চালকের আসন। তিনি এটাই স্ট্র্যাটেজি হিসেবে নিয়েছেন।
তিনি জানেন, কোনওদিন সত্যিই বিশ্বগুরু হতে পারবেন কি না সেটা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তার থেকে অনেক সহজ হল তাঁর একান্ত পেটেন্ট নেওয়া ভাবমূর্তিকে আরও প্রতিষ্ঠিত করা। অর্থাৎ হিন্দু হৃদয়সম্রাট। সেটাই তিনি আরও বেশি করে করছেন। মোদিকে দেখা যাচ্ছে বসে নেই। কিছু না কিছু করছেনই। ঘুরে ঘুরে প্রচার করছেন। রাজনীতির কথা বলছেন। আবার পাশাপাশি নিয়ম করে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কখনও পিথোরাগড়, কখনও রামেশ্বরম। কখনও মথুরা। সুতরাং নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শাহরুখ খান থেকে নরেন্দ্র মোদি প্রত্যেকেই একটি অন্তত স্ট্র্যাটেজি নিচ্ছেন।
সেখানে কংগ্রেস কী করছে? এখনও পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোটের কোনও রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি দেশবাসী জানতে পারছে না। সবথেকে বড় কথা কংগ্রেস মোদির বিরুদ্ধে কোনও সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের ব্লুপ্রিন্ট কিংবা রোডম্যাপ দেখাতে পারছে না। বরং যতই দিন যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের মধ্যে নন সিরিয়াস আচরণ প্রকট হচ্ছে। রাহুল গান্ধী কখনও মোদিকে পকেটমার বলছেন। বিশ্বকাপে ভারত না জেতায় কখনও অপয়া বলছেন ভোটের প্রচারে। কেন মোদি ভারতীয় টিমের ড্রেসিং রুমে গিয়েছেন এসব নিয়ে আক্রমণ করছে তাঁর দল।
এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় তরল লঘু আলোচনায় মানানসই হয়। কিন্তু ভোটের ইস্যু হতে পারে? মোদিকে এসব বলে কি হারানো যায়? মানুষ দেড় বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার। বেকারত্ব চরমে। দারিদ্র্য যে কতটা তীব্র তার প্রমাণ মোদি নিজেই দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বিনামূল্যে রেশন গরিবদের জন্য আরও ৫ বছরের জন্য চলবে বলে জানিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি তাঁর প্রচার মতো ভালো হলে তো এই ঘোষণা করতে হতো না! যুবকযুবতীর কাছে শিক্ষা ও স্কিল থাকা সত্ত্বেও জীবিকা নেই। এসব নিয়ে সরকারকে চরম ব্যাকফুটে ফেলে দেওয়া যায়। অথচ এসব নিয়ে কোনও লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ইন্ডিয়া জোটের কোথায়? ভারতের সর্বত্র একমাত্র কংগ্রেসের উপস্থিতি আছে। বাকি আঞ্চলিক দলগুলি তো নিজেদের রাজ্যে শক্তিসঞ্চয় করবে। কিন্তু কংগ্রেসকেই সবথেকে বেশি ইন্ডিয়া জোটের জনপ্রিয়তার দায়িত্ব নিতে হবে। সেই ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
প্রচার কোথায়? জনসংযোগ কোথায়? ২৮ রাজ্য, ৭৬৬ জেলা, আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ১৪০ কোটি জনসংখ্যা। ইন্ডিয়া জোটের নাম এই বিপুল ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কোনও চেষ্টা হচ্ছে? কতজন জানে ইন্ডিয়া জোটের নাম?