পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
তেজ পাতে তেজ কেন— এই প্রশ্নের জবাব সুকুমার রায় তাঁর ‘নোটবুক’-এ খুঁজে পেয়েছিলেন। তেজপাতার এই তেজ শুধু রান্নার কাজেই নয়, ঘরগেরস্থালির নানা ক্ষেত্রেও কাজে আসে। তেজপাতা ব্যবহারের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রাচীন গ্রিসে এই পাতাটি মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। যে কোনও স্যুপের স্বাদ বাড়াতে তেজপাতার ব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়। পরে ইউরোপের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এই পাতার ব্যবহার বাড়ে। ভারতীয় আয়ুর্বেদেও এই পাতা মশলা হিসেবে ব্যবহারের নিদান রয়েছে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও বিশেষ উপযোগী হওয়ায় ভেষজ ঔষধ হিসেবেও এটি জনপ্রিয়। ত্বক ও চুলের নানা সমস্যা সমাধানে এই পাতা যেমন কাজে আসে, তেমনই হজমের সমস্যা দূর করতে, হার্টের সমস্যা রুখতে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেজপাতা খুব কার্যকর। প্রতিদিনের রান্নায় তেজপাতা রাখার পরামর্শ দেন ভারতীয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা। শুধু শারীরিক ক্ষেত্রেই নয়, হেঁশেলে থাকা তেজপাতা গৃহস্থালিরও বিভিন্ন কাজে আসে। রান্নাঘরে রাখা পুরনো হয়ে যাওয়া, গন্ধ কমে যাওয়া তেজপাতা দিয়ে ফোড়ন দেওয়া যায় না। অনেকেই সেই পাতা ফেলে দেন। তবে পুরনো তেজপাতার ব্যবহার জানলে এই পাতা ফেলে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বরং গৃহস্থবাড়ির নানা কাজে একে ব্যবহার করতে পারেন। কী কী কারণে এই পাতার এত কদর? রইল হদিশ।
• সুগন্ধির সন্ধান: রুম ফ্রেশনার হিসেবে রাসায়নিক মিশ্রিত সুগন্ধি না স্প্রে করে তেজপাতা ব্যবহার করুন। শুকনো গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে লবঙ্গ ও তেজপাতা যোগ করে তার উপর কয়ের ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করুন। ঘর সুগন্ধে ভরে যাবে। এই বর্ষায় ঘরের স্যাঁতসেঁতে ভ্যাপসা গন্ধও কাটবে।
• পোকামাকড় থেকে দূরে: রান্নাঘরে তেজপাতা রাখার নানা সুবিধা আছে। চিনির বয়াম ও নুনের কৌটোয় কয়েকটা তেজপাতা ফেলে রাখুন। এতে আরশোলা, পিঁপড়ে ও পোকামাকড় দূরে থাকবে।
• চুলের বন্ধু: এই পাতা চুলের জন্য বিশেষ উপকারী। কয়েকটি তেজপাতা গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করুন। এবার এই জল কন্ডিশনারের মতো চুলে ব্যবহার করলে খুশকি ও চুল পড়ার সমস্যা অনেকটাই কমবে।
• মশা মাছি দূর: বাড়িতে মশা ও মাছির উৎপাত কমাতে তেজপাতা ব্যবহার করুন। তেজপাতার সঙ্গে কিছু পেঁয়াজের খোসাও পুড়িয়ে ফেলুন। এবার এই মিশ্রণ ধুনো জ্বালানোর মতো করে পোড়ালে তা থেকে বের হওয়া ধোঁয়া দূর করবে পোকামাকড়।
• মানসিক তৃপ্তি: তেজপাতার গন্ধের সঙ্গে ডোপামিন ক্ষরণের বিশেষ সম্পর্ক আছে। ডোপামিন সুখী হরমোন হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্রের দাবি, তেজপাতার গন্ধে মন ভালো থাকে। অবসন্ন ভাব কাটাতে ও হতাশা দূর করতে এই পাতার গন্ধ বিশেষ কাজে আসে।
• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: তেজপাতায় থাকে পলিফেনল। এই বিশেষ উপাদান শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস কমাতে এই পাতা বিশেষ কার্যকর। শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করতেও তেজপাতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
• হৃদযন্ত্রের শক্তি: তেজপাতার অন্যতম উপাদান ক্যাফেইক অ্যাসিড। এই উপকরণটি হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
• ঠান্ডার উপশম: ভারতীয় আয়ুর্বেদে তেজপাতার কদর রয়েছে, কারণ এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন সি মেলে। যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া তেজপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান গলার অভ্যন্তরে সংক্রমণজনিত প্রদাহ নিরাময়ে সাহায্য করে। তাই ঠান্ডা লাগলে তেজপাতা দেওয়া চা বা জলে তেজপাতা দিয়ে ফুটিয়ে, সেই জল ঠান্ডা করে ছেঁকে খাওয়ার চল রয়েছে আয়ুর্বেদে।
• কিডনির উপকার: বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত, তেজপাতা বিশেষ একটি উৎসেচককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই উৎসেচকের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার শঙ্কা বাড়ে। তেজপাতা তা নিয়ন্ত্রণ করে কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
• হজমের বন্ধু: খাবার হজম করার জন্য যেসব উৎসেচক প্রয়োজন, সেই ‘সিনেয়োল’ এবং ‘ইউজেনল’ ক্ষরণে বিশেষ সাহায্য করে তেজপাতা। ফলে পেটের সমস্যা প্রতিরোধে তেজপাতার চা বিশেষ কাজে আসে।
• উদ্বেগ কমায়: কাজের চাপে শরীর ও মন অবসন্ন হলে এক কাপ তেজপাতার চায়ে বাড়তি এনার্জি ফিরে পাওয়া যায় বলে দাবি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই তেজপাতার চা স্নায়ু শান্ত করে ও ভালো ঘুম আনে।