সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
এর মধ্যে ইস্কুলে একদিন একটা কাণ্ড ঘটল। ওয়াটার বটল থেকে জল খেতে গিয়ে অর্চির একদিন বিষম লেগে গেল। খক খক কী কাশি। ছুটে এল পিয়ালী ম্যাম, অর্চির পিঠ ডলে দিল, চোখে মুখে ফুঁ দিয়ে দিল, অর্চিকে চেপে ধরল নিজের পেটের মধ্যে। তাই দেখে ভুটুরও খুব ইচ্ছে হল পিয়ালী ম্যামের কাছে আদর খেতে, সেও মুখে হাত দিয়ে কাশতে লাগল, খক খক। তাতে পিয়ালী ম্যাম রেগে আগুন, বলল দেবাদিত্য তুমি বন্ধুকে ভেঙাচ্ছ! হ্যাঁ বন্ধুকে ভেঙাচ্ছ? বলে কান টেনে ধরল। সরি বলো, সরি বলো।
ভুটুর কানে বেশি লাগেনি কিন্তু মনে লাগল অনেক বেশি। ম্যাম ক্লাস থেকে চলে যেতেই সে ডেস্কে মাথা লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। এমন কী ফেরার সময় বাসে বসেও সে ফোঁপাতে লাগল আর বাড়ি এসে তো সে হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদতে লাগল।
মা বলল ভুটু ম্যামরা ওরকম একটু বকেই থাকে, তার জন্য তোর অত কান্নার কী হল! তোর যদি কানে অনেক ব্যথা লাগত তাহলে না হয় আমি স্কুলে গিয়ে কিছু একটা বলতাম। এই তো বলছিস কানে ব্যথা লাগেনি। ভুটু মাকে কী করে বোঝায় ক্লাস টুয়ে পড়ে বলে কি তার মনে ব্যথা লাগে না? সে রাতে ভালো করে খেলই না, তারপর কাঁদতে কাঁদতেই পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল।
কিন্তু মাঝরাত হতেই তার ঘুমটা ভেঙে গেল। দেখল তার গায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে মস্ত একটা দৈত্য। ইয়া বড় চেহারা, কুচকুচে কালো রং, গায়ে বড় বড় আঁচিল। সে ভয় পেয়ে চেঁচাতে যাবে এমন সময় দৈত্যটা তার মুখ চেপে ধরল, বলল ভয় পেও না ভয় পেও না তোমায় আমি মারব না, বলে সে এক হাত দিয়ে তার মাথার চুলটা ঘেঁটে দিল। খুব ভালো লাগল ভুটুর। বলল, তোমার নাম কী?
দৈত্যটা বলল, আমার নাম আগলি।
ভুটু বলল, কেন আগলি কেন? তুমি তো খুব ভালো।
দৈত্যটা বলল, আমি ভালো কি খারাপ বোঝার আগেই আমার অমন একটা বিচ্ছিরি নাম দিয়ে দিয়েছে সবাই। তুমি আমায় অন্য কোনও নামেও ডাকতে পারো। কিন্তু আমি তোমাকে একটা খবর দিতে এসেছি।
কী খবর?
খবরটা হল তোমার ম্যাম তোমাকে আজ কষ্ট দিয়েছে তো, তাই কাল থেকে তোমাদের স্কুলটাই আমি বন্ধ করে দেব।
কিন্তু তুমি কি করে পারবে, সে তো হেড ম্যামের ব্যাপার।
দৈত্যটা হেসে বলল, দেখোই না বলে, সে ভুস করে ভ্যানিস হয়ে গেল।
ভুটু চেঁচিয়ে বলল, আমি তোমাকে একটা নতুন নাম দিলাম, মিঠাই।
পরদিন স্কুলে যাবার জন্য সে ঝটপট তৈরি হয়ে নিল। উত্তেজনায় তার বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে কাঁপছে। মিঠাইয়ের কথাটা কি সত্যি হবে? কিন্তু সে কাউকে কিছু বলছে না, বলে দিলে যদি তার কথা কেউ বিশ্বাস না করে। রোজকার মতো স্কুল শুরু হল, ক্লাস বসে গেল। পিয়ালী ম্যাম ঢুকলেন ঘরে। রোল কল করলেন, বললেন, শোন আমার প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা আমাদের চারপাশে অনেক দৈত্য দানো আছে যাদের আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না যেমন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া। এরা আমাদের সব সাংঘাতিক সাংঘাতিক অসুখ করায়, মানুষ মরে পর্যন্ত যায়। আবার ভালো দৈত্যও আছে। তোমরা বড় হলে বিজ্ঞান বইয়ে এদের সব কথা পড়বে। তো এই রকম একটা দুষ্ট দৈত্য হঠাৎ করে আমাদের চারপাশে বেড়ে গেছে, ফলে মানুষের জ্বর কাশি মাথাব্যথা এসব হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, অনেক সময় মানুষ মরেও যাচ্ছে। তাই এখন আমাদের কিছু দিন ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হবে। ঘন ঘন হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে, নাকে মুখে হাত দেওয়া চলবে না। তাহলে কী বুঝলে বাচ্চারা, আজ থেকে তোমাদের ছুটি।
হঠাৎ হাত উঠিয়ে ভুটু বলে উঠল, আমি জানতাম। কৌতুক ভরা চোখে পিয়ালী ম্যাম ভুটুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি জানতে? তাই বুঝি? কী করে? সারা দেশের লোক তো এই মাত্র জানল টিভিতে।
এই রে! নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরল ভুটু, কাউকে বলা তো যাবে না মিঠাইয়ের কথা। সে বলল এমনি, মনে হল।
পিয়ালী ম্যাম বলল, বেশ তবে বলো তো দেবাদিত্য কবে আমাদের স্কুল খুলবে? এখন কিন্তু আমরা সেটা কেউ জানি না।
ভুটু বলল, বলব কিন্তু আমি মুখে বলব না, স্কুল ছুটি হবার সময় আমি তোমাকে একটা চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়ে যাব।
এইবার পিয়ালী ম্যাম ভুটুর দিকে তাকিয়ে এক মুখ হাসল, বলল চিঠি লিখে ! ঠিক আছে, তাই হবে।
ভুটুর খুব ভালো লাগল।
ক্র্যাফট ক্লাসের জন্য তাদের ব্যাগে তো কাঁচি আঠা এইসব থাকেই। পিয়ালী ম্যাম ক্লাস থেকে চলে যেতেই ভুটু বার করল সেসব। তারপর কাগজ কেটে বানাল একটা খাম আর লুকিয়ে লুকিয়ে এক লাইনে একটা চিঠি লিখে খামের মধ্যে পুরে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিল খামের মুখটা। স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজতেই সে দৌড়ে চলে গেল পিয়ালী ম্যামের কাছে তারপর তার হাতে ধরিয়ে দিল চিঠিটা। ম্যাম তখন হন্তদন্ত হয়ে ট্রেন ধবার তাড়ায় বেরচ্ছিলেন, মিষ্টি হেসে চিঠিটা ঢুকিয়ে নিলেন ব্যাগের মধ্যে।
ভুটু কিন্তু তার উত্তেজনার কথা মাকেও জানাল না। তার মনে হতে লাগল মিঠাই যদি আসে সে মিঠাইকেই জানাবে। মিঠাই কিন্তু আর কোনও দিনই এল না। এদিকে স্কুল খুলবার আর নামই নেই। শুরু হল অনলাইন ক্লাস। ল্যাপটপের সামনে হুমড়ি খেয়ে বসে ভুটু। রোজই হাই স্টুডেন্ট বলে পিয়ালী ম্যাম বকবক শুরু করে। কিন্তু ভুটুর চিঠির কথা তো আর বলেই না। তবে কি ম্যাম ভুটুর চিঠিটা দেখেইনি!
এদিকে হাঁপিয়ে উঠেছে ভুটু। এবার স্কুলটা খুলে গেলেই সে বাঁচে। ল্যাপটপে পড়তে পড়তে তার চোখ ব্যথা হয়ে গেল। মিঠাই এলে সে মিঠাইকে বলত স্কুলটা খুলে দেবার কথা কিন্তু তারও তো দেখা নেই। এমনি সময় একদিন ল্যাপটপ খুলতেই পিয়ালী ম্যাম বলল হাই স্টুডেন্ট আজ তোমাদের আমি একটা দারুণ জিনিস দেখাব বলে স্ক্রিনের ওপর মেলে ধরল ভুটুর চিঠিটা, তুমি যেদিন আমাকে চুমু খাবে স্কুল খুলবে সেইদিনই। পিয়ালী ম্যাম বলল, সরি দেবাদিত্য দেরি করে তোমার চিঠিটা দেখার জন্য আমি খুব দুঃখিত। স্কুল বন্ধ থেকে আমি স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাগটায় হাতই দিইনি। তাই ওটার মধ্যে এতদিন থেকে গিয়েছিল চিঠিটা। তোমাকে অনেক চুমু, অনেক অনেক। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই দিনই বিকেলে টিভিতে জানিয়ে দেওয়া হল আর এক সপ্তাহের মধ্যেই সব স্কুল খুলে যাবে তাই স্কুলগুলো জীবাণু মুক্ত করার কাজ শুরু হবে কাল থেকেই।
স্কুল খোলার আগের দিন ভুটুর উত্তেজনায় ভালো করে ঘুমই এল না রাতে। স্কুল খুলতেই এক অবাক কাণ্ড ঘটল, শুধু পিয়ালী ম্যামই না, সব ম্যাম এসে একবার করে তাকে চুমু খেতে লাগল, তার এত আনন্দ লাগছিল আবার কেমন যেন কান্নাও পাচ্ছিল। আনন্দেও কি তবে কান্না পায়! এই কথাটা তো জানত না দেবাদিত্য ওরফে ভুটু। সে সুযোগ পেয়ে ছুটে গিয়ে অর্চির গালেও একটা চুমু খেয়ে নিল।
অলঙ্করণ : সুব্রত মাজী