পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
চোখ বুজে ছাতার কথা ভাবলে মনে পড়ে লেখক তারাপদ রায়ের কথা। বাঙালির ছাতা ধার করার স্বভাব ও তা ফেরত না দিতে পারার ইচ্ছেকে ‘ছাতা’ গল্পে লিখে গিয়েছেন তারাপদ। প্রবল দরকারে ঘনশ্যামবাবুর কাছ থেকে মেঘনাদবাবু একটি ছাতা চেয়েছিলেন। ঘনশ্যামবাবুর চাকর সেটি চেয়ে এনে দিয়েছিলেন পাশের বাড়ি থেকে। ক্রমে জানা যায়, পাশের বাড়ির ব্যক্তিও সেই ছাতার মালিক নন। অফিসের বড়বাবু, তার ভায়রাভাই, হ্যানত্যান বহু হাত ঘুরে সে ছাতা পাশের বাড়ির ব্যক্তির কাছে আসে। এবার মেঘনাদবাবুর হাত থেকে সে ছাতা ঘোরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। কাজেই ছাতার প্রকৃত মালিক যে কে, তা ঠাওর হয় না। পাঠকও বুঝে যায়, এই ছাতা আর ফেরত আসার আর আশা নেই।
ছেলেবেলায় স্কুলে রুমাল ও টিফিনবাক্স আর বড় হলে রাস্তাঘাটে ছাতা— হারানোর জন্য এই কয়েকটি উপাদান বাঙালিজীবনে বেশ আলোচনার বিষয়। ছাতা হারায় বেশি, তাই কিনতেও হয় বারবার। বর্ষায় ছাতা হাতছাড়া করা যায় না মোটে। হিন্দুশাস্ত্রে মরণের পরেও ছাতার প্রয়োজন হয়। তাই শ্রাদ্ধে ছাতা দান করার রীতি আছে। তবে ছাতা শুধুই রোদ-জল থেকে রক্ষা করার জরুরি উপাদান হয়ে থেমে থাকেনি। বরং যুগের তালে তাল মিলিয়ে ফ্যাশনেরও অংশ হয়েও উঠেছে ছাতা ও বর্ষাতি। তাই এবার বর্ষায় কী ধরনের ছাতা ফ্যাশনে ইন? খোঁজ নেওয়া হল দেশের নামী দুই ছাতা প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে।
মহেন্দ্র দত্ত অ্যান্ড সন্স:
বর্ধমান রাজদরবারে পাখোয়াজ শিল্পী ছিলেন মহেন্দ্র দত্ত। রাজার প্রিয় কয়েকটা ছাতা একসময় নষ্ট হয়ে যায়। রাজার কয়েকটি ছাতা সারাই করে দেন যুবক মহেন্দ্র। পাখোয়াজশিল্পী হওয়ায় তাঁর কাছে ছিল পাখোয়াজের তার ঠিক করার প্লাস ও নানা টুকটাক যন্ত্র। তা দিয়েই শিক মেরামত করে ফেললেন তিনি। রাজা খুশি হয়ে কলকাতায় গিয়ে কারখানা বানিয়ে ছাতা তৈরি করার ব্যবস্থা করে দিলেন। সঙ্গে দিলেন আর্থিক পুরস্কারও। ১৮৮২ সালে কলকাতায় শুরু হল কারখানা। মহেন্দ্র দত্তর ‘ছত্রপতি’ হওয়া সেই শুরু। তারপর মহেন্দ্র দত্তর মৃত্যুর পর তাঁর ব্যক্তিত্বময়ী স্ত্রী রাধারানি দেবী এই ব্যবসা দাঁড় করান। উত্তরপুরুষদের হাত ধরে ক্রমে এই সংস্থার সুনাম বৃদ্ধি পায়।
প্রতি বছরই ছাতা ও রেনকোটে বিভিন্ন নকশার আমদানি করেন এঁরা। বর্তমান কর্ণধার কালীনাথ দত্ত জানালেন, ‘ছাতার ব্যবসায় ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন সংস্থা আমাদের। এখনও আমরাই সেরা উপকরণ দিয়ে ছাতা প্রস্তুত করি।’ এবার বর্ষায় ছাতার বিভাগে এখানে পাবেন ফাইভ ফোল্ড, থ্রি ফোল্ডের নানা ছাতা। সাধারণ নকশার ভালো মানের টু ফোল্ডের ছাতার দাম শুরু ১৯৯ টাকা থেকে। এছাড়া নকশা, কাপড়ের মান, শিক, বোতাম সবই বেশ উন্নত। ফাইভ ফোল্ডের ছাতার রেঞ্জ ঘোরাফেরা করে ৪৭৫-১২৯৫ টাকার মধ্যে। শাড়ির নকশা ছাতার কাপড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন এঁরা। ওরলি, মধুবনী, কলমকারি নানা নকশার ছাতা এখানে পাবেন। বিশেষ কিছু থিমের উপরেও মিলবে বিশেষ ছাতা। দাম শুরু ৫৫০ টাকা থেকে। এবার ফ্রিল দেওয়া ছাতা ফ্যাশনে ইন। সাদা-কালো ও রঙিন প্রিন্টেড ছাতার সঙ্গে ফ্রিল মিলবে। গলফ ছাতার দাম পড়বে ৩৩৫-১৪২৫ টাকার মধ্যে। তবে মহেন্দ্র দত্তর ছাতার ক্যারিশমা বুঝতে হলে দেখতে হবে প্রিমিয়াম রেঞ্জের কিছু ছাতা। এখানে ‘গ্র্যান্ডফাদার্স আমব্রেলা’ থেকে শুরু করে ব্লু টুথ দেওয়া ছাতাও পাবেন! প্রবল গরমে ছাতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পাখাও। শরীর ঠান্ডা রাখতে যার জুড়ি নেই। বিভিন্ন রাজকীয় হোল্ডার সহ বড় মাপের ছাতা পাবেন এখানে। রয়েছে কাপল ছাতাও। বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত কাপড় যোগ করা স্টাইলিশ ছাতাও পাবেন এখানে। গ্র্যান্ডফাদার্স আমব্রেলার দাম শুরু ২৮০ টাকা থেকে। ৮০০০ টাকার মূল্যের প্রিমিয়াম রেঞ্জের ছাতাও এখানে পাবেন। ছোটদের জন্য পাবেন নানা মজাদার থিমের ছাতা। বাঘ-সিংহ, কুকুর নানা পশুর থিমে ছাতা তো আছেই, সঙ্গে পাবেন এদের ডাকও! বর্ষাতিও পাবেন নানা নকশার। সাধারণ বর্ষাতি ছাড়াও কোট-প্যান্ট ও ওভারকোটের স্টাইলে বর্ষাতি আছে এখানে। শিশুদের বর্ষাতি শুরু ২৯০ টাকা থেকে। মহিলা ও পুরুষদের বর্ষাতির জন্য নিদেনপক্ষে বাজেট রাখুন যথাক্রমে ৩৭৫ টাকা ও ৬৫০ টাকা।
আদি কে সি পাল অ্যান্ড সন্স:
১৯৪০ সালে বড়বাজারে ছোট দোকান দিলেন গিরিশ পার্কের কার্তিকচরণ পাল ওরফে কে সি পাল। র্য মেটিরিয়াল কিনে সেখানে নিজের হাতে ছাতা তৈরি করতেন কার্তিকচরণ। পরে ১৯৬৫ সাল নাগাদ কলকাতায় রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিটে কারখানা শুরু করেন তিনি। কার্তিক মারা যান অকালেই। এরপর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র অনাথনাথ পাল। আজ যে আদি কে সি পাল অ্যান্ড সন্স-এর ছাতার এত খ্যাতি, তার সিংহভাগ কৃতিত্বের দাবিদার অনাথনাথ। বর্তমানে এই সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অঞ্জন পাল জানালেন, ‘ছাতার ব্যবসায় আদি কে সি পাল অ্যান্ড সন্স-এর নাম সর্বজনগ্রাহ্য। ভারতের অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড আমরা। আমার জেঠু অনাথনাথ সংস্থার পালে হাওয়া জুগিয়েছিলেন, আমরা পারিবারিক সেই পরম্পরা বজায় রাখতে চাই।’
ইদানীং সাধারণ মাপের ছাতা ছাড়াও একটু বড় মাপের ছাতার চাহিদা বেশি বলে জানালেন তিনি। তাঁর মতে, মহিলাদের বেলায় টু ফোল্ডের চেয়েও থ্রি ফোল্ড, ফাইভ ফোল্ড ছাতা বেশি বিকোয়। পুরুষরা টু ফোল্ডের ছাতায় ভালো মেটিরিয়াল খোঁজেন। টু ফোল্ডের ছাতার দাম পড়বে ২৭০ টাকা। থ্রি ফোল্ডের ছাতার দাম শুরু ৩২০ টাকা থেকে। ফাইভ ফোল্ডের ছাতার দাম শুরু ৫৫০ টাকা থেকে। ফ্রিল যুক্ত ছাতা পাবেন এখানেও, দাম শুরু ৩৩০ টাকা থেকে। ‘মহারানি’, ‘মহারাজ’, ‘তিতলি’ ‘ফ্লোরা’, ‘ডিভা’ ইত্যাদি নামে ছাতা পাবেন এখানে। একরঙা কুঁচি দেওয়া ছাতা পাবেন তিতলি সেকশনে, প্রিন্টেড কুঁচি পাবেন ফ্লোরা-য়। ফাইভ ফোল্ডের ছাতা পাবেন ‘স্যাফ্রন’ ও ‘স্পেন’ নামে। মজার মজার অ্যানিম্যাল থিম মিলবে কিডস সেকশনে। আকর্ষণীয় বর্ষাতিও পাবেন এখানে। আর পাঁচটা সাধারণ বর্ষাতির সঙ্গে এবারের নতুন আমদানি ‘বেবি’ বর্ষাতি। লং কোট ও প্যান্ট শার্ট— দু’ধরনের সেটেই এই বর্ষাতি পাবেন। এটির দাম পড়বে ৯০০ টাকার কাছাকাছি।