সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
ওদের পথচলা শুরু ১৯৯৯ সালে। মুচিবাজার এলাকার মুরারিপুকুর লেনে একটি সংস্থার পরিচালনায় বাচ্চাদের নাচের ক্লাস হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বাচ্চারা বেশ মুষড়ে পড়েছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রয়াসমের কাছে সে খবর পৌঁছয়। সংস্থার সদস্যরা ঠিক করেন, তাঁরাই ওদের নাচ শেখাবেন। ক্লাইভ হাউসের আস্তাবল, যেখানে প্রায় হাজার লোক একসঙ্গে বসে খেতে পারে, সেখানেই ব্যবস্থা হল। পাশের এলাকা অর্জুনপুর, দক্ষিণদাঁড়ি, বাসন্তী কলোনি, এন্টালি ও মুরারিপুকুরের ৬০ জন বাচ্চাকে নিয়ে শুরু হল নাচ শেখানো। কিন্তু প্রথমদিন যখন তাদের নাচতে বলা হয়, একটি মেয়ে উঠে ঊর্মিলা মার্তন্ডকরের ‘মস্ত’ ছবির গানে নেচে দেখায়। সদস্যরা দেখেন, কিছু সস্তা অঙ্গভঙ্গি ছাড়া তাতে কিছু নেই। তখন প্রশিক্ষণের শুরু ওই গানটি দিয়েই। সদস্যদের তরফে মিলি রায় জানালেন, বারবার সেই গান শোনানো, হিন্দি শব্দের মানে বোঝানো, তাল ঠিকমতো ধরা ইত্যাদি বোঝানো হয়। যে কোনও নাচ ঠিকঠাক করতে গেলে প্রচুর অনুশীলন দরকার। এইভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে উঠল ‘আহ্লাদী’ গোষ্ঠী। কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণী— এখন এই দলে একঝাঁক আগ্রহী মুখ।
আহ্লাদীদের নাচের প্রধান উদ্দেশ্য, নিজের শরীর ও মনকে চেনা ও বোঝা। তার মাধ্যমে নিজের জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে চায় ওরা। অধিকাংশ মেয়েকেই ছোট থেকে নিজের পরিবারে, স্কুলে বা পাড়ায় দমনপীড়নের শিকার হতে হয়। তাদের কথা শোনার বা শোনানোর কোনও প্ল্যাটফর্ম নেই। নাচের মাধ্যমে আহ্লাদীরা তাদের জীবনের কথা, ইচ্ছে-অনিচ্ছের কথা তুলে ধরতে চেয়েছিল। নাচ তাদের চেপে রাখা রাগ, অভিমান ব্যক্ত করার একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছিল। একেই ‘কোপ মেকানিজম’ বলে। অর্থাৎ যে দেহের জন্য কেউ অপমানিত হয়েছে, না-বলা কথাগুলো প্রকাশ করার জন্য বারবার সেই দেহকেই ব্যবহার করা। আগেও আহ্লাদী এই থিমনির্ভর বেশ কিছু কাজ করেছে। তাদের প্রথম কাজ ‘ইন্তেজার’-এর বিষয় ছিল কোনও নারী এমন এক মানুষকে খুঁজছে, যে স্বামী না হয়ে তার সঙ্গী হবে। ‘ইন্তেজার’ ১২৫বার মঞ্চস্থ হয়েছে। যার ৯৯ শতাংশই ছিল আমন্ত্রণমূলক। শো থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে আহ্লাদীরা তাদের পড়াশোনার খরচ মেটাত।
আহ্লাদীরা ইতিমধ্যে ‘অ্যাডোব’-এর সহায়তায় সান ফ্রািন্সসকোর ডেস্টিনি আর্ট সেন্টার, টেক্সাসের সে সি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তৈরি করেছে ‘ঋতু’ ও ‘রামকাহণ’-এর মতো লিঙ্গসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রোডাকশন। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন অবস্থাকে প্রাকৃতিক ঋতুচক্রের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হয়েছে ‘ঋতু’। রামকাহণ’-এ রয়েছে রাবণ-জায়া মন্দোদরীর চোখে রামায়ণ দর্শন। মার্কিন দর্শকদের কাছেও যা সমাদর পায়।
আগামী ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারীদিবসে তারা মঞ্চস্থ করতে চলেছে ‘পক্ষীমেয়ে’, যা প্রশ্ন তোলে ধর্ষণ নিয়ে। বলা ভালো, ধর্ষণের সংস্কৃতি নিয়ে। একজন ‘ধর্ষিতার’ জীবনে কীরকম প্রভাব পড়ে? ধর্ষণের পর বেঁচে থাকলে এখনও শুধু ‘ধর্ষিতা’ বিশেষণ দিয়েই তাঁর পরিচিতি তৈরি করে দেওয়া হয়। একটি ঘটনার অভিঘাতে তাঁর জীবন বদলে যায়, অথচ দায়টা চেপে বসে তাঁর ঘাড়েই। নিক্তিতে তখন মাপা হয় মেয়েদের পোশাক, তাঁর বাইরে বেরোনোর ‘স্পর্ধা’, তাঁর পুরুষবন্ধুর সংখ্যা! এই সব নিয়ে এত প্রশ্ন ওঠে যে সংশ্লিষ্ট মেয়েটিও বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তিনিই দায়ী সব কিছুর জন্য।
আহ্লাদীদের দশম প্রযোজনা ‘পক্ষীমেয়ে’র অনুপ্রেরণা এসেছে একটি গল্প থেকে। ইহুদি ঐতিহ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত দানবী হল লিলিথ। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী লিলিথ ছিল দারুণ সুন্দরী, আদমের চেয়েও তার রূপ ছিল বেশি। সে পুরুষের বশ্যতা না মেনে বিদ্রোহ করেছিল। তাতে অভিশপ্ত হয় লিলিথ। সে-ই আদি মানবী, যাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল ইভেরও আগে। ঈশ্বর নামে এক পুরুষের নির্দেশে নবজাতকদের নাকি চুরি করত লিলিথ। লিলিথ শব্দটির অর্থ রাত্রি। ক্রমশ অন্ধকার, ভয়, যৌনতা এবং অবাধ স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠে সে। আধুনিক যুগে এই চরিত্রটি নারীবাদী গবেষণাতেও উঠে এসেছে। যেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘ধর্মীয় পুরুষতন্ত্র’ নিয়ে। বিভিন্ন সমাজ কেন শুধু ‘ধর্মীয় পুরুষতন্ত্র’ অনুসরণ করেছে? কেন অনেক ক্ষেত্রেই নারীকে ডাইনি-পিশাচিনী-অশুভ-অপয়া ভাবা হয়েছে? তার অনেক উত্তর লুকিয়ে আছে ধর্মীয় মিথে। যার প্রতিফলন ঘটেছে ‘পক্ষীমেয়ে’-তে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দমনপীড়ন ঠেলে নারীর সেই জয়গাথার কথা বলবে আহ্লাদীরা, নারীদিবসেই। ছবি: প্রয়াসমের সৌজন্যে