সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
হাওড়া জেলার তেলিপাড়া গ্রামের সাহানারা সর্দারের সংসার চালানো কঠিন হয়ে উঠেছিল। স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে জীবনযাপন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নাজেহাল হতে হচ্ছিল তাঁকে। তখন ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে পোশাক তৈরির ব্যবসা শুরু করেন তিনি এবং তা হোলসেল মার্কেটে বিক্রি করতে আরম্ভ করেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরেও কয়েক দফায় ক্ষুদ্র ঋণ নেন। এর ফলে সাহানারার ব্যবসা বেড়েছে এবং তিনি এখন স্বাবলম্বী। সাহানারার মতো মহিলাদের ছোটখাট ব্যবসাগুলোকে উন্নত করার জন্য টাকা ও ঋণ দিয়ে সাহায্য করছে ‘ভিলেজ ফিনানসিয়াল সার্ভিস’ (ভিএফএস)-এর মতো ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী সংস্থা। লকডাউনের পর রোজগারহীন হয়ে পড়েছিল বহু সংসার। সেই সময় বাড়ির মহিলাদের ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে নিজস্ব ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে ভিএসএফ। শুধু ঋণ দেওয়াই নয়, ঋণের টাকা কীভাবে কাজে লাগালে ব্যবসা বাড়বে এবং ঋণও পরিশোধ করা সহজ হবে, সেই পরামর্শও দিচ্ছে এই সংস্থা।
সাহানারার মতো ঋণ নিয়ে নিজের সংসারে সচ্ছলতা এনেছিলেন সাবেরা বেগম (৪০)। লকডাউন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য নিজস্ব কিছু করার ভাবনা তাঁর মাথায় ঘুরছিল। অনেক ভাবনাচিন্তার পর বাচ্চাদের জামাকাপড় বানানোর ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করেন। তারপর ভিএফএস-এর থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
একইভাবে নারী ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মহিলাদের নিয়ে কাজ করছে বন্ধন ব্যাঙ্ক। তাঁদের দৈনন্দিন রোজগারের একটা পথ তৈরি করে দেওয়াই এই সংস্থার উদ্দেশ্য। মূলধন হিসেবে তাঁদের কোনও দোকান শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল জাতীয় গৃহপালিত পশুপাখি কিনে দেওয়া হয়। তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও দেওয়া হয় যাতে ব্যবসা করে তাঁরা উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন। এখনও অবধি দেশের ১,১৮,১২১ জন মহিলা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন ও সমাজের মূল স্রোতে ফিরেছেন। এঁদের মধ্যে ৫৪ হাজারই পশ্চিমবঙ্গের।
এছাড়াও তাদের স্বাস্থ্য প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও সচেতনতা সংক্রান্ত কাজও করছে বন্ধন ব্যাঙ্ক। গর্ভবতী মহিলা, সদ্য মা হওয়া মহিলা ও শিশুকন্যাদের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয় তাতে। গ্রামেরই উৎসাহী মহিলাদের বেছে নিয়ে তাঁদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দিয়ে স্বাস্থ্য সহায়িকা হিসেবে কাজে নিযুক্ত করা হয়। তাঁরা নিয়মিত গ্রামের মেয়েদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিক্ষা
দেন। তাছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ও পুষ্টিগত দিকগুলিও খেয়াল রাখেন। প্রয়োজনে বিনামূল্যে ওষুধও দেন। এখনও অবধি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত।
মহিলাদের উন্নতি না হলে সমাজের উন্নতি অসম্ভব।— আশার কথা এই যে আমাদের সমাজ ক্রমশ সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া দরকার। তা না হলে দেশের উন্নতি কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এবং দেখা গিয়েছে যে মেয়েদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সংসারে অনেক বেশি সচ্ছলতা আনা সম্ভব। উন্নত নারী গড়ে তুলতে পারেন উন্নত সমাজ। সেদিকেই যেন দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি আমরা।