পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
মানুষের গায়ের রং দেখে কখনও কিছু বিচার করতে নেই, করলে তা অন্যায়। কিন্তু চায়ের রং দেখে অবশ্যই বিচার করুন কোন চা কিনবেন!
চা বললেই কারও পছন্দ দুধ দিয়ে কড়া করে। কেউ আবার হালকা ফ্লেভারের লিকারের ভক্ত। কারও আবার সকাল শুরু হয় হলদেটে সবুজ গরম পানীয় দিয়ে। চীনে খাবারকে আপন করার বহু আগে চীনের তরল চা-কে নিজের করে নিয়েছে আপামর ভারতবাসী। বৈঠকী আড্ডা হোক বা তর্ক, জরুরি অফিস মিটিং কিংবা সৌজন্যবোধ— এক কাপ চায়ে নিত্য বহু সমস্যার জট খুলে যায়। মিটে যায় মিঠে মান-অভিমান। কখনও বা রফাসূত্র বেরয় জটিল সমস্যার। জীবনের সব জটিলতা ও সহজ বিষয়ে মানুষের হাতে উঠে আসে চায়ের পেয়ালা।
চা শুধু প্রাণশক্তি বাড়ায় কিংবা গলা ভেজায়, মেজাজ ভালো রাখে, এটুকুই নয়। বিভিন্ন রকমের চায়ের রয়েছে নানা গুণাগুণ। কোন চা খাদ্যতালিকায় থাকলে শারীরিক উপকার বেশি, রইল তার হদিশ।
লাল চায়ের উপকারিতা: সকালে উঠে চিনি ছাড়া লিকার চা তৈরি করেন অনেকে।
• লিকার চা অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ঠাসা। এতে নানা রোগ প্রতিরোধের উপাদান থাকে।
• সকাল সকাল খালি পেটে চিনি ছাড়া গরম লিকার চা খেলে খাদ্যনালীতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া মরে যায়। সারা দিনের হজমশক্তি ভালো থাকে।
• শীতকাল বা বর্ষায় গলার অভ্যন্তর গরম রাখতে ও মরশুমি গলা ব্যথা, ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচায় লাল চা। সঙ্গে একটু আদা বা মধুযোগ করে খেলে আরও ভালো ফল মেলে।
• শরীরকে ভিতর থেকে আর্দ্র রাখে লাল চা। সারাদিনের কাজের শক্তি জোগান দেওয়াও এর অন্যতম কাজ।
• নানা কাজের মাঝে শরীর ক্লান্ত হলে শরীরে বাড়তি এনার্জি জোগায় এই চা।
হিবিসকাস টি-এর উপকারিতা: আজকাল জবা ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে বানানো বিশেষ এক ধরনের চা। এই চা হিবিসকাস টি নামে পরিচিত। এই চায়েরও বিশেষ কিছু উপকার আছে।
• এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। ত্বক ও চুলের পরিচর্যায় এই চা বিশেষ উপকারী। এতে বিটা ক্যারোটিন থাকায় ত্বকের নানা সংক্রমণ প্রতিহত করে। আবার জবা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি হয় বলে, ঘরোয়া কন্ডিশনার হিসেবেও এই চা ব্যবহার করা যেতে পারে।
• এই চা শরীরে কোলাজেনের জোগান বাড়ায় ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও জেল্লাদার থাকে।
• হিবিসকাস টি শরীরকে ডিটক্স করে হাইড্রেটেড রাখে। রক্তসংবহন প্রক্রিয়া সতেজ রেখে তারুণ্য ধরে রাখে।
হোয়াইট টি বা সাদা চায়ের উপকারিতা: চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে এই চায়ের চাষ শুরু হয়। এই চায়ের রং হালকা হলুদ। স্বাদে একটু কষা ও গন্ধও খুব হালকা। সন্ধ্যার পরে এই চা খাওয়ার নিয়ম। চীন, কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশে নৈশভোজের পর এই চা খাওয়া হয়। হোয়াইট টি-র নানা উপযোগিতা রয়েছে।
• নানা জীবাণুঘটিত সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে এই চা। নিয়মিত এই চা পান করলে এক-দেড় মাসের মধ্যেই ত্বকের ফারাক লক্ষ্য করা যায়।
• গ্রিন টি-র মতো এই চা-ও মেটাবলিজম বাড়ায়। ফলে ওজন হ্রাসে বিশেষ কার্যকর। শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে এটি শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখে।
• খুশকির সমস্যা দূর করতে এই চা খুব উপকারী। চুলের গোড়া মজবুত করতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
• নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে এই চা বেশ কাজে আসে। তাই ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত হোয়াইট টি খেলে ডায়াবেটিস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• এই চা বেশি মাত্রায় ডোপামিন ক্ষরণ করে। সুখী হরমোন ক্ষরণে স্ট্রেস কমে মন শান্ত থাকে ও রাতে ভালো ঘুম হয়।
গ্রিন টি-র উপকারিতা: চা-গাছের সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি প্রস্তুত করা
হয়। এর রং হালকা হলদে সবুজ।
সাধারণ লিকার থেকে অনেকেই গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যেস রপ্ত করেছেন। একটা সময় ধরে নেওয়া হতো, গ্রিন টি খেলেই হু হু করে কমবে ওজন। যদিও তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, এই চা মেটাবলিজম বাড়ায়, ফলে বিপাক হার বাড়ে। এই চা ওজন কমাতে সাহায্য করে ঠিকই। তবে গ্রিন টি খেলেই ওজন কমবে, এটা ঠিক নয়। বরং ওজন কমাতে গেলে এই চা পানের সঙ্গে ওয়ার্কআউট ও ডায়েট প্রয়োজন। এই চায়ের আরও কিছু উপকারী দিক আছে।
• এতে রয়েছে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামের দু’টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে রোগ প্রতিরোধ করতে এই চা বিশেষ কার্যকর।
• এই চা-এ থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
• রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে গ্রিন টি।
• নিয়মিত এই চা খেলে দাঁতের ক্ষয়রোগের ঝুঁকি কমে।
• শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতেও এই চা সাহায্য করে।
ব্লু টি-এর উপকারিতা: সকালে উঠে চা খাওয়াকে অনেকে ‘স্বাস্থ্যপান’ বলেন। তার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে নীল চা বা ব্লু টি। সম্প্রতি এই চা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। অপরাজিতা ফুল কিংবা নীল জবার মিশ্রণ দিয়েই তৈরি হয় ব্লু টি। ঈষৎ টক স্বাদের এই চায়ের স্বাস্থ্যগুণ অনেক।
• নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হোয়াইট টি-র মতো ব্লু টি-ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
• এই চায়েও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
• ব্লু টি-তে অ্যান্টিথ্রম্বোটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে প্রতিহত করে এই চা।
• হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধিতে কাজে আসে।
• বড় মিল খাওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে এই চা খেলে বিপাকহার বাড়ে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই চা।
• নিয়মিত খেলে এই চা মস্তিষ্কের কোষে অ্যাসিটাইলকোলিনের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে উদ্বেগ কমে ও অবসাদ দূর হয়।