পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
ঘরের মেঝেয় বসে শিশু খেলছে। মেঝেয় কখনও উপুড় হয়ে দেয়ালা করছে, কখনও বা দু’হাতের তালু মেঝেতে রেখে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। উঠে দাঁড়িয়েই সেই হাত মুখে পুরে দিল। তারপর মায়ের দুশ্চিন্তা শুরু। শেষে চিকিৎসক নিদান দিচ্ছেন, এমন কিছু দিয়ে মেঝে মুছতে, যাতে জীবাণু শিশুর শরীর ছুঁতে না পারে।
বিখ্যাত এক কীটনাশক সংস্থার এই বিজ্ঞাপনে মেঝে পরিষ্কার রাখার এই দাওয়াইতে উঠে এসেছিল যত্ন করে ঘর মোছার কথা। ঘরগেরস্থালিতে পরিচ্ছন্ন রাখতে মোছামুছির দিকে খেয়াল রাখতে হয় বাড়ির গৃহিণীদের। আষাঢ়ের ঘরে পৌঁছে গিয়েছে ক্যালেন্ডার। আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমে আসার এই মরশুমে বাড়ির গৃহিণীকে চিন্তায় রাখে এই মোছামুছির দিকটি। বাতাসে আর্দ্রতার ভাগ বেড়ে যাওয়ায় আসবাব থেকে শুরু করে মেঝে, দেওয়াল সব কিছুটা স্যাঁতসেঁতে থাকে। ফলে ছত্রাকের আক্রমণ বাড়ে। মেঝেয় তৈরি হয় কালো দাগ। দেওয়ালেও ছাপ পড়ে বাতাসের আর্দ্রতার। তাই বর্ষায় মোছামুছি করার আগে খেয়াল রাখুন কয়েকটা বিষয়। মেঝে থেকে দেওয়াল, আসবাব থেকে সিঙ্ক-বেসিন— পরিষ্কার রাখার কিছু বাড়তি নিয়ম এই সময় মেনে চলতে হয়।
মেঝের নিয়ম
• প্রতিদিন নিয়ম করে দু’বেলা হালকা কোনও কীটনাশক যোগ করে ঘরের মেঝে মুছে নিন। একাধিকবার জল পাল্টে নিয়ে ঘর মুছলে তা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।
• মার্বেল বা মোজাইকের মেঝে হলে বর্ষায় কালো দাগছোপ তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। মেঝে সহজে শুকোতেও চায় না। তাই এই সময় মেঝে জল-জল করে মুছবেন না। অল্প জলে মুছুন। মোছার পর আর একটা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এতে জল তাড়াতাড়ি শুকাবে।
• মেঝে মোছার জন্য সুতির কাপড় ব্যবহার করুন। মপিং স্টিকেও যেন সুতির ন্যাতা দেওয়া থাকে, তা দেখে কিনুন।
• কালো দাগ তৈরি হলে ঘর মোছার জলে সামান্য ভিনিগার দিন। সেই জল দিয়ে ঘর মুছুন। ধীরে ধীরে কালো দাগ উঠে যাবে।
• ঘরে পোকামাকড়ের উপদ্রব বর্ষায় আর এক সমস্যা। এর হাত থেকে বাঁচতে নিমপাতা ফোটানো জল দিয়ে মেঝে মুছে নিতে পারেন।
• মার্বেলের মেঝের দাগ তোলার জন্য তারপিন তেল ও নুন খুব ভালো কাজ করে। গ্রীষ্ম-বর্ষা নির্বিশেষ খাবারের দাগ তুলতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
আসবাবের খেয়াল
পালিশ করা কাঠের আসবাবেও বর্ষায় খাবার, ফলের রস বা জলের দাগ ধরে সহজে। আবার কাঠের আসবাব ঘন ঘন জল দিয়ে মোছাও যায় না। এতে কাঠ পচে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই কাঠের আসবাবের যত্নে সারা বছরই কিছু নিয়ম মেনে চলুন। বর্ষায় এই পদ্ধতিগুলো আরও বেশি কাজে আসে।
• কাঠের আসবাবে ধুলো জমতে দেবেন না। নিয়মিত শুকনো সুতির কাপড় দিয়ে তা ভালো করে মুছে নিন।
• কোনও কড়া দাগ তুলতে একান্তই জলের ব্যবহার করতে হলে জল নিংড়ে আর্দ্র সুতির কাপড় দিয়ে আসবাব মুছুন।
• কাঠের আসবাবে জল লাগলে তার দাগ তোলা বেশ ঝক্কির কাজ। দাগ লাগা অংশে গুঁড়ো টুথ পাউডার লাগিয়ে নিন। তারপর তা নরম কোনও কাপড়ের মাধ্যমে ঝেড়ে নিন। মিনিট ১৫ পরে সুতির আর্দ্র কাপড় নিয়ে জায়গাটা ঘষলে জলের দাগ হালকা হবে। দিন তিনেক এমন করলে দাগ চলে যাবে।
বেসিন ও সিঙ্কের যত্ন
ঘরদোরের সাজ সম্পূর্ণ হলেও অনেক সময়ই মোছামুছির তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় সিঙ্ক ও বেসিন। প্রতিদিন ব্যবহারের কারণে মরচে ও সেডিমেন্ট পড়ে সিঙ্ক ও বেসিনের অবস্থা হয়ে পড়ে তথৈবচ। এগুলো মোছামুছি করার সময় কিছু বাড়তি কৌশল অবলম্বন করুন।
• জলে থাকা খনিজ পদার্থ বেসিনের কলের মুখে জমে কলের মুখকে অবরুদ্ধ করে তোলে। তাই জলের ধারা ক্ষীণ হতে শুরু করে। এমন সমস্যায় পড়লে ভিনিগার ও নুন মিশিয়ে কলের মুখে মাখিয়ে রাখুন সারারাত। পরের দিন শুকনো কাপড়ে মুছে নিন কলের মুখ। কলের মুখের অবরোধ সরে জলের গতিধারা বাড়বে।
• সিঙ্কে সাদা বা লালচে দাগ তৈরি হয় জল থেকে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে জলে আয়রনের ভাগ বেশি, সেইসব অঞ্চলে এই দাগ বেশি তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে লেবুর রস ও
বেকিং সোডা একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণ সিঙ্কে মাখিয়ে রেখে দিন কয়েক ঘণ্টা। তার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সিঙ্ক থেকে জলের দাগ চলে যাবে।
দেওয়াল মোছার কৌশল
ঝকঝকে ঘরে নোংরা দেওয়াল! দেখতেও যেমন খারাপ লাগে, তেমনই গৃহস্থের রুচি নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেয়। এদিকে বাড়িতে খুদে সদস্য থাকলে দেওয়ালে তাদের আঁকিবুঁকি, কালির দাগ ও হাতের ছাপে দেওয়াল নোংরা হয়। সেক্ষেত্রে মেনে চলুন কিছু টিপস।
• খুব কড়া দাগ না হলে স্পঞ্জে টুথপেস্ট বা বাসন মাজার সাবান লাগিয়ে দাগ লাগা জায়গায় ঘষে দিন। হালকা দাগ হলে এতেই উঠে যাবে।
• দেওয়ালের গা থেকে বলপেনের কালির দাগ তুলতে হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
• দেওয়ালে কলমের কালির দাগ লাগলে নেলপলিশ রিমুভারের সাহায্যে তা তুলে ফেলতে পারেন। রিমুভারে রয়েছে ইথাইল অ্যাসিটেট এবং আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল। এই দুই উপাদান কালির দাগ তুলতে পারে।