যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
পুজো দোরগড়ায়। আর দিন কয়েকের অপেক্ষা। সকলের মনেই এখন পুজো পুজো ভাব। শুরু হয়ে গিয়েছে বারোয়ারি মণ্ডপ বাঁধার কাজ। তবে, এবছর প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় শরৎটা এখনও সেভাবে উপভোগ্য হয়ে ওঠেনি। দিনে অসহ্য রোদ। আবার কখনও বজ্রবিদ্যুৎ সহ তুমুল বৃষ্টি!
আসলে প্রকৃতিই জানান দেয় মা আসছেন। শরৎ মানেই আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, নদীর ধারে কাশফুল আর বাড়ির উঠোনে ঝরে পড়া শিউলি ফুল আগমনি বার্তা এনে দেয়। প্রকৃতিই দেবী দুর্গার রূপ আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে।
প্রাক শারদোৎসব মানেই বিকেলে ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের দল। মেঘের দলই যেন সৃষ্টি করেছে এক রমণীর মুখ। ঠিক যেন মাদুর্গার মুখ। মা যেন আমাদের দেখছেন। আমাদের মন যেমন পুজোর আনন্দে নেচে উঠেছে, মায়ের মনও তো একইভাবে বাপের বাড়ি আসার জন্য ছটফট করছে।
—দ্যুতি কোলে,
অষ্টম শ্রেণি
জমিয়ে ঢাক বাজাব
মন এখন থেকেই আনন্দে নেচে উঠেছে। আর কিছুদিন পরেই শুরু হবে স্কুলের লম্বা ছুটি। পুজোর ছুটির মজাই আলাদা। পুজো মানেই বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে হইহল্লা, ঠাকুর দেখা, ফুচকা খাওয়া। পুজো মানেই চেনা রুটিনের বাইরে মন খুলে আনন্দ করা। নেই বাবা-মায়ের বকুনি। এবছর পুজোর মোটামুটি যে প্ল্যান হয়েছে— বাড়ির সবাই গাড়ি ভাড়া করে ঠাকুর দেখতে যাব। কোন প্রতিমা সুন্দর, কোন প্যান্ডেল কাকে টেক্কা দিল, কোন পুজোর আলোকসজ্জা মন ভরাল— বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা হবে। অষ্টমীতে মায়ের সঙ্গে দেব পুষ্পাঞ্জলি। আগে থেকেই বলে রেখেছি, এবার পাড়ার পুজোয় ঢাক বাজাব। পাড়ার দাদারাও রাজি হয়ে গিয়েছে। পুজোর চারটে দিন বুক ভরে অক্সিজেন নেব।
—দীপ বাগ, নবম শ্রেণি
কোন দিন কোন জামা পরব?
মাঠের কাশফুলগুলো বলছে, শরৎ এসে গিয়েছে, মর্ত্যে আসছেন মাদুর্গা। আমার ইতিমধ্যে পুজোর শপিং বেশখানিকটা হয়ে গিয়েছে। বাবা-মায়ের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও পেয়ে গিয়েছি পুজোর উপহার। এতগুলো জামা-প্যান্ট হলে যেমন মন ভালো লাগে, তেমন একটা সমস্যাও হয়। মজার সমস্যা। কোন দিন কোন জামাটা পরব ঠিক করা যায় না। সত্যি বলতে, আমার পুজোর প্ল্যান চলে সারা বছর। আর পুজো শুরু হয়ে যায় মহালয়া থেকেই। আমার বাড়ির সামনেই হয় বারোয়ারি পুজো। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে প্যান্ডেল বাঁধার কাজ। এখনও তো আমি একটু ছোট। একটু বড় হলে ইচ্ছা আছে, ঠাকুর আনতে পাড়ার কাকু-দাদাদের সঙ্গে আমিও যাব।
—রঙ্গন আদক, সপ্তম শ্রেণি
মজার আর এক নাম
‘পুজো’ শব্দটা শুনলেই মনের মধ্যে জমে থাকা সমস্ত ক্ষোভ, রাগ, দুঃখ এক নিমিষে মুছে যায়। ‘পুজো’ মানেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও ঐক্য। বাঙালির কাছে পুজো মানে মজার আর এক নাম। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা ভুলে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। ঢাকের আওয়াজ সকলের মন ভালো করে দেয়। আমাদের মতো কিশোর-কিশোরীদের কাছে দুর্গাপুজোর আলাদা অনুভূতি। আমাদের থেকে যারা খানিকটা ছোট, তাদের কাছে পুজো মানেই প্যান্ডেলে ক্যাপ ফাটানোর শব্দ। পরের বছর আমাদের মাধ্যমিক। তাতেও পুজোর চারদিন পড়াশোনায় ইতি। বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে ঠাকুর দেখব, এখন থেকেই ঠিক করে ফেলেছি। জানি, দশমী মানেই বিষাদ। তবে, সে বিষাদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, দশমীর পর থেকেই যে, পরের বছরের প্রস্তুতি শুরু।
—সৌমিক দে, দশম শ্রেণি
বছরে একবারই কলকাতায় ঢুঁ
হুগলি জেলার অনামী গ্রামের বাসিন্দা আমরা। কর্মসূত্রে যাঁরা কলকাতা যান, সেটা আলাদা কথা। আমার মতো এখানকার ছোটদের সেই অর্থে সরাসরি রাজ্যের রাজধানী শহরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। আমার কলকাতায় ঢুঁ মারা মানেই পুজোয় ঠাকুর দেখা। বছরে একবারই শহর তিলোত্তমায় ঘুরে যাই, সেটা দুর্গাপুজোয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতা যাওয়া মানেই আলাদা আনন্দ। কত বড় বড় মণ্ডপ, আলোর রোশনাই, সুবিশাল প্রতিমা— সব মিলিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। রাস্তার পাশ থেকে ফাস্ট ফুড খাওয়ার মজাও অন্যরকম। এছাড়াও পুজোর অন্যান্য দিনগুলো বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ার পুজো মণ্ডপে হইহই করি। সন্ধে হলে নানা ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেগুলোতেও অংশ নিই। আর কয়েক দিনের অপেক্ষা। সবাই হইহই করব। অবশ্য ইতিমধ্যেই আমাদের গ্রামের পদ্ম, শিউলি আর কাশফুল বলে দিয়েছে পুজো এসে গিয়েছে।
—রিমঝিম বাগ, অষ্টম শ্রেণি
সংকলক: শম্পা সরকার