সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
গাড়িটা এসে থামল প্যান্ডেলের ঠিক সামনে। প্রথমে গাড়ির ড্রাইভারের আসন থেকে নামলেন ধুতি-পাঞ্জাবি পরা মাঝবয়সি একজন লোক। পুজো কমিটির সভাপতি ভূপতিবাবু তাঁর দিকে এগিয়ে যেতেই লোকটা তাকে নমস্কার করে বলল, ‘আমি ‘জীবন্ত দুর্গা’ কোম্পানির মালিক কাশীনাথ সরখেল। আর চিন্তা নেই, আমরা এসে গিয়েছি।’
ম্যাটাডোরের পিছনের ডালাটা এরপর খুলে দেওয়া হল। কাঠের একটা পাটাতন বিছিয়ে দেওয়া হল গাড়ি থেকে মাটি পর্যন্ত। সেই পাটাতন বেয়ে গাড়ি থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে প্রথমে নীচে নামল বেশ সুন্দর দেখতে এক মহিলা। অমনি অনেকে চিৎকার করে উঠল – দুর্গা! দু্র্গা!’ বলে। সে মহিলার পর নিজেদের জিনিস নিয়ে নামল দুর্গার চেয়ে অল্পবয়সি দুটো মেয়ে – লক্ষ্মী, সরস্বতী। তারপর নামল টেরিকাটা একটা ছেলে, ভুঁড়িওয়ালা একটা ছেলেকে সঙ্গী করে। তাদের দেখেই বোঝা গেল তারা নিশ্চয়ই কার্তিক-গণেশ। সবার শেষে গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামল মিশমিশে কালো চেহারার একটা লোক। তাকে দেখে নীল অনুমান করল এ লোকটা নিশ্চয়ই মহিষাসুর হবে।
ভূপতিবাবুর নেতৃত্বে কর্মকর্তারা পুরো দলটাকে নিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করল। মাটির তৈরি দুর্গামূর্তি পুজো করার জন্য যেখানে রাখা তার অন্য পাশে একটা পর্দাওয়ালা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেই মঞ্চে ম্যাটাডোরে আসা পুরুষ-নারীরা উঠে পড়ল। মঞ্চর ঠিক মাঝখানে সুন্দরী মহিলা প্রথমে দাঁড়িয়ে পড়ল ত্রিশূল ধরার ভঙ্গিতে। অন্য ছেলেমেয়েগুলো তার দু-পাশে নিজস্ব ভঙ্গিমাতে দাঁড়াল কার্তিক-গণেশ-লক্ষ্মী-সরস্বতী যেমন দাঁড়ায় তেমনই। সব শেষে সেই সুন্দরী মহিলার পদতলে খাঁড়া উঁচিয়ে বসার ভঙ্গিতে বসল সেই কালো লোকটা মহিষাসুর।
কাশীনাথ সরখেল, ভূপতিবাবুকে বলল, ‘নিন, এবার পরীক্ষা করুন—।’
মঞ্চে এরপর উঠে পড়ল বেশ কয়েকজন ছেলে। তারা কেউ দুর্গা, লক্ষ্মী বা সরস্বতীদের চোখের সামনে হাত নাড়ল, কেউ গণেশকে কাতুকুতু দেবার ভয় দেখল, আর একজন তো একটা বাঁশের টুকরো দিয়ে মহিষাসুরের মাথাতেই মারতে যাচ্ছিল, যা দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল নীলু। কিন্তু মঞ্চে যারা দেব-দেবী-অসুর সেজে রয়েছে তাদের কারও চোখের পাতা পড়ল না। বিশেষত মাথার ওপর বাঁশ নেমে আসার সময়ও অসুর সাজা লোকটাকে নীলুর মনে হল সে যেন একটা পাথরের মূর্তি!
জীবন্ত দুর্গাদের পরীক্ষা পর্ব শেষ হলে কাশীনাথ সরখেল আত্মপ্রসাদের হাসি হেসে বলল, ‘আপনারা দেখবেন আশপাশের যত গ্রাম আছে তাদের টেক্কা দেবে আপনাদের পুজো। লোক ভেঙে পড়বে জীবন্ত দুর্গা দেখার জন্য। সপ্তমী আর নবমীর রাতে ছ’টা থেকে দশটা ওরা সেজেগুজে মঞ্চে থাকবে। আর অষ্টমীতে বেলা দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত মাঝে বিশ্রামের জন্য দুপুর দুটো থেকে বেলা চারটে, —এই সময় বাদ দিয়ে। এবার আপনারা এদের রাতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করুন, আমি এবার ফিরব।’
লোকটার কথা শুনে ভুপতিবাবু বললেন, ‘মা দুর্গা, লক্ষ্মী-সরস্বতী, তিনজন আমার বাড়িতেই থাকবে, খাবে, আপনার চিন্তা নেই।’
তেলকলের মালিক গণেশ দলুই বলল, ‘গণেশ কিন্তু আমার বাড়িতেই থাকবে।’
কার্তিক সাজা ছেলেটা কার বাড়িতে থাকবে তা নিয়ে আর একটু হলেই হাতাহাতি হচ্ছিল দুই দাবিদারের মধ্যে! শেষে এরপর মহিষাসুরকে রাখার পালা। কাশীনাথ সরখেল বলল, ‘মহিষাসুরকে কে নেবেন?’
কিন্তু এবার সবাই চুপ হয়ে গেল। মহিষাসুর সাজা লোকটা মঞ্চ থেকে নেমে পড়ে কাশীনাথের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সবাইকে নিশ্চুপ দেখে সে একটু অসহায়ভাবে তাকাতে লাগল চারপাশে। কিন্তু মহিষাসুরকে আর কেই বা বাড়িতে রাখতে চায়? অসুর শব্দর সঙ্গেই যে অশুভ ব্যাপার জড়িয়ে থাকে। সত্যিকারের অসুর না হলেও তো অসুর সাজে লোকটা! কাজেই তার দায়িত্ব নিতে চাইল না কেউ। অগত্যা ভূপতিবাবু লোকটাকে বলল, ‘তুমি বরং স্টেজের পিছনে তোমাদের যে সাজঘর বানানো হয়েছে সেখানেই রাত কাটিও। আমরা তোমার খাবারের ব্যবস্থা করব।’ উপায়ান্তর না দেখে ঘাড় নাড়ল মহিষাসুর। নীলুর কষ্ট হল তাকে দেখে। মনে হল লোকটাকে যদি সে বাড়ি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু নীলুর বাবা শহরে গিয়েছেন, সপ্তমীর রাতে ফিরবেন। তাই নীলুর কিছু করার নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্গা-লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশকে নিয়ে হই হই করতে করতে যে যার বাড়ির দিকে পা বাড়াল গ্রামের লোকেরা। প্যান্ডেলে একলা পড়ে রইল শুধু মহিষাসুর।
২
আজ মহাসপ্তমী। এ দিন ঢাকের শব্দে নীলুর ঘুম ভাঙল। এ গ্রামে মাত্র মাস তিনেক এসেছে নীলুরা। এখানকার সরকারি কৃষি দপ্তরের একটা অফিসে নীলুর বাবা কাজ করেন। ঘুম ভাঙার পর নীলু জানলা দিয়ে দেখতে পেল ছেলেরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। নীলু স্কুলে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনও কোনও বন্ধু হয়নি। প্যান্ডেলটা তার বাড়ির থেকে বেশি দূরে নয়। ঘুম ভাঙার পর হাত-মুখ ধুয়ে কোনওরকমে টিফিন সেরেই সে রাস্তায় নেমে পড়ল। কিন্তু প্যান্ডেলের পথে এগতে যেতেই সে একদল ছেলের চিৎকার শুনতে পেল-‘মহিষাসুর! মহিষাসুর!’। আর এরপরই সে দেখতে পেল একটা কালো লোক ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে পুজো প্যান্ডেলের দিকে। আর তার পিছনে উল্লাসে চিৎকার করতে করতে ছুটছে একদল ছেলে! নীলু দেখল একটা ছেলে গুলতি ছুঁড়ল তাকে লক্ষ্য করে। মাথা চেপে বসে পড়ল লোকটা, তারপর আবার ছুটল প্যান্ডেলের দিকে। তাই দেখে ছেলের দল আনন্দে চিৎকার করে উঠল – ‘মহিষাসুর বধ! মহিষাসুর বধ!’ এরপর অবশ্য সেই ছেলের দল আর এগল না। মহিষাসুরও অদৃশ্য হয়ে গেল প্যান্ডেলের দিকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলু প্যান্ডেলে পৌঁছে গেল। ঢাক বাজছে। পুরোহিতমশাই পুজো শুরু করেছেন, কিছু লোকজনও আছে। কিন্তু সেই মহিষাসুর কই? দেবীমূর্তিকে প্রণাম করার পর প্যান্ডেলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত প্যান্ডেলের পিছনের পুকুর ধারে নীলু তাকে দেখতে পেল। নীলুকে দেখে বসে থাকা লোকটার চোখে যেন ভয় ফুটে উঠল। ব্যাপারটা অনুমান করে নীলু বলল, ‘আমি ওই ছেলেদের দলে ছিলাম না। আমি তোমাকে মারিনি।’
কথাটা শুনে আশ্বস্ত হয়ে মহিষাসুর নিজের কপালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, ‘আর একটু হলেই কপালটা ফাটছিল! সকালে উঠে গ্রাম দেখতে বেরিয়েছিলাম, ওরা আমাকে তাড়া করল।’
নীলু একটু চুপ করে থেকে জানতে চাইল – ‘তোমার খুব লেগেছে?’
মহিষাসুর বলল, ‘তা একটু লেগেছে। তার ওপর আবার সারারাত মশার কামড় খেয়েছি। আমি তো অপয়া মহিষাসুর, তাই আমাকে কেউ বাড়ি নিয়ে গেল না।’ —কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লোকটা।
নীলুর বেশ কষ্ট হল তার কথা শুনে। সে বলল, ‘তুমি তো মহিষাসুর, মা দুর্গা ছাড়া কেউ তোমাকে হারাতে পারে না। তুমি ছেলেগুলোকে মারলে না কেন?’
মহিষাসুর এবার হেসে বলল, ‘তা কি হয়? ছোট ছেলেদের আমি কীভাবে মারি? তাছাড়া কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে মালিক আমাকে তাড়িয়ে দেবে। তখন আমি খাব কী?’
নীলু আবার প্রশ্ন করল, ‘তুমি মহিষাসুর সাজো কেন? অন্য কিছু সাজতে পারো না?’
লোকটা এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি তো দেখতে খারাপ তাই আমি কখনও দুর্গাপুজোতে অসুর, মেলাতে জাম্বুবান বা ভূত-প্রেতের স্ট্যাচু থাকি। আমাকে কে আর ঠাকুর দেবতা সাজতে দেবে বল? তবে সন্ধ্যাবেলা এসে দেখো আমি কেমন পাথরের মূর্তির মতো থাকি। দুর্গার চোখের পাতা নড়লেও আমার নড়বে না।’ —কথাগুলো বলে লোকটা উঠে চলে গেল।
সত্যিই সপ্তমীর সন্ধ্যাবেলাতে যখন দুর্গা তার দলবল নিয়ে মুকুট-অস্ত্রে সেজেগুজে মঞ্চে উঠল তখন অনেকেই খেয়াল করল কখনও কারও চোখের পাতা পড়লেও টিনের খাড়া হাতে মহিষাসুর যেন সত্যিই পাথরের মূর্তি। তার হাত, চোখের পাতা কিছুই যেন নড়ছে না। নীলু তাকিয়ে রইল। রাতে নীলু যখন বাড়ি ফিরল তখন বাবা ফিরেছেন। নীলু তাঁকে কথাটা বলতেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন। গরীব মানুষের সেবা বড় সেবা।
৩
আজ মহাষ্টমী। অঞ্জলি দেবার দিন। তাছাড়া মহিষাসুরকে বাড়িতে আনার ব্যাপারটা আছে। কাজেই নীলু ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নতুন জামা গায়ে বেলা ন’টা বাজতেই ছুটল প্যান্ডেলের দিকে। ইতিমধ্যেই ধীরে ধীরে প্যান্ডেলে লোক জমতে শুরু করেছে, কেউ অঞ্জলি দিতে, কেউ বা জীবন্ত দুর্গার দেখতে।
এ দিনও প্যান্ডেলের পিছনেই মহিষাসুরকে খুঁজে পেল নীলু। একলা বসে চায়ে হাতরুটি ডুবিয়ে খাচ্ছিল সে। নীলুকে দেখে সে বলল, ‘কী কাল কেমন দেখলে আমাকে?’ আমি কিন্তু একদম নড়িনি। দুর্গা, লক্ষ্মী, গণেশদের মুখে শুনলাম তারা কেমন লোকের বাড়ি মাংস-পায়েস খাচ্ছে! আর আমি পোড়া রুটি খাচ্ছি!’
নীলু কথাটা শুনে বলল, ‘তোমাকে আর রুটি খেতে হবে না। বাবা তোমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছেন। তুমি আমাদের বাড়ি থাকবে, খাবে। শো-শেষ হলে দুপুরে বাড়ি নিয়ে যাব। বাবা আজ খাসির মাংস আনবেন।’
নীলুর কথা শুনে বিস্মিত ভাবে মহিষাসুর তাকিয়ে রইল তার দিকে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সে নীলুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘সত্যি বলছ তুমি? মাংস-ভাতের দরকার নেই। দুটো ডাল-ভাত আর রাতে শুতে দিলেই চলবে।’
নীলু বলল, ‘হ্যাঁ, সত্যি বলছি। দুপুরে তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাব।’
মহিষাসুরের চোখ যেন এবার ছলছল করে উঠল। নীলুর মাথায় হাত বুলিয়ে সে এগল সাজঘরের দিকে। নীলু ফিরে এসে ঢুকল প্যান্ডেলের ভিতর। বেলা দশটা নাগাদ দুর্গার সঙ্গে সেজেগুজে মঞ্চে উঠে জীবন্ত মূর্তি হয়ে দাঁড়াল মহিষাসুরও। অঞ্জলিও শুরু হল, প্যান্ডেলে তখন লোক দাঁড়াবার জায়গা নেই।
প্রথমে অঞ্জলি পর্ব অনেক সময় ধরে চলল। নীলুও অঞ্জলি দিল। এক সময় বেলা একটা বাজতে চলল। বেলা একটা পর্যন্ত সে মহিষাসুরের জন্য প্যান্ডেলেই থাকবে। তারপর তাকে বাড়ি নিয়ে যাবে। প্যান্ডেলে নানা বয়সের লোকজন ঢুকছে জীবন্ত দুর্গা দেখার জন্য। এককোণে দাঁড়িয়ে তাদেরই দেখছিল নীলু। হঠাৎই কে যেন আতঙ্কিত ভাবে চিৎকার করে উঠল – সাপ! সাপ! বলে!
মুহূর্তের মধ্যে একটা হুলস্থুল কাণ্ড হল। প্যান্ডেলের বাইরে পালাতে শুরু করল লোকজন। জীবন্ত দুর্গা ত্রিশূল ফেলে ছুটল সাজ ঘরের দিকে, কার্তিক ধনুক ফেলে লাফ দিল মঞ্চ থেকে, ভয়ে কেঁদে উঠল লক্ষ্মী-সরস্বতী। নীলু এরপর দেখতে পেল সাপটাকে। মঞ্চের বিপরীতে যে মাটির মূর্তি আছে তার পাশে রাখা আছে পদ্মফুলের ঝুড়িটা। সে ঝুড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা চার-পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে। আর ঝুড়ির ভিতর থেকে বাচ্চাটার মাথার সমান ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে একটা পদ্ম গোখরো! যারা তখনও প্যান্ডেলে রয়েছে এ দৃশ্য দেখে তারা আতঙ্কে হতবাক। কেউ এগতে সাহস পাচ্ছে না সেদিকে, মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য। পদ্ম গোখরোর ছোবল মানেই নির্ঘাত মৃত্যু! কে আর নিজের প্রাণ খোয়াতে চায়?
কিন্তু এরপরই এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটল। হঠাৎই মঞ্চ থেকে লাফিয়ে নামল কালো মহিষাসুর। তারপর তির বেগে সে ছুটে গেল ঝুড়িটার দিকে। ঠিক যেই মুহূর্তে সাপটা মেয়েটাকে ছোবল দিতে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে তার কাছে পৌঁছে মহিষাসুর নিজের দেহ দিয়ে মেয়েটাকে আড়াল করে কোলে তুলে ছুটল প্যান্ডেলের অন্য দিকে। তা দেখে উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল সবাই। আর সেই চিৎকার শুনে সাপটাও সম্ভবত ভয় পেয়ে ঝুড়ি থেকে বেরিয়ে মুহূর্তের মধ্যে প্যান্ডেলের বাইরে পালিয়ে গেল।
মেয়েটাকে নিরাপদে মাটিতে নামিয়ে রাখতেই, আর সাপটা পালাতেই সবাই এসে ঘিরে ধরল মহিষাসুরকে। তাকে ঘিরে নাচানাচি শুরু হল। একজন লোক বলল, ‘মহিষাসুর তুমি আমার বাড়ি খাবে।’ আর একজন বলল, ‘না, তুমি আমার বাড়ি থাকবে, খাবে। তোমার জন্যই তো রক্ষা পেল মেয়েটা।’
কথাগুলো শুনে মহিষাসুর অদ্ভুতভাবে হেসে জবাব দিল— ‘না, আমি নই, মা-দুর্গাই রক্ষা করল মেয়েটাকে, অপয়া মহিষাসুর কি কাউকে রক্ষা করতে পারে?’
মহিষাসুরকে ঘিরে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল নীলুও। পাছে মহিষাসুরকে অন্য কেউ তার বাড়ি টেনে নিয়ে যায় সে ভয়ে নীলু তার উদ্দেশে বলল, ‘না, তুমি অন্য কারও বাড়ি যাবে না, আমার বাড়ি চলো।’
মহিষাসুর নীলুর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘গেলে তোমার বাড়ি যেতাম। কিন্তু এবার হবে না। সামনের বার সুন্দর দেবতা হয়ে এসে তোমার বাড়ি যাব।’
নীলু কথাটা শুনে অবাক হয়ে বলল, ‘কেন যাবে না? আমি তো তোমাকে আগে বলেছি।’
নীলুর প্রশ্ন শুনে হাসি ফুটে উঠল মহিষাসুরের মুখে। এক যন্ত্রণার হাসি। আর এরপরই মহিষাসুরের কালো শরীরটা মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেল।
ভূপতিবাবু তাকে তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করে বললেন, ‘বাচ্চাটাকে বাঁচাবার সময় গোখরো ওর পিঠে ছোবল দিয়েছে!’
নীলু কথাটা শুনেই চিৎকার করে কেঁদে উঠল – ‘মহিষাসুর তুমি আমার বাড়ি চলো!’