সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
পৃথিবীর বাইরেও বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখে মানুষ। নীল গ্রহের গণ্ডি পেরিয়ে কোথাও কোনও অজানা-অচেনা জায়গায় হয়তো কোনও একদিন গড়ে উঠবে নতুন জনপদ, চলবে ট্রেন, উড়বে বিমান। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার তাগিদ নিয়েই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা। প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে চলছে খোঁজ। মূলত, জীবনধারণের জন্য আবশ্যিক দু’টি উপাদান জল এবং অক্সিজেনের অনুসন্ধান চলছে। সেই দুইয়ের দেখা মিললেই বলা যাবে ‘ইউরেকা’! এমনকী সেখানে মিলতে পারে প্রাণেরও খোঁজ। আজ এমনই এক আশার খবর দেব বন্ধুরা। আর সেই খবরের কেন্দ্রভূমিও বেশি দূরের নয়। পৃথিবী থেকে মাত্র তিন লক্ষ চুরাশি হাজার চারশো কিমি দূরের চাঁদ থেকেই এই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তাহলে শোনো বন্ধুরা, রাতের আকাশ আলোকিত করা পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহতে মিলেছে জলের অস্তিত্ব! আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা’র (ন্যাশনাল এরোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) তরফে এমন যুগান্তকারী তথ্য জানানো হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে স্ট্রাটোস্ফিয়ারিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি (সোফিয়া) একদম নিশ্চিত করে জানিয়েছে, চাঁদের যেই অংশে সূর্যের আলো পড়ে সেই অংশেই রয়েছে জল। প্রশ্ন হল সোফিয়া কী বা কে? সেই প্রশ্নের উত্তর পরে দেওয়া হয়েছে।
মোদ্দা বিষয়টা হল, তোমরা সবাই নিশ্চয়ই জানো, চাঁদের গায়ে অনেক বড় বড় গহ্বর রয়েছে। এই গহ্বরগুলিকেই পৃথিবী থেকে কালো ছোপের মতো দেখায়। সুন্দরী চাঁদের মুখে কলঙ্কের দাগ তৈরি করে এই গহ্বরগুলি। পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান এমনই সব বৃহদাকার গহ্বরগুলির মধ্যে একটি হল ক্লেভিয়াস ক্রেটার। নাসার সোফিয়া, এই ক্লেভিয়াস ক্রেটারের মধ্যেই জলের সন্ধান পেয়েছে।
একনজরে সোফিয়া
আগেই বলেছি, এই আবিষ্কারটি করেছে স্ট্রাটোস্ফিয়ারিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি (সোফিয়া)। সোফিয়া আসলে একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান। নাসা এবং জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের যৌথ সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে এই বিশেষভাবে তৈরি পর্যবেক্ষণকারী বিমান। এই বিমানটি পৃথিবীর স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ওপরে গিয়ে মূলত ইনফ্রারেড রশ্মির দ্বারা চাঁদের পৃষ্ঠদেশ পরীক্ষা করেছে। তবে শুধুমাত্র চাঁদ নয়, ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে মহাজাগতিক অন্য সব বস্তু যেমন— তারাদের জন্মস্থান, ধূমকেতু, বিরাট বিরাট গ্যাসীয় মেঘকেও সোফিয়া পর্যবেক্ষণ করে। ২০১০ সাল থেকে সোফিয়া নিজের কাজ করে চলেছে। কর্মজীবনের দীর্ঘ দশ বছরের মাথায় এসে সোফিয়া চাঁদ সম্পর্কে এমন বিস্ময়কর তথ্য দিল।
এই প্রথম নয়
১৯৭৮ সাল থেকেই বিজ্ঞানীরা জানতেন চাঁদের পৃষ্ঠদেশে জল বা হাইড্রক্সিল আয়নের উপস্থিতির কথা। পরবর্তীকালে ভারতের চন্দ্রযান ১ চাঁদের পৃষ্ঠতলে জলের উপস্থিতি নিয়ে অনেক জরুরি তথ্য দেয়। চন্দ্রযান ১ আমাদের জানায়, চাঁদের উত্তর মেরুর কাছাকাছি প্রায় ৬০ হাজার কোটি লিটার জলীয় বরফের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া নাসার বিভিন্ন চন্দ্র অভিযানে জানা গিয়েছিল, চাঁদের বড় বড় সব গহ্বরের তলদেশে সূর্যের আলো পৌঁছয় না। সেই তলদেশে প্রভূত পরিমাণ জলীয় বরফের উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারের আবিষ্কার অনন্য
চাঁদে জলের উপস্থিতি সম্বন্ধে আগে বহু তথ্য পাওয়া গেলেও এবারের আবিষ্কারকে যুগান্তকারী হিসেবেই দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া গেল, চাঁদের সূর্যালোকিত পৃষ্ঠেও রয়েছে জল। আর সেখানে উপস্থিত জলের পরিমাণও মোটেই কম নয়। বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে অনুমান করেছেন, এখানকার এক কিউবিক মিটার মাটি থেকে ৩৫০ মিলি লিটার জল পাওয়া যেতে পারে।
আগামীর সম্ভাবনা
চাঁদের পৃষ্ঠদেশে নিশ্চিতভাবে জলের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা ভীষণভাবে উৎসাহিত। আগামীদিনে চাঁদের মাটিতে মনুষ্য সভ্যতা স্থাপনে জলের উপস্থিতি বিশেষভাবে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে জল বা জলীয় বরফ মানুষের তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি আরও জীবনদায়ী কাজে ব্যবহৃত হবে। এই জল থেকে অক্সিজেন তৈরি করাও যেতে পারে। ফলে চাঁদের মাটিতে শ্বাস নেওয়ার সমস্যাও দূর করা সম্ভব। তাহলে জীবনধারণের মূল দু’টি উপাদানের বন্দোবস্তই করা হয়ে গেল। এছাড়া বিশেষ উপায়ে জলকে বিভাজিত করে হাইড্রোজেন তৈরি করাও যেতে পারে। হাইড্রোজেন কাজে লাগবে জ্বালানি হিসেবে। সেই জ্বালানি ব্যবহার করে চাঁদ থেকেও রকেট ওড়ানোও সম্ভব হবে। তৈরি হতে পারে পৃথিবীর বাইরে চাঁদে প্রথম মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। তাই সবমিলিয়ে চাঁদের বুকে বসতি স্থাপনের লক্ষ্যে এই আবিষ্কার মানবজাতিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিল।
সায়ন নস্কর ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থা