কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
১. বিভাগ-ক: বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ) ২০টি প্রশ্ন থাকে সবগুলির উত্তর দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি অধ্যায় থেকে ২টি বা ৩টি করে প্রশ্ন থাকে। বিগত বছরগুলির প্রশ্ন দেখলে বুঝতে পারবে কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। এ বছর সাল চাওয়া হয়েছে তিনটি প্রশ্নে, বিগত বছরের তুলনায় একটু কম হলেও এই ধরনের প্রশ্ন সাধারণ পরীক্ষার্থীদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি বলব গুরুত্বপূর্ণ সালগুলি চার্ট পেপারে লিখে পড়ার ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখো। আর প্রত্যেকদিন একবার করে সেগুলিতে চোখ বোলাও, দেখবে কিছুদিনের মধ্যে আয়ত্তে চলে আসবে। যেমন ধরো এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠা ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে, কোল বিদ্রোহ ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে, সাঁওতাল বিদ্রোহ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে, নীল বিদ্রোহ ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে ইত্যাদি। MCQ-তে ২০ তে ২০ পেতে গেলে পাঠ্যবইটি খুঁটিয়ে পড়তে হবে।
২. বিভাগ-খ: এই বিভাগে পাঁচটি উপবিভাগ থাকে। পাঁচ ধরনের ৪টি করে প্রশ্ন থাকে। প্রত্যেক বিভাগ থেকে অন্তত ১টি এবং ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। কিন্তু আমার মতে এক্ষেত্রে সবকটি প্রশ্নের উত্তর দাও। যদি কোনওটি ভুল হয় তবে সেটি অতিরিক্ত প্রশ্ন হিসাবে গণ্য হবে। এই বিভাগে একটু সময় বেশি লাগে বিবৃতির সঙ্গে ব্যাখ্যা মেলানোয়। কেননা তিনটি ব্যাখ্যাই সঠিক মনে হতে পারে। তাই একটু ভেবে দেখতে হবে, কোন ব্যাখ্যাটি সবচেয়ে বেশি জোরালো। আর মানচিত্রে স্থান চিহ্নিতকরণ বিগত বছরের মানচিত্র অংশগুলি চিহ্নিত করার অভ্যাস করলেই হবে।
৩. বিভাগ-গ: এই বিভাগে দু-তিনটি বাক্যে ১১টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি অধ্যায় থেকে ২টি করে (৮×২) মোট ১৬টি প্রশ্ন থাকবে। ২০২১ সালের সম্ভাব্য ২ নাম্বারের প্রশ্ন হল, নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল? মেকলে মিনিট কী? মধুসূদন গুপ্ত কী জন্য বিখ্যাত? পরিবেশের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন? আঞ্চলিক ইতিহাস বলতে কী বোঝ? বিদ্রোহ ও বিপ্লবের মধ্যে পার্থক্য কী? মুন্ডা উলঘুলান কী? সভাসমিতির যুগ কী? ইলবার্ট বিল কী? মহারানির ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব কী? পঞ্চানন কর্মকার কী জন্য বিখ্যাত? লাইনো টাইপ কী? বটতলা প্রকাশনা কী? শ্রীনিকেতন কী? AITUC-র উদ্দেশ্য কী? মাদারিপাশি কে ছিলেন? মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী? অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কী? দীপালি সংঘ কেন গড়ে ওঠে? উদ্বাস্তু কারা? রাজাকার কারা? আজাদ কাশ্মীর কী? LOC/ PEPSU/ IOA কী? ইত্যাদি।
৪. বিভাগ-ঘ: এই বিভাগে সাত-আটটি বাক্যে ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। চারটি উপবিভাগে ৮টি প্রশ্ন থাকে, প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্তত ১টি করে এবং বাকি দুটি যেকোনও উপবিভাগ থেকে দিতে পারবে। বিগত তিন বছরই উপবিভাগ-১ এর দুটি প্রশ্নই দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে এসেছে। ২০২১ সালে সম্ভাব্য প্রশ্নগুলি হল— নারী ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন? লেটার্স ফ্রম-এ ফাদার টু হিজ ডটারের গুরুত্ব। শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগর/ ডেভিড হেয়ার/ বেথুন সাহেব-এর ভূমিকা, নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর অবদান, নীলদর্পণ নাটকের গুরুত্ব, ২০২০ সালে উপবিভাগ-২ তে দুটি প্রশ্নই চতুর্থ অধ্যায় থেকে এসেছে, তাই আশা করা যায় আগামী বছর তৃতীয় অধ্যায় থেকে একটি প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন কোল/ সাঁওতাল/ মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ, আনন্দমঠ/ বর্তমান ভারত গ্রন্থের অবদান, টীকা লেখো— মহারানির ঘোষণা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা, ভারতমাতাচিত্র, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায় থেকে— IACS-এর অবদান, বসুবিজ্ঞান মন্দির, বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউশন, U.N. Roy And Sons-এর অবদান ইত্যাদি। এ বছর শেষ দুটি প্রশ্ন অষ্টম অধ্যায় থেকে এসেছে, ২০২১-এ সপ্তম ও অষ্টম অধ্যায় থেকে একটি করে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা আছে। যেমন টীকা—দীপালি সংঘ, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সূর্য সেন, আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা, কাশ্মীরের ভারতভুক্তি, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন ইত্যাদি।
৫. বিভাগ-ঙ: ১৫/১৬টি বাক্যে ১টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ২-৩, ৪-৫, ৬-৭ এই অধ্যায়গুলি থেকে একটি করে ৩টি প্রশ্ন থাকে। এক্ষেত্রে যে প্রশ্নে দুটি অংশ থাকে, সেটি লিখতে পারলে ভালো হয়। ২০২১-এর সম্ভাব্য প্রশ্নগুলি হল— সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব, নীল বিদ্রোহের কারণ ও বৈশিষ্ট্য, মহা বিদ্রোহের প্রকৃতি, ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির ভূমিকা, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী/ ছাত্রদের ভূমিকা, বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র ও সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ইতিহাস বিষয়ে ভালো ফল করার জন্য যে বিষয়গুলি অবশ্যই মাথায় রাখা ভালো সেগুলি হল—
১. প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে পাঠ্যবইটা পড়া।
২. মনে রাখতে হবে ইতিহাস বিষয়ে প্রচুর লেখার প্রয়োজন নেই। ৪ নম্বরের জন্য চারটি সঠিক পয়েন্ট দিলেই পুরো নাম্বার পাওয়া যায়।
৩. ৮ নাম্বারের জন্য ৮-১০টি প্রশ্ন সংক্ষেপে লিখে ৩/৪ বার রিডিং পড়ো এবং আন্দাজে লেখার চেষ্টা করো। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
৪. সাল তারিখ ভুল লেখার চেয়ে না লেখাই ভালো। যে প্রশ্নে সাল চাওয়া হচ্ছে না সেখানে সঠিক নাহলে সাল লিখবে না।
৫. ইতিহাস বিষয়কে ভয় না পেয়ে, ভালোবাসতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলি মনে রাখলে অবশ্যই উপকৃত হবে, আর আমার লেখাও সার্থক হবে।
পরামর্শে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক সঞ্জয় পাল।