পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
ভয়াবহ সেই স্মৃতি-কথা শোনাচ্ছিলেন উত্তর গোপালনগরের দীপঙ্কর মণ্ডল—‘নদীবাঁধের কাছেই আমার বাড়ি ছিল। এক পলকেই সেদিন পুরো বাড়ি গ্রাস করে নেয় গোবোদিয়া নদীর জল। ১৯৮৩ সালের বন্যা আমি দেখেছি। কিন্তু তার থেকেও ভয়ানক পরিস্থিতি হয়েছিল আইলায়। ঝড়ের দাপটে নদী যে কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, সেদিনই বুঝেছিলাম আমরা। ঘূর্ণিঝড় থেমে যাওয়ার পরেও অনেকেই প্রায় এক সপ্তাহ বাড়ি ফিরতে পারেননি। পরে সবাই বাড়ি ফিরলেও সেখানে থাকার মতো অবস্থা ছিল না। চারিদিকে সাপের উৎপাত। মরা মাছের পচা গন্ধে টেকা দায়। প্রায় তিন মাস পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।’
২০ মে, ২০২০। উম-পুনের প্রভাব পড়েছিল এই গ্রামে। ঠিক যেন আইলার অ্যাকশন রিপ্লে। সেবারও নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে যায় উত্তর গোপালনগর গ্রাম। লোনা জলে প্লাবিত হয়ে যায় হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি। ফের গৃহহারা হন গ্রামবাসীরা। আশ্রয় নিতে হল ফ্লাড শেল্টারে। এক বছরের মাথায় আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। আরও একবার ভাঙল নদীর বাঁধ। ফের লোনা জলে প্লাবিত হয়ে গেল গোটা গ্রাম। দিন যায়। মাস যায়। একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় জীবন। ধীরে ধীরে স্থানীয়রাও নিজেদের সামলে নিয়েছেন। তবে ক্যালেন্ডারে মে মাস এলেই সঙ্গে হাজির হয় চাপা এক আতঙ্ক। এই সময়টায় কেউ পুকুরে মাছ ছাড়েন না। বন্ধ থাকে সব্জি চাষও। তাঁদের ভয় একটাই, বাঁধ ভাঙলেই সর্বনাশ। লোনাজলে ডুববে সমস্ত পরিশ্রম।
দিনকয়েক আগে হানা দেয় রেমাল। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতাটা স্থানীয়দের কাছে অন্যরকম। নেপথ্যে রাজ্য সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ। উত্তর গোপালনগরে প্রায় সাড়ে ৩০০ মিটার কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাই রেমাল তাণ্ডবের পরেও নদীর জল গ্রামে ঢুকতে পারেনি। স্থানীয়দের বক্তব্য, আর আড়াই কিমি কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণ করে দিলে আর ভয় থাকবে না। এনিয়ে অবশ্য সহমত নন আইসার কলকাতার অধ্যাপক পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ি। তাঁর মতে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কংক্রিটের বাঁধ নয়। জীবন্ত ঝিনুক দিয়ে তৈরি অয়েস্টার রিফ বা পোড়ামাটি দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা টেরাকোটা রিফই এই সমস্যার পরিবেশবান্ধব সমাধান।