যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
পুজোর সময় চাউমিন, রোল, বিরিয়ানি, কষা মাংসের পাশাপাশি ফুচকা, আলু কাবলি, চাট, রঙিন শরবত, কোল্ড ড্রিঙ্ক আর আইসক্রিমের অপূর্ব সহাবস্থান। গন্ধে, বর্ণে আর স্বাদে যা আমাদের জিভের টেস্ট বাডগুলোকে সহজেই সক্রিয় করে তোলে। কিন্তু এগুলো জিভের পক্ষে যতটা রোমান্টিক, পেটের পক্ষে কিন্তু ততটাই প্যাথেটিক।
শুধু পুজোপার্বণে নয়, আজকাল অনেক মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারে ব্রেকফাস্ট এবং বিকেলের টিফিনে চাউমিন স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। নুডুলস তৈরি হয় ময়দা থেকে। আটার মতো ময়দাও তৈরি হয় গম থেকে। কিন্তু এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম-সহ নানা উপাদান আটার চেয়ে কম থাকে। সেজন্য ময়দা দিয়ে তৈরি চাউমিন, রুমালি রুটি বা লুচি দীর্ঘদিন খেলে সায়াটিকা-সহ নানা ধরনের স্নায়ু রোগ, অ্যানিমিয়া, মাড়ি থেকে রক্তপাত-সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া ফাইন আটা বা ময়দা এবং সুপার ফাইন চালের ফ্রাইড রাইস বা বিরিয়ানি— দীর্ঘদিন খাওয়া পেটের পক্ষে ভালো নয়। বেশি ফাইন করতে গিয়ে গম বা চাল থেকে ভিটামিন বি টু, লোহা, ফসফরাস, ক্যালশিয়াম, প্রোটিন-সহ নানা খাদ্য উপাদানের অন্তত ৪০ শতাংশ বের হয়ে যায়। তাছাড়া এসব ফাস্ট ফুডে কোনও ফাইবার বা আঁশ জাতীয় রাফেজ থাকে না। সেজন্য নিয়মিত মোটা চালের ভাত, অল্প ভুসিযুক্ত আটা, খোসা সুদ্ধ ফল এবং শাকসব্জি খাওয়া উচিত।
চাউমিন বা রোলে যে সস বা মশলা দেওয়া হয়, সেটা শরীরের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। সসে যে আজিনামোটো বা উমামি মেশানো থাকে, সেটা আসলে মোনো সোডিয়াম গ্লুটামেট নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। যা বেশি পরিমাণ রক্তে মিশলে মাথা ধরা, শরীরে অস্বস্তি ভাব, বুকে চাপ ধরা, দেহে জ্বালা-সহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একে বলে ‘চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’। তাছাড়া পুজোর সময় এত অস্বাস্থ্যকর ভাবে এগুলো প্রস্তুত করা হয় যে, নানা ধরনের জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকেই যায়। জিয়ারডিয়া, আমাশা, টাইফয়েড, কৃমি-সহ নানারকম রোগ বয়ে নিয়ে আসতে পারে এইসব চটজলদি খাবার।
পুজো পার্বণে মিষ্টিমুখ না করলে এবং করালে চলে না। এ সময় মিষ্টির দোকানে হরেক রকম রঙিন মিষ্টির ছড়াছড়ি। লাড্ডু, বোঁদে, জিলাপি, অমৃতি, কমলা ভোগ— সবেতেই হরেক রকমের রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হলুদ রঙের জন্য মেটানিল ইয়েলো বা কেশরি রং, লাল রঙের জন্য কঙ্গো রেড এবং রোডামিন বি, নীল রঙের জন্য ব্রিলিয়ান্ট ব্লু, সবুজ রঙের জন্য ডায়মন্ড গ্রিনসহ নানা ধরনের নিষিদ্ধ রং আকছার মেশানো হয় মিষ্টিতে। যেগুলো শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।
পুজোর বাজারে তেলেভাজা, চপ কাটলেট— এগুলোও কিন্তু পুরোপুরি নিরাপদ নয়। ভেজাল তেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো ভাজা হয়। ঝাঁঝ আনার জন্য মেশানো হয় অ্যালাইল থায়োসায়ানেট নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ, যার থেকে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি হয়। একই তেলে বারে বারে ভাজা হয় চপ, কাটলেট, বেগুনি। এর ফলে বেনজপাইরিন কম্পাউন্ড নামক একটি বিষ তৈরি হয়।
ঠান্ডা পানীয় ছাড়া পুজো কেন, যে কোনও অনুষ্ঠানই বেশ পানসে লাগে। কী থাকে এতে? ৯৫ শতাংশই হল জল, ৪ শতাংশ চিনি বা অন্য কোনও মিষ্টি। এছাড়া সাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সোডিয়াম বা পটাশিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি। থাকে সুগন্ধি ও রং। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পচন রোধক প্যারাবেন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়, এরপর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস মিশিয়ে সিল করা হয়। কোল্ড ড্রিঙ্ক বেশি খেলে নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়।
বুঝতে পারছি ইন্দ্রজা, এসব পড়ে তুমি মোটেও খুশি হচ্ছ না। কিন্তু যদি পুজোটা আনন্দে কাটাতে চাও, সুস্থ থাকতে চাও, তাহলে কিন্তু ফাস্টফুডের ব্যাপারে তোমাকে সতর্ক হতেই হবে। পুজো মানে বন্ধনহীন আনন্দ, বেহিসেবি হয়ে ওঠা, ইচ্ছে ডানায় ভেসে কয়েকটা দিন নিজের মতো করে বাঁচা। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, দেদার সুখ আর হরেক মজার মধ্যেও বিপদ যে কোথায় ওঁত পেতে থাকে, কেউ জানে না!