সামান্য কিছু জমির মালিক বৃদ্ধ এলিউড এনজর্জ এমবুগুয়া। চাষবাস করে দিন চলে বুড়োর। জমির পাশে একখানি কুঁড়ে। সেখানেই বাস করে সে আর তাঁর স্ত্রী। এভাবেই শান্তিতে দিন কাটছিল। বাকি জীবনটাও হয়তো এভাবেই ধীরেসুস্থে কেটে যেত। বাধ সাধল একটা অদ্ভুত ঘটনা! কী সেই ঘটনা? দেখা যাক।
আফ্রিকা মহাদেশের নাম তোমরা সকলেই শুনেছ। এই মহাদেশেই রয়েছে কেনিয়া দেশটি। সেই দেশের রাজধানীর নাম নাইরোবি। নাইরোবি থেকে চওড়া জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে ছোট্ট শহর নারকের উপর দিয়ে। রাজধানী নাইরোবি আর নারকের মাঝামাঝি আছে মায় মাহিয়ু নামে টাউন। সেখানেই  বাস করতেন এলিউড। ২০১৮ সাল। মার্চ মাসের ১৮ তারিখ। এলিউড আর তাঁর স্ত্রী খেয়াল করলেন, তাঁদের বাড়ির মেঝেতে লম্বা একটা ফাটল দেখা দিয়েছে! একদিনের মধ্যেই গোটা বাড়িটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙেও পড়ল! তবে প্রতিবেশীরা বিশেষ আমল দিল না ঘটনাটিকে। কারণ কেনিয়ার ওই প্রদেশে রয়েছে প্রচুর আগ্নেয়গিরি। মাঝেমধ্যেই অগ্ন্যুৎপাত হয়। মাটির গভীর থেকে বেরিয়ে আসে উত্তপ্ত লাভা আর ছাই! বছরের পর বছর ধরে সেই লাভা আর ছাই মাটির উপর জমা হয় আর পাথরের রূপ নেয়। এই পাথরের মধ্যে অনেক ফাঁক থাকে। বৃষ্টি পড়লে ফাঁকের মধ্যে জল ঢুকে যায়। জলের চাপে ফেটে যায় পাথর। ফলে আশপাশের জমিতেও ফাটল ধরে। সেই বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রবল বর্ষা শুরু হয়েছিল। তাই সকলে ভাবল, জল ঢুকেই মাটিতে ফাটল ধরেছে আর এলিউডের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে!
আসল ঘটনাটা ঘটল আরও ক’দিন পরে। কয়েকদিন ধরেই ওই এলাকায় মৃদু মৃদু ভূমিকম্প হচ্ছিল। একদিন সকালে উঠে সকলে দেখল নারক শহরের কাছে সুসবা নামে এলাকায় বিরাট অংশজুড়ে ফাঁক হয়ে গিয়েছে মাটি! সেই ফাটল এতটাই লম্বা যে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীটাই বুঝি দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে! প্রায় ৬৫ ফুট চওড়া আর ৫০ ফুট গভীর সেই ফাটল ভেদ করে দিয়েছে জাতীয় সড়ককেও! ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সকলেরই চোখ কপালে উঠে যায়। তড়িঘড়ি এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নড়েচড়ে বসে দেশের প্রশাসন। ছুটে আসেন ভূতাত্ত্বিকরা! তাঁরা পরীক্ষা করে জানান অদ্ভুত এক তথ্য! ভাগ হয়ে যাচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশ!
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, বহু বছর আগে গোটা আফ্রিকা মহাদেশটিই গঠিত ছিল একটি মাত্র টেকটনিক প্লেট বা পাতের ওপরে। ক্রমশ এই প্লেট দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তৈরি হয়, সোমালি এবং নুবিয়ান প্লেট। ওপর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে মহাদেশটি এভাবে আলাদা আলাদা প্লেটের ওপর রয়েছে। তবে সোমালি এবং নুবিয়ান প্লেট দু’টি একে অপরের কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। তাই তৈরি হচ্ছে ফাটল। ভূতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, একদিন দু’টি প্লেট সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে তৈরি হবে দুটি ভিন্ন মহাদেশ। নতুন মহাদেশে থাকবে সম্ভবত সোমালিয়া, ইথিওপিয়ার অর্ধেক অংশ, কেনিয়া এবং তানজানিয়া।
বিষয়টি শুনতে অবাক লাগলেও, সত্যিটা হল এভাবেই পৃথিবীর সব মহাদেশ তৈরি হয়েছে। ভূতাত্ত্বিকরা বলেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগে পৃথিবীতে আসলে একটিই অতিকায় মহাদেশ ছিল। সেই বিশালাকায় মহাদেশের নাম ছিল প্যানজিয়া। এরপর ভূত্বকীয় পাতগুলির নড়াচড়ায় মূল ভূখণ্ড টুকরো টুকরো হয়ে যায় ও আলাদা আলাদা মহাদেশ তৈরি হয়। এই কারণেই পৃথিবীর ম্যাপের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, সাতটি মহাদেশের তটরেখা একটি আরেকটির সঙ্গে মিলে যায়! যেন সেগুলি একএকটি ‘জিগস পাজল’-এর বিচ্ছিন্ন টুকরো! একটি সহজ উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। কয়েক কোটি বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকা আর আফ্রিকার ভাঙনেই তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগর। দক্ষিণ আমেরিকার তটরেখা ও আফ্রিকার তটরেখা মিলিয়ে দেখলেই তা বোঝা যায়! তবে ভূতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন কেনিয়ায় ফাটল দেখা দিলেও, আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ফের নতুন মহাদেশ তৈরি হতে সময় লাগবে এখনও প্রায় পাঁচ কোটি বছর! এমনকী এভাবে প্লেটগুলি ভাঙতে ভাঙতে ও ঘুরতে ঘুরতে তারা ফের একসঙ্গে জুড়ে গিয়ে অতিকায় মহাদেশও গঠন করতে পারে! অবশ্য তা হতে কত কোটি বছর লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে গোটা পৃথিবীটাই যদি একটাই দেশ হয় তাহলে বেশ হয়। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে পারি। একসঙ্গে স্কুল, একসঙ্গে খেলা, একসঙ্গে আনন্দ! ইচ্ছে হলেই চড়ে বসতে পারি আইফেল টাওয়ারের মাথায় কিংবা ঘুরে আসতে পারি আমেরিকার ডিজনি ওয়ার্ল্ডে! কেউ আটকানোর থাকবে না! কোনও সীমানা থাকবে না। হবে না কোনও যুদ্ধ! তোমরা কী বলো?