যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
এক-তে, দো-তে, ঢাউস ঘুড়িতে মন মাতোয়ারা। সেসব রংচঙে ঘুড়ির নামও ভারী সুন্দর। একরঙা ঘুড়ি উপরের ডান ও বাঁদিকে কিছুটা জায়গায় অন্য রঙের ছোঁয়া, এটির নাম ময়ুরপঙ্খী। ঘুড়িতে মাঝ বরাবর সোজা মোটা যে কাঠিটি থাকে, সেই অংশে কালো রং। বাকিটা লাল, হলুদ বা অন্য কোনও রং— এই জাতীয় ঘুড়ির নাম মোমবাতি। কোনওটার রং আবার সাদা। তার মধ্যিখানে গোল বলের মধ্যে অন্য রং, একে বলে বল ঘুড়ি। কেউ কেউ আবার এটিকেই চাঁদিয়াল বলে ডাকে।
কাগজের ঘুড়ির পাশাপাশি চাহিদা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান পেপারের ঘুড়িরও। এই ঘুড়ির সুবিধা হল, অল্পস্বল্প বৃষ্টিতে নষ্ট হয় না। চিল ঘুড়ি নিয়েও রয়েছে উন্মাদনা। এর সামনের দিকের অংশ অন্য ঘুড়ির তুলনায় বেশ খানিকটা চওড়া হয়। ফলে হাওয়া বেশি থাকলে এক-তের তুলনায় এতে অনেক বেশি টান অনুভব করা যায়। প্রতিপক্ষের ঘুড়ি কাটতেও বেশ খানিকটা সুবিধা পাওয়া যায় চিল ঘুড়িতে। এছাড়াও রয়েছে প্লাস্টিকের ঘুড়ি। এই ঘুড়ি ওঠার সময় ফ্যাস ফ্যাস একটা আওয়াজ হয়। সঙ্গে ঝোলে লম্বা একটা লেজ।
একটা সময় সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া ছিল বেশ বড় কাজ। এখন তো রেডিমেড মাঞ্জা সুতো চলে এসেছে। কিন্তু তখন নিজের হাতে মাঞ্জা না দিলে ঘুড়ির লড়াইয়ে কোনও সম্মান থাকত না। ছাদে বা বাড়ির উঠোনে দুই প্রান্তে দু’টি বাঁশের খুঁটি লাগানো, তাতে সুতো জড়ানো, হামানদিস্তায় কাচ মিহি করে গুঁড়ো মাঞ্জা আঠার সঙ্গে মেশানো— ঝক্কি কম!
ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথম চল হয়েছিল চীনে। কথিত আছে, সেদেশের এক কৃষক মাঠে চাষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। সেসময় প্রচণ্ড ঝড় ওঠে। বারবার তাঁর মাথায় থাকা টোকা উড়ে যেতে থাকে। অত বড় টোকাটাকে সামলাতে পারছিলেন না তিনি। শেষমেশ তিনি সেটাকে হাতের দড়িগাছা দিয়ে বাঁধলেন। ঠিক তখনই দমকা হাওয়া এসে টোকাটাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। টোকাটি উড়তে থাকে আকাশে। এদিকে সেটায় বাঁধা দড়ি ছিল কৃষকের হাতে। আকাশে সেটি উড়তে দেখে ভারী মজা পান তিনি। একটু একটু করে দড়ি ছাড়তে থাকেন। সেটিও বাইবাই করে উড়তে থাকে। এটাই নাকি পৃথিবীর প্রথম ঘুড়ি ওড়ানো!
তবে, প্রথমদিকে কিন্তু ঘুড়ি ওড়ানো বিনোদনের অংশ ছিল না। দূরত্ব মাপার জন্য, সংবাদ প্রেরণের জন্য বা যুদ্ধে সাংকেতিক বার্তা পাঠানোর জন্যই মূলত ঘুড়ি ব্যবহার করা হতো। পরে অবশ্য ঘুড়ি বিনোদনের মাধ্যম হয়ে ওঠে। চীন থেকে তা ভারত, কোরিয়া, কম্বোডিয়া-সহ এশিয়ার একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বকর্মা পুজোয় পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ত্রিপুরাতেও ঘুড়ি ওড়ানো হয়। যদিও আমাদের রাজ্যে কোনও কোনও জায়গায় বিশ্বকর্মা পুজো ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানেও ঘুড়ি ওড়ে। এ রাজ্যে প্রথমদিকে ঘুড়ি ওড়ানো উচ্চবিত্তদের কাছে বিনোদনের বিষয় ছিল। সেযুগে ঘুড়িতে টাকা বেঁধে ওড়ানোর গল্পও শোনা যায়। পরে অবশ্য সমাজের সকল শ্রেণির মানুষই এই ঘুড়ির আনন্দে মেতে ওঠে। সময়ের ফেরে এখন অবশ্য ঘুড়ি ওড়ানোর চল অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন অধিকাংশ বাড়ি থেকেই আর শোনা যায় না ভো-কাট্টা আওয়াজ। অন্যের ঘুড়ি কেটে কেউ আবার বাজায় না কাঁসর-ঘণ্টাও। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘুড়ির আনন্দ আজও অমলিন। তোমাদের কার কার বাড়িতে কী কী ঘুড়ি আছে?