এ বিশ্বকে সকলের বাসযোগ্য করে তোলার স্বপ্ন দেখেন চন্দননগরের দেবাঞ্জলি রায়। তাই সামাজিক কিছু বার্তা সঙ্গে নিয়ে মাঝেমধ্যেই বসে পড়েন গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে। চষে বেড়ান পৃথিবীর নানা প্রান্ত। প্রত্যন্ত মানস সরোবরও বাদ যায় না! সফরের খুঁটিনাটি জানাচ্ছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।
সেটা ছিল ২০০৭ সাল। দিল্লি শহরের এক অঞ্চলে মেট্রোর জন্য সুরঙ্গ খোঁড়া হবে। শ্রমিক আর ইঞ্জিনিয়ার মিলিয়ে তা প্রায় একশোজনের সমাবেশ হয়েছে সেখানে। তারই মধ্যে একজনকে দেখে রীতিমতো চমক লেগেছিল সুরঙ্গকর্মীদের। কারণ সুরঙ্গ খোঁড়ার কাজে নিযুক্ত সেই ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন মহিলা। তিনি অ্যানি সিংহ রায়।
দেশের সর্বোচ্চ পুলিশ সার্ভিসে যে মহিলার নাম সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনি অবশ্যই কিরণ বেদী। মেয়েরা সেখানেই থেমে নেই। কিরণ বেদীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মনিকা ভরদ্বাজ দ্বিতীয় মহিলা, যিনি ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। হরিয়ানার এই কন্যাটি ছোট থেকেই পুলিশি আবহাওয়ায় বড় হয়ে উঠেছেন।
কন্যাসন্তানের গুরুত্ব ক্রমশ উপলব্ধি করছে আমাদের সমাজ। বিশ্বের সব দেশের মতোই আমাদের দেশেও এখন প্রতি বছর ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক শিশুকন্যা দিবস পালিত হয়। আর এই বছর সেই দিনে নতুন ধরনের পদক্ষেপ করতে চলেছে কাশ্মীরের সরকার।
সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
নারী উন্নয়নের কাজে অক্লান্ত
পরিশ্রম সুনীতা কৃষ্ণনের
অনেকটা নিজের তাগিদেই কাজটা শুরু করেছিলেন সুনীতা কৃষ্ণন। ক্রমশ কাজের পরিধি বাড়িয়ে তিনি এখন অনেক মহিলার আশ্রয় হয়ে উঠেছেন। তাঁর কর্মকাণ্ডের নাম ‘প্রজ্বলা’ অর্থাৎ যে আলো কখনও নেভে না। শত বাধা এলেও নিজের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন সুনীতা। ধর্ষিত মেয়েদের আশ্রয় দেওয়া, মেয়ে পাচার বন্ধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। অতি অল্প বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন নিজেও। সেই সময় সামাজিক সমর্থন একেবারেই পাননি। ‘ধর্ষিতা’-কে সমাজ কী চোখে দেখে, তা প্রতিপদে উপলব্ধি করেছেন এবং সেই কারণেই এমন মেয়েদের জন্য আশ্রয়ের দরজা খুলে দিয়েছেন। প্রথম দিকে প্রজ্বলা চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে সুনীতাকে। এতগুলো মেয়ের আশ্রয় কীভাবে জোগাড় করবেন তা ভেবে কূল পেতেন না। ফাইন্যান্সার জোগাড় হতো না। কেউ মানতেই চাইত না মেয়েদের দুর্দশা ঘোচাতে অর্থের দরকার হয়! তবু নিজের প্রচেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেননি সুনীতা কৃষ্ণন। তিনি বলেন, একমাত্র একজন মহিলাই পারেন মেয়েদের সঠিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে। আর তাই সেই কাজেই নিজেকে সমর্পণ করেছেন তিনি। তবে ক্রমশ সমাজও দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদলাচ্ছে বলে জানালেন সুনীতা। তাঁর কথায়, সমাজও বুঝতে শিখেছে মেয়েদের মূল্য। তাই ক্রমে সমাজের একটা স্তরে হয়তো লিঙ্গবৈষম্য খানিকটা হলেও কমেছে। কিন্তু মেয়েদের দুর্দশা কাটেনি। নারীস্বাধীনতার গায়ে লাগানো বড় প্রশ্নচিহ্নটা মুছে যায়নি। তাই তো নারী উন্নয়নের জন্য আজও পরিশ্রম করতে হয়। সুনীতার প্রজ্বলা দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্য থেকে কাজ শুরু করেছিল। এখন তা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। নারীপাচার রুখে মেয়েদের উদ্ধার করার কাজে প্রজ্বলা টিম বহুবার পুলিসকেও সহায়তা করেছে। শুধু নারীপাচার রোধ নয়, মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার কাজেও অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করছে প্রজ্বলা। তারা ভারতে মোট ১৮টি স্কুল চালায়। এবং সেইসব স্কুলে প্রায় ৬ হাজার ছাত্রী পড়ে। সুনীতার এই কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে সিএনএন-আইবিএন ‘রিয়্যাল হিরো’ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে। আর ভারত সরকারের তরফে তিনি পেয়েছে স্ত্রী শক্তি পুরস্কার। প্রতিটি পুরস্কারই তাঁকে আরও বেশি মাত্রায় কর্মদ্যোগী করে তোলে বলে জানান সুনীতা। তাঁর কথায়, ‘একদিন আসবে যখন নারীপাচার বন্ধ হবে, মেয়েদের ওপর অত্যাচার হবে না। সেই দিনটির অপেক্ষাতেই আমার প্রহর গোনা।’
ভিক্ষে করেও পথশিশুদের দেখভাল করেন সিন্ধুতাই সপকল
রাস্তায় ভিক্ষে করতেন সিন্ধুতাই সপকল। আর সেই টাকা দিয়ে তিনি পথশিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। এমনকী বহু অনাথ শিশুও সিন্ধুতাইয়ের আশ্রয়ে থেকেছে বহুসময়। আশ্চর্য, তাদের সবাইকে দেখভাল করেন যিনি তিনি নিজেও দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করেন! মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা অঞ্চলে বাস করতেন সিন্ধুতাই। পথশিশুরা আদর করে তাঁকে ডাকত ‘চিন্ডি’। মারাঠি ভাষায় চিন্ডি নামের মানে ‘ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো’। সিন্ধুতাইয়ের নিজের অবস্থা দেখে তাঁর এমন নাম দিয়েছিল পথশিশুরা। নিজের অন্ন সংস্থান হল কি না হল, সিন্ধুতাই আগে অন্যের খাবার জোগাড়ের চেষ্টা করতেন। প্রয়োজনে অন্যকে সাহায্য করার এই ইচ্ছেটা সিন্ধুতাইয়ের বিয়ের পর থেকে হয়েছিল। মায়ের অনিচ্ছায় পড়াশোনা এগয়নি সিন্ধুতাইয়ের। ক্লাস ফোর পাশ করেই দশ বছরে তাঁর বিয়ে হয় একটি তিরিশ বছরের লোকের সঙ্গে। বাড়িতে নিগ্রহ শুরু হয় সেই কচি বয়সেই। আর তখন থেকেই তিনি ঠিক করেন, নিজে যে কষ্ট করেছেন, অন্যকে তা করতে দেবেন না। মানুষের প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়াবেন। আর সেটাই তিনি করে চলেছেন এখনও। প্রায় ১২০০ জন বাচ্চার পালক মা তিনি। তাদের সব আবদার মেটানোর চেষ্টা করেন। সব বায়না সামলান। আর সেই বায়না সামলাতে গিয়ে বহুবার ভিক্ষা করে টাকা জোগাড় করতে হয়েছে তাঁকে। এইসব পথশিশুর পড়াশোনার ভারও নেন সিন্ধুতাই। তাঁর পালিত কন্যারা অনেকেই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। এখন তারাও সিন্ধুতাইয়ের কাজে সাহায্য করে। অর্থাভাব অনেকটাই কমেছে সিন্ধুতাইয়ের। অনেকে আবার সিন্ধুতাইয়ের আদর্শে নিজেও অনাথ আশ্রম খুলে ফেলেছেন। তাঁর এই কাজের স্বীকৃতিও এসেছে বহু ক্ষেত্র থেকে। জাতীয় স্তরে তো বটেই, এমনকী আন্তর্জাতিক স্তরেও পুরস্কৃত হয়েছেন সিন্ধুতাই। আজ ৭৩ বছর বয়সেও পথশিশু ও অনাথ বাচ্চাদের নিজের হোমে রাখেন তিনি। তাদের মানুষের মতো মানুষ করে তোলাই তাঁর বাঁচার রসদ।
ডাকটিকিট উপহার দিয়ে শিশুদের মুখে হাসি ফোটালেন অভিনেত্রী সঙ্গীতা সিনহা
সবাই যখন প্রিয় মানুষকে নানা দামি উপহার দেন, তখন সঙ্গীতা সিংহ তাঁর ছোট্ট বন্ধুদের উপহার দিলেন ডাকটিকিট! এক সময় নানারকম হবির মধ্যে ডাকটিকিট সংগ্রহ যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। পরবর্তী প্রজন্ম মোবাইল ফোনে গেমস খেলা, বিভিন্ন সোশ্যাল কমিউনিটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আমাদের সেই চেনা শৈশব হারিয়ে গিয়েছে। হবি জিনিসটা ঠিক কী? সেটা যে শুধুই শখের নয়, কিছুটা জ্ঞানেরও, এই প্রজন্মের স্কুলপড়ুয়া অনেকেই তা জানে না। ডাকটিকিট উপহার দেওয়ার মাধ্যমে সেই জ্ঞানই ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সঙ্গীতা। এমনিতে জনপ্রিয় মডেল তিনি। আবার তাঁর অভিনীত ‘রিকশাওয়ালা’ ছবিটিও মুক্তি পেতে চলেছে কিছু দিনের মধ্যেই। পাশাপাশি বর্ধমান শহরে তাঁর লিটল এঞ্জেল নামে প্রি-স্কুলও রয়েছে একটি। সম্প্রতি কলকাতার স্নেহা হোমের বাচ্চাদের স্ট্যাম্প উপহার দিয়ে দেশি বিদেশি স্ট্যাম্পের সঙ্গে পরিচয় তো করালেনই, পাশাপাশি তাদের হবি বিষয়েও বোঝালেন সঙ্গীতা। সার্বিক শিক্ষা যে শুধু বই পড়ে হয় না, তা মানেন তিনি। সেই কারণেই বাচ্চাদের মনে ডাকটিকিট সংগ্রহ নিয়ে আগ্রহ বাড়াতে চান। ডাকটিকিট সংগ্রহ করার মাধ্যমে নানা দেশ সম্পর্কে জানা যায়। আর সেইভাবে বাচ্চাদের সার্বিক বিকাশও হয় বলে মনে করেন সঙ্গীতা। সঙ্গীতা বলেন, ‘লিটল এঞ্জেল-এ ভালো পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাদের সার্বিক উন্নতির দিকটাও দেখা হয়।’ কলকাতায় স্নেহার বাচ্চারা হাতে ডাকটিকিট পেয়ে খুবই খুশি। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এটি তাদের কাছে এক অনন্য উপহারই বটে।
