যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
এই সৎ ছাত্রটি কে জানো? তিনি হলেন ‘জাতির জনক’ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী!
ছোট্ট মোহনদাসের বড়দাদার এক অসৎ বন্ধু ছিল। একদিন মোহনকে তার সঙ্গে দেখে তাঁর মা পুতলীবাই বারণ করে দিলেন ওই খারাপ ছেলেটির সঙ্গে না মিশতে। তিনি কিন্তু মায়ের বারণ না শুনে ছেলেটির সঙ্গে মেলামেশা জারি রাখলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল ইংরেজদের ভারত থেকে তাড়ানোর। সেই কথা এই অসাধু ছেলেটিকে একদিন বলে ফেলতেই সে বলল, ‘তাহলে তোমাকে ইংরেজদের মতো মাংস খেতে হবে মোহন। তবেই তো ওদের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠে ওদের তাড়াতে পারবে!’ কিন্তু গান্ধীজির পরিবার তো নিরামিষাশী। মাছ-মাংস খাওয়া নিষেধ! তাহলে উপায়? অসাধু ছেলেটিই উপায় বাতলে দিল! নদীর নির্জন তীরে রোজ দুপুরে সে মাংস রান্না করে মোহনকে খাওয়াবে। মাংস খেয়ে ভরা পেটে বাড়িতে আর খেতে পারতেন না তিনি। ক’দিন লক্ষ করে মা জানতে চাইলে তিনি মাকে সত্যি কথাটা বলতে পারলেন না। এদিকে, রোজ মাংস খাওয়ার পয়সা জোগাতে মোহন একজনের কাছে পঁচিশ টাকা ধার করলেন এবং সেই ধার শোধ করার জন্য দাদার হাতের তাবিজ থেকে সোনা কেটে তা বিক্রি করে দিলেন!
কিন্তু এতগুলো অন্যায় কাজ করার ফলে মোহনের মধ্যে বিবেক দংশন শুরু হল! মা-বাবার সামনে দাঁড়িয়ে অন্যায়গুলো স্বীকার করার সাহস না পেয়ে শেষপর্যন্ত ভাবলেন বাবাকে একটা চিঠি লিখে সব দোষ স্বীকার করে নেবেন।
সেইসময় তাঁর বাবা অসুস্থ ছিলেন। তবু তিনি কোনওমতে উঠে বসলেন ছেলের চিঠিটা পড়ার জন্য। মোহনের ভয় হল সব জানার পর বাবা তাঁকে কী শাস্তি দেবেন ভেবে! বাবা রেগে গেলে নিজের মাথাও ঠুকতেন! এই অসুস্থ শরীরে তেমন কিছু করলে তো মারাত্মক ব্যাপার হবে! এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখলেন, তাঁর বাবা চিঠিটা পড়ার পর সেটা ছিঁড়ে ফেললেন! হতভম্ব মোহন এবার দেখলেন বাবার দু’চোখ বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা! রাগলেন না, মাথা ঠুকলেন না, বকলেন না, মারলেন না— শুধু তাঁর চোখের জল দিয়ে তিনি ছেলের মনের পরিবর্তন ঘটাতে চাইলেন! বাবার চোখে জল দেখে মনে মনে কিশোর গান্ধীজি অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে গেলেন!
পরবর্তীকালে নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছিলেন, ‘...আমার কাছে এই ঘটনাটা অহিংসার প্রথম উদাহরণ!’
আজ, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের অহিংস আন্দোলনের পথপ্রদর্শক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে, এসো আমরাও প্রতিজ্ঞা করি তাঁর মতো সৎ হবার!