সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
সিদ্ধার্থ রেশ ধরে বলল, ‘মাটির বুকে বারিষ রাখে মেঘের পিছুটান...’
দুজনের খিলখিলিয়ে ওঠা হাসিতে তখন আকাশ জুড়ে মেঘেদের বড় হিংসে হল। তারা কড়কড় করে ডেকে উঠে বারিষকে ভয় পাওয়াল। ও চমকে উঠে সিদ্ধার্থর পা আঁকড়ে ধরল। বারিষকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকে সিদ্ধার্থ বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিল। মেয়ে খুব সামান্য ভিজেছে। একটা তোয়ালে দিয়ে ওকে মুছিয়ে দিতে লাগলো সিদ্ধার্থ।
‘মামমাম কি করে মেঘ বানায়, ওই স্টোরিটা পুরোটা বললে না তো।’
‘এখন আর স্টোরি টোরি নয়, এবার ঘুমোনোর সময়। আমার একটু কাজ আছে। তুমি তোমার স্টোরিবুক পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ো।’
‘নাআআ... প্লিজ আজকেই বলো না ওই স্টোরিটা। প্লিইইইজ...’
মুখচোখে আকুল আকুতির এক্সপ্রেশন এনে, মেয়ের ‘প্লিজ’ বলার ধরণ দেখে সিদ্ধার্থ মনে মনে খুব একচোট হাসল। স্কুলের বদান্যতায় আজকাল মেয়ের কথায় কথায় ‘প্লিজ’, ‘সরি’, ‘থ্যাঙ্ক ইউ’য়ের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
সিদ্ধার্থ মুখে যতটা সম্ভব গম্ভীর ভাব এনে বললো, ‘গিয়ে শুয়ে পড়। বাকি গল্পটা বলছি। শুনেই ঘুমিয়ে পড়বি কিন্তু। আর নো বায়না।’
সিদ্ধার্থ খাটের হেডরেস্টে হেলান দিয়ে বসল। মেয়ে বাবার পাশে খাটের ওপর উপুড় হয়ে শুলো।
সিদ্ধার্থ জিজ্ঞেস করলো, ‘কতটা বলেছিলাম?’
বারিষ আগ্রহভরে বলল, ‘মামমাম প্লেনটা নিয়ে মেঘেদের মধ্যে গেল, তারপর ওইগুলো ছড়াল।’
‘কি, ওইগুলো?’
‘সীডসগুলো। কেমিক্যাল এজেন্টস, ড্রাই আইস, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সিলভার অক্সাইড।’
ছ’বছরের মেয়েকে এসব বোঝানোর মানে হয় না। তবু, সিদ্ধার্থ হাল ছাড়ার পাত্র নয়। মেয়ে ক্লাউড সীডিং সম্পর্কে জানার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। সিদ্ধার্থ মেয়েকে সহজভাবেই বুঝিয়েছিল যে তার মামমাম প্লেনে করে অনেক মেঘ নিয়ে গিয়ে আকাশে ছড়িয়ে দেয়। যেখানে এমনি বৃষ্টি হয় না, সেখানে ওই মেঘগুলো দিয়ে বৃষ্টি পড়ে। কিন্তু, মেয়ের এটুকুতে জ্ঞানপিপাসা মেটেনি। অতএব, সরলীকৃত বিস্তারিত বিবরণ।
‘বড় হয়ে যখন কেমিস্ট্রি পড়বি, তখন এগুলো সম্পর্কে জানতে পারবি। এই যেমন সোডিয়াম ক্লোরাইড হচ্ছে নুন, মানে আমরা যে নুন খাই, সল্ট। ড্রাই আইস হচ্ছে কার্বন...’
মেয়ে অধৈর্য হয়ে কেমিস্ট্রির লেকচার মাঝপথে থামিয়ে দিল, ‘তারপর কি হবে?’
‘তারপর, সেই পার্টিকলগুলো তো মেঘের মধ্যে ছড়িয়ে গেল। সেইগুলো মেঘের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে মামমাম প্লেন নিয়ে ফিরে আসবে।’ ‘তারপর?’
‘পার্টিকলগুলো মেঘের মধ্যে ভাসতে ভাসতে যত জলের কণা আছে সবার সাথে বন্ধু পাতাবে। সব জলের কণাদের নিজের গায়ে জড়িয়ে নেবে। একটা করে জলের কণা জড়িয়ে নিচ্ছে, আবার ভাসছে, আবার আরেকটা কণা জড়িয়ে নিচ্ছে, আবার ভাসছে। এরম করতে করতে একসময় খুব ভারী হয়ে যাবে, পিঠে অনেক জলের বোঝা। আর নড়তে চড়তে পারে না, ভেসেও থাকতে পারেনা।’
‘তখন কি করবে? পড়ে যাবে?’
‘ইয়েস। তখন ওরা বারিষ হয়ে ঝরে পড়বে।’ সিদ্ধার্থ হেসে মেয়ের গালদুটো নিজের দুহাতে ধরে আদর করে।
বারিষের হাবভাব বলে দিচ্ছে সে নিজের মতো করে এক রকম কিছু একটা বুঝল। যতটাই বুঝে থাক বৃত্তান্তটি তার বেশ মনঃপুত হয়েছে। বাবার পেটের ওপর চড়ে বুকের ওপর মাথা দিয়ে শুলো। সিদ্ধার্থ জানে ঘুম পেলে মেয়ে এ রকমই করে। রাত প্রায় বারোটা। সিদ্ধার্থ মনে মনে ভাবল, যাক, তার মানে ম্যাডাম এতক্ষনে ক্লান্ত হয়েছে, এবার ঘুমিয়ে পড়বে।
মেয়ে তখনও কী সব ভেবে চলেছে। একটু ভাবুক, একটু ঘুমঘুম স্বরে একটা প্রশ্ন নিক্ষেপ করল বাবার দিকে। ‘বাবাই! আমার নাম বারিষ কেন?’
সিদ্ধার্থ দুহাতে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বললো, ‘তোর মামমামের আর আমার তো বৃষ্টি খুব প্রিয়। তাই ভাবলাম সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের নামেই তোর নাম রাখব।’
‘আমি কি এমনি ক্লাউডের বারিষ না ওই ক্লাউ...’ প্রশ্নটা শেষ হল না। মেয়ে ঘুমিয়েছে। সিদ্ধার্থ আলতো আলতো করে মেয়ের পিঠে চাপড় দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর সাবধানে মেয়েকে পাশে শুইয়ে দিল।
বেডসাইড টেবিলে রাখা সিদ্ধার্থর ফোনটা বেজে উঠল। মেঘনার ফোন। পেশায় পাইলট মেঘনা সিঙ্গাপুরের একটা বড় রিসার্চ অরগ্যানাইজেশনে চাকরি করে। কোম্পানির চার্টার্ড এয়ারক্রাফট ফ্লাই করে। বছর দুয়েক হল এই চাকরিটা নিয়ে দিল্লি থেকে সিঙ্গাপুরে শিফট করে গেছে। সিদ্ধার্থর দিল্লিতে মোটামুটি থিতু এক প্রফেসারের জীবন। অতএব মেয়ে ওর কাছেই থাকবে মনস্থ হয়েছে।
সিদ্ধার্থ ফোনটা নিয়ে পাশের ঘরে গেল।
‘হ্যাঁ বলো। কেমন আছো?’
‘তোমরা কেমন আছো? বারিষ ঠিক আছে?’
‘হ্যাঁ, এদিকে সব ঠিক আছে। তুমি কেমন আছো?’
‘আমি ঠিক আছি, জাস্ট আ বিট আপসেট।’
‘কেন? কী হয়েছে?’
‘পরশুদিন নিশান্ত যোগাযোগ করেছিল আজ এত বছর পর। ওর গ্রিনকার্ড হয়ে গেছে। কিছু প্রপার্টি রিলেটেড ফাইনাল সেটলমেন্টের জন্য এখন দিল্লিতে আছে কিছুদিন। এরপর পার্মানেন্টলি ইউএস শিফট করে যাবে। ভেবেছিল আমি দিল্লিতে আছি। তাই অনেক কষ্টে আমার ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছিল। সামনের সপ্তাহে আমি বাড়ি আসছি শুনে বলল একদিন দেখা করতে আসতে চায়। হ্যালো... সিড... হ্যালো...’
‘হ্যাঁ শুনছি, বলো।’
‘আই ট্রায়েড টু অ্যাভয়েড। কিন্তু, এমন জোর করল। বলল আর হয়তো দেশে ফিরবে না কখনও। আর হয়তো দেখা হবে না, তাই।’
‘বেশ তো।’
‘তুমি রেগে গেলে সিড? ট্রাস্ট মি, আই ট্রায়েড টু...’
‘প্লিজ মেঘা। আমরা ঠিক করেছিলাম যে, এই নিয়ে কখনও আমাদের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করব না। ইফ হি ওয়ান্টস টু কাম, লেট হিম কাম...অ্যান্ড গো। উই নিড নট টু ডিসকাস মাচ অ্যাবাউট ইট।’
মেঘনা বিকেলে গা ধুয়ে আজ শাড়ি পরেছে। শ্যাওলা রঙের শিফন শাড়ি। স্লিভলেস ডার্ক ব্রাউন ব্লাউজ। আয়নার সামনে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছে মেঘনা। সিদ্ধার্থ দেখে বলল, ‘বেশ লাগছে।’ মেঘনা হাল্কা লাজুক হাসল। আজ এক স্পেশাল গেস্ট আসছে বাড়িতে। স্পেশাল? আজ এই নিয়ে সিদ্ধার্থ কি কোথাও একটু অভিমানী? নিশান্তের আসার ব্যাপারটা ওকে কেমন আড়ষ্ট করে দিয়েছে। এত বছর পরেও বুকের ভেতর কোথায় এত অস্বস্তি লুকিয়ে ছিল সিদ্ধার্থ বুঝতে পারেনি। মেঘনা কি চাইলে সত্যিই নিশান্তের এই আসাটা আটকাতে পারত না? ওর কি এখনও নিশান্তের প্রতি কোনও টান অবশিষ্ট আছে যা উপেক্ষা করে নিশান্তের যেচে অতিথি হওয়ার আবদারকে অগ্রাহ্য করতে পারল না মেঘনা?
মেঘনা মারাঠি। বাংলা পড়তে পারে না। কবিতা খুব একটা বোঝে না, তবে সিদ্ধার্থর বলা শুনতে ভালোবাসে। সিদ্ধার্থ আপন মনেই বলল, ‘বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস, এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে...’
‘যে মেঘগুলো গাভীর মতো চরে, ওদের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দিলে, সারাদিন আকাশে টুং টাং আওয়াজ হবে।’
বারিষের কথায় যারপরনাই চমকে গিয়ে মেঘনা আর সিদ্ধার্থ হেসে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। বারিষ খাটে বসে ছবি আঁকছে। সিদ্ধার্থ বারিষকে বলল, ‘গাভী মানে কী, জানিস তুই!’
‘হ্যাঁ, গরু। তুমিই তো বলেছিলে।’
‘অ..বলেছিলাম বুঝি! তা তোর কান তো এদিকে, কি আঁকছিস দেখি।’
‘আমি তো মন দিয়ে আঁকছি।’
সিদ্ধার্থ হেসে ফেলল, ‘হ্যাঁ, তাই দেখা কি আঁকছিস!’
সিদ্ধার্থর কথা শেষ হতে না হতেই ডোরবেল বাজল।
কেউ কিছু বলার আগেই বারিষ ছুটে গিয়ে দরজা খুলল। নিশান্ত পাঞ্জাবি। মেঘনা নিশান্তের সঙ্গে হিন্দিতেই কথা বলছে। বারিষ প্রথমে কিছুক্ষণ নিশান্তকে অবজার্ভ করল। তারপর ওর হাবভাবে মনে হল নিশান্তকে ওর ভালোই লেগেছে।
সিদ্ধার্থ, নিশান্তের সঙ্গে কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলল। তারপর একসময় মেঘনা আর নিশান্ত ওদের পুরনো চেনা জগতের নানা পরিচিতদের নিয়ে গল্পে মেতে উঠল। হয়তো একটা নস্ট্যালজিয়ায় ভাসছিল দুজনেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে বারিষও খুব সহজেই মিশে গেল নিশান্তের সঙ্গে। মেঘনা, নিশান্ত গল্প করছে এখন। বারিষ ওদেরকে ঘিরে প্রজাপতির মতো উড়ছে। ক্রমে নিজেকে ব্রাত্য মনে হতে লাগল সিদ্ধার্থর। চরতে চরতে হারিয়ে যাওয়া, বৃষ্টি না দিতে পারা একটা মেঘের মতো একা মনে হল নিজেকে।
মেঘনা মাঝে মাঝেই চলে আসছে কিচেনে। হয়তো একটু নিঃশ্বাস নিতে। দর্শনে, অর্থকৌলিন্যে, ব্যবহারে নিশান্ত বরাবরই একজন ঝাঁ-চকচকে মানুষ। এই ক’বছরে বয়সও বেড়েছে, জেল্লাও বেড়েছে।
জীবনে কোনওদিন আর নিশান্তের সঙ্গে দেখা না হলে কোনও আফসোসই থাকত না মেঘনার। তবু আজ এত বছর পর নিশান্তকে দেখে কি এতটুকু উত্তেজনা নেই ওর মধ্যে? না, নেই। হঠাৎ নিজের চোয়াল শক্ত করল মেঘনা। নিশান্তের সঙ্গে যৌবনের হঠকারিতার যে মাশুল দিতে হয়েছে মেঘনাকে, তার বিন্দুবিসর্গও তো নিশান্ত জানে না। মেঘনার কোনও কথা শোনার বা বোঝার চেষ্টা না করেই দায়িত্বজ্ঞানহীন, স্বার্থপরের মতো নিজের জীবন গোছাতে বিদেশে চলে গিয়েছিল নিশান্ত। আর কোনও যোগাযোগ রাখেনি। চলে যাবার সময় বলেছিল, ‘ইট ওয়াস নাইস অ্যান্ড ফান টু হ্যাভ নোন ইউ। উইশ ইউ অল দ্য বেস্ট ফর ইওর ফিউচার। বি ইন টাচ।’
বছর দুয়েকের সম্পর্কে টাচ, ফান, সবই হয়েছিল। এমনকি নেশার ঘোরে শরীরের আকর্ষণে ভেসেও গিয়েছিল দুজনে। মেঘনা, নিশান্ত দুজনের কাছেই এসবই ছিল খুব স্বাভাবিক, অতিরিক্ত কিছু নয়। ওরা কেউই হয়তো সেভাবে প্রেমেও পড়েনি। তবু নিশান্তের হঠাৎ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ও নিজের জীবনে মেঘনাকে একেবারে অবিশেষ করে দেওয়াটা মেঘনা মেনে নিতে পারেনি। বলতে গিয়ে বার বার বাধা পেয়ে আর বলাও হয়ে ওঠেনি যে ও সন্তানসম্ভবা। ভেবে নিয়েছিল সন্তানের জন্ম দেবে ও একাই মানুষ করবে তাকে। কিন্তু, একটা সিনেম্যাটিক মোড় নিয়ে জীবন সিদ্ধার্থকে এনে হাজির করেছিল মেঘনার জীবনে। তখন ও দু মাসের প্রেগন্যান্ট। সিদ্ধার্থর সাথে পরিচয়, আলাপে পরিণত হওয়ার সময়েই মেঘনা সিদ্ধার্থকে জানিয়ে ছিল সব। সিদ্ধার্থ একটুও হোঁচট খায়নি। তারপর থেকে আজ অবধি মেঘনা প্রতিদিন নিজেকে সৌভাগ্যবতী ভেবেছে। তবু, মাঝে মাঝে কেন মনে হয়, যদি নিশান্তকে ও সবটা জানাতে পারত, তবে কি কিছু অন্যরকম হতো? যে নিশান্তকে ও এতদিন চিনেছে, তার ভেতরে কি অন্য এক নিশান্তকে খুঁজে পেত মেঘনা?
সিদ্ধার্থ এমনিতেই খুব মিশুকে নয়। আজ বোধহয় আরও কম কথা বলছে। নিশান্ত আর বারিষের সখ্যতা দেখছে চুপচাপ। কি একটা নিয়ে বারিষ জেদ করছিল নিশান্তের কাছে। সিদ্ধার্থ বারিষকে বকল। নিশান্ত বলল, ‘আরে ছোড়িয়ে না, বচ্চি হ্যায়। মুঝসে হি তো জিদ কি হ্যায়। মুঝে কোই প্রবলেম নেহি।’
কাল মেঘনাকেও বোঝাতে গিয়েছিল সিদ্ধার্থ। অল্প সময়ের জন্য দেখা হয় বলেই মেয়েকে মাত্রাতিরিক্ত আদর না দিতে। মেয়ের জেদ, আবদার বেড়ে যাচ্ছে। উত্তরে মেঘনাও এরকমভাবেই বলেছিল, ‘আচ্ছা, মেয়েটা তো আমার। আমার সাথেই তো জেদ করছে। ছাড়ো না। ওর ভালো মন্দ তো আমিও একটু বুঝি, নাকি?’
নিজেকে বড় রিক্ত মনে হচ্ছে সিদ্ধার্থর। কেমন গলা শুকিয়ে আসছে। ও কি ওই মেঘগুলোর মতো, যাদের বুকে ঝরিয়ে দেবার মতো যথেষ্ট বৃষ্টি নেই! সিদ্ধার্থ যেন মনে মনে মেঘনার কাছে মিনতি করলো, ‘তুমি পারো না মেঘনা! ওই মেঘগুলোর মতো আমার বুকেও কিছু রাসায়নিক গেঁথে দিতে যাতে পৃথিবীর সব অপত্য স্নেহ এই বুকে জমা হয়! যে স্নেহের বাঁধন পৃথিবীর কোনও কিছু কাটতে না পারে?’
নিশান্তের ডাকে চমক ভাঙল সিদ্ধার্থর। ও চলে যেতে চাইছে। মেঘনা অনুরোধ করছে রাত্রে খেয়ে যেতে। কিন্তু, ওর অন্য কমিটমেন্ট আছে, তাই থাকতে পারবে না। নিশান্ত নিজের কার্ড দিয়ে গেল মেঘনা ও সিদ্ধার্থকে। বলল যোগাযোগ রাখতে। ওও রাখবে। মেঘনা নিশান্তকে দরজা অবধি এগিয়ে দিতে গেল। সিদ্ধার্থ একটু দূরে, পেছনে। দরজা দিয়ে বেরোনোর সময় নিশান্ত বারিষকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, ‘অব সবকো বাই বাই কর দো। চলো, তুম মেরে সাথ। হাম বহত ঘুমেঙ্গে, ডিসনিল্যান্ড চলেঙ্গে, বহত মজা হোগা।’ বারিষের মুখে যেন হঠাৎ একরাশ বৃষ্টির মেঘ দেখল সিদ্ধার্থ। যতটা সম্ভব ঝুঁকে, হাত বাড়িয়ে ‘বাবাই’ বলে পৌঁছতে চাইল সিদ্ধার্থর বুকে। সিদ্ধার্থ এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়াতেই বাবার গলা জড়িয়ে মেয়ে মাথা রাখল বাবার কাঁধে। সিদ্ধার্থর চোখ ঝাপসা হয়ে এল। বুকের মধ্যে বৃষ্টি পড়লে বোধহয় এমনই হয়। ঝাপসা চোখে মেয়েকে বুকে চেপে দেখল, মেঘা নিশান্তকে সী অফ করে দরজা বন্ধ করল।
রাত হয়েছে। বাইরে ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে। মেঘনা যেন কেমন আনমনা। টেবিলে ডিনার সার্ভ করে খেতে ডাকছে। সিদ্ধার্থ আর বারিষ তখন বারিষের আঁকা ছবি, যেটা ফেলে ছুট্টে দরজা খুলতে গিয়েছিল, সেটা নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনায় মগ্ন।
অলংকরণ : সুব্রত মাজী