সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
ছোট্ট বন্ধুরা কেমন আছো বলো। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে যেসব ভালো ইংরেজি ছবির কথা বলছি তা ডাউনলোড করে দেখে নিও। আমাদের ছোটবেলায় নামকরা সিনেমা হলগুলোতে রবিবার মর্নিং শোতে ছোটদের উপযোগী সিনেমা দেখানো হতো। বাবার হাত ধরে সেসব সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বড় হয়েও ছোটদের জন্য তৈরি বেশ কিছু জনপ্রিয় ইংরেজি ছবি দেখেছি। আজ যখন ডাউনলোড করে সেসব ছবি দেখতে বসি, খেয়াল করেছি ভালোলাগাটা একই রকম আছে।
প্রথমেই বলি চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য কিড’ ছবিটির কথা। তিনি প্রধান চরিত্রের শিল্পী। সঙ্গে আছে চার বছরের বাচ্চা ছেলে জ্যাকি কুগান। যাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে মানুষ করেছিলেন চার্লি। কিন্তু অনাথ আশ্রম-এর লোকেরা এসে সেই জ্যাকিকে যখন উপযুক্তভাবে মানুষ করার জন্য ছিনিয়ে নিয়ে যায় তখন সেই কুগানকে ফেরত পাওয়ার জন্য চার্লির সংগ্রাম মন ভরিয়ে দেয়। চার্লির কাছ থেকে যে স্নেহ-ভালোবাসা কুগান পেয়েছে তার সুবাদে ছবির শেষ দৃশ্যে শিশুটি দুটি হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চার্লির কাছে যাবে বলে। ছবি নির্বাক হলে কী হবে, ছবির এই দৃশ্যটি তোমরা কোনও দিন ভুলতে পারবে না।
নির্বাক ছায়াছবির মধ্যে আরেকটি স্মরণীয় ছবি ‘বাইসাইকেল থিভস’। পরিচালক বিশ্ববন্দিত ভিক্টোরিয় ডি সিকা। ইতালিতে বসবাসকারী রিকি এক বেকার মানুষ। হঠাৎ একটা চাকরি পেয়ে গেল রিকি। রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার আটকাবার কাজ। ইতিমধ্যে তার সাইকেল চুরি হয়ে যায়। তখন তার ছোট ছেলেকে নিয়ে রোমের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে চুরি যাওয়া সাইকেলটির খোঁজ করে। অবশেষে শনাক্ত করতে পারে চোরকে। রিকি ও তার ছেলে কীভাবে সাইকেলটি ফেরত পেল তা নিয়েই এই ছবি। দুঃখে ভরা জীবন সংগ্রামের অশ্রুসজল দিনগুলি পরিচালক নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছিলেন ছবিতে।
‘টারজান দ্য এপ ম্যান’ টারজান সিরিজের প্রথম ছবি। গভীর অরণ্যে হিংস্র জন্তুর সঙ্গে মানুষ হওয়া মানবসন্তান টারজেন এই গল্পের মূল চরিত্র। জেন পার্কার নামে এক তরুণী আফ্রিকার জঙ্গলে হাতির দাঁতের ধন খুঁজতে বের হয়েছেন। সেখানে পার্কার আচমকা আবিষ্কার করলেন এক মানুষকে যে পশুদের মতো সাংকেতিক ভাষায় কথা বলে, মানুষের ভাষা বোঝে না। সেই মানুষের টানে আটকে গেলেন জেন পার্কার। নাম ভূমিকায় জনি ওয়াইমুলার। তাঁকে এত ভালো মানিয়েছিল যে মোট ১২টি ছবিতে তিনি টারজান সেজেছিলেন।
ছোটবেলায় খুব ভয় পেয়েছিলাম ‘কিংকং’ ছবিটি দেখে। কিংকং হল এক বিরাট বনমানুষ বা গরিলা। একটি ছবির আউটডোর শুটিং করতে গেছেন পরিচালকসহ শিল্পী কলাকুশলীরা স্কাল আইল্যান্ডে। এখানে সবাই আবিষ্কার করেন কিংকংকে। কিংকং ভালোবেসে ফেলে নায়িকা অ্যান ডারোকে। সেই কিংকংকে ফাঁদে ফেলে নিউইয়র্ক শহরে প্রদর্শনের জন্য নিয়ে আসা হয়। তারপর শুরু হয় ধুন্ধুমার সব কাণ্ড। এডগার ওয়ালেসের-এর লেখা এই গল্প ছবিতে জমে গেল দারুণভাবে।
তোমাদের জন্য এক অসাধারণ ছবি ‘টোয়েন্টি থাউজান্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’। ১৮৬৮ সালের ঘটনা। সমুদ্রের ভেতরে এক ভয়ানক রাক্ষস সবাইকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। এই রাক্ষসের কারণে অনেক জাহাজ ডুবে গিয়েছে। সেই রাক্ষসকে খুঁজে বের করতে তিন বন্ধু এক জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তারা দেখতে পায় রাক্ষস নয়, সমুদ্রের এই ভয়ানক দানব আসলে এক ডুবোজাহাজ। ডুবোজাহাজের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নিমো বন্দি করে এই তিন বন্ধুকে নিয়ে পাড়ি জমায় এক অ্যাডভেঞ্চারে। ডুবোজাহাজ তাদের নিয়ে যায় সমুদ্রের প্রায় কুড়ি হাজার লিগ (৮০ হাজার কিলোমিটার) নীচে। খুব ভালো লাগবে তোমাদের এই ছবি।
সিনেমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হল অস্কার পুরস্কার। সেই পুরস্কার ১১টি বিভাগে পেয়েছিল যে ছবি তার নাম ‘বেনহুর’। ইহুদি রাজপুত্র বেনহুর তাঁর রোমান বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় দাস হিসাবে বিক্রি হয়ে যান। কিন্তু একজন ভালো মানুষের সাহায্যে দাসত্ব থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পান বেনহুর এবং সেই রোমান বন্ধুর ওপর প্রতিশোধ নেন। ২২৪ মিনিটের দীর্ঘ এই ছবিতে নামভূমিকায় চমৎকার মানিয়েছিল চার্লটন হেস্টনকে। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দৃশ্য একবার দেখলে দীর্ঘদিন থেকে যাবে তোমাদের মনে।
৫টি বিভাগে অস্কার বিজয়ী ছবি ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’। তোমাদের ভালো লাগবেই। নানেদের কনভেন্টে মন বসে না প্রাণবন্ত মারিয়ার। অ্যাবের মাদার মারিয়াকে পাঠিয়ে দেন মধ্যবয়সি বিপত্নীক ভন ট্রাপের বাড়িতে সাত সাতটি ছেলে-মেয়ের গভর্নেস করে। বাচ্চারা নিত্যনতুন ফন্দি আঁটে মারিয়াকে বিদায় করার জন্য। শেষ পর্যন্ত নতুন নতুন খেলায় আর গানে গানে মারিয়া জয় করে নেন তাদের মন। জুলি অ্যান্ড্রুজ মারিয়ার চরিত্রে চমৎকার কাজ করেছিলেন। বাচ্চাগুলির তো তুলনাই নেই। ছবির গানগুলি আজও জনপ্রিয় হয়ে আছে।
রাদিয়ার্ড কিপলিংয়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ছবি ‘দ্য জঙ্গল বুক’। মোগলি মানুষ হয়েছে নেকড়েদের কাছে। মোগলি একটু বড় হয়ে উঠলে নেকড়েরা বোঝে যে তাকে মানুষদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়াই ভালো। বিশেষত হিংস্র শের খানের হাতে তার বিরাট বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভালুক বালু কিন্তু এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করে না। মোগলিও রুখে দাঁড়ায়। নেকড়ে ও ভালুক বন্ধুর সাহায্যে মোগলি জঙ্গলের স্বাধীনতা অর্জন করে। এই গল্প নিয়ে ১৯৬৭ সালে প্রথমবার ‘দ্য জঙ্গল বুক’ নির্মিত হয়েছিল। পরে এ ছবির রিমেকও হয়।
তোমাদের কাছে ডাইনোসর যে কী আকর্ষণীয় তা সবাই জানেন। পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবদের অন্যতম ডাইনোসরগুলি একটি থিম পার্কে বন্দিদশায় ছিল। বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে থিম পার্কে ডাইনোসরগুলো ছাড়া পেয়ে কী কী কাণ্ড ঘটায় তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সুপারহিট ছবি ‘জুরাসিক পার্ক’। স্টিভেন স্পিলবার্গের ছবি। প্রতিটি শিল্পীর অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করেছে। আর ডাইনোসরগুলির তো কথাই নেই। প্রযুক্তিবিদ্যার দৌলতে বড় পর্দায় ডাইনোসরগুলোর কাণ্ডকারখানা বাচ্চা বুড়ো সবার মন জয় করে নিয়েছে।
সবশেষে বলি আর একটি শিশুর কাণ্ডকারখানা নিয়ে তৈরি ছবির কথা। সেই ছবির নাম ‘বেবিজ ডে আউট’। কথা ফোটেনি এমন একটি শিশু অ্যাডভেঞ্চারের ছবির বই দেখে নিজেই বেরিয়ে পড়েছে হামাগুড়ি দিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করতে। মজার মজার দৃশ্য ভরপুর এই ছবি। বিশেষ করে ভালো লাগবে বনমানুষের সঙ্গে শিশুপুত্রটির কাণ্ডকারখানা। তিন বদমাশ এক বিরাট ধনীর পুত্রকে অপহরণ করতে এসেছিল। ওই শিশুপুত্রটি কীভাবে তাদের নাজেহাল করেছে তা উপভোগ করেছে দর্শকেরা। পরিচালক প্যাট্রিক জনসন। তিন কিডনাপার অসাধারণ অভিনয় করেছেন। জ্যাকব জোসেফ ওয়ারটন নামের ওই শিশুশিল্পীর মুখটি এখনও যেন চোখের সামনে ভাসছে এতই প্রাণবন্ত এতই সাবলীল। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি এখনও মনের মধ্যে দাগ কেটে রেখেছে। তোমরা যদি এখনও না দেখে থাকো, অবশ্যই দেখো ছবি ‘বেবিজ ডে আউট।’
যে ছবিগুলির কথা বললাম সেগুলো বেশ পুরনো। তোমাদের জন্য তৈরি হওয়া নতুন ছবিগুলির কথা ভবিষ্যতে বলার নিশ্চয় চেষ্টা করব।