ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
নতুনের কেতন
প্রতিবারের মত এবারও নতুনের কেতন উড়িয়ে শুরু হয়েছিল ল্যাকমের ফ্যাশনের মহোৎসব। আইএনআইএফডি আয়োজিত এই শো-তে ছিলেন ছয় নবীন ডিজাইনার। সাহিব ভাটিয়া, গৌরব সিং, অঙ্কিতা শ্রীবাস্তব, আকাঙ্ক্ষা আগরওয়াল, মঞ্জুশ্রী সাইকিয়া ও স্ট্যানজিন পালমো। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে নজর কাড়েন লাদাখের স্ট্যানজিন এবং অসমের মঞ্জুশ্রী। স্ট্যানজিন পালমো তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে লাদাখের পশমিনা, উল, সিল্ক, সুতি, লিনেন, রেয়ন তুলে ধরেন।
তিনি লাদাখি সাবেকি পোশাক ‘গোঞ্চা’-র সঙ্গে পরিচয় করান। অসমের শিল্পকে তুলে ধরেন মঞ্জুশ্রী সাইকিয়া। তাঁর ‘উরা মাকু’ মধ্যে ছিল এরি, মুগা সিল্ক, অরগ্যানিক সুতি, এবং চান্দেরির মিডি র্যাপ স্কার্ট, কোট-ড্রেস।
সুতির ইতিকথা
প্রতিবারের মতো এবারও ল্যাকমের দ্বিতীয় দিনে পালন করা হয় ‘সাস্টেনেবল ফ্যাশন ডে’। তাই ঝাঁ চকচকে ল্যাকমের মঞ্চে ট্রেন্ডি ফ্যাশনের সঙ্গে গ্রামীণ শিল্পকলা কোথাও মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। খাদি ইন্ডিয়া এই মঞ্চে নিয়ে আসে তিন সেরা ডিজাইনার, অনুজ ভুটানি, পল্লবী ধ্যানি, এবং গৌরব খানিজোকে। অনুজের আয়োজনে ছিল আরামদায়ক সালোয়ার, কামিজ, দোপাট্টা, নানান ধরনের কুর্তি, বাহারি ধুতি, শাড়ি, পাগড়ি এবং স্কার্ফ। গৌরবের পরিবেশনে সবথেকে নজর কাড়ে খাদির কম্বল ‘খেস’। পল্লবী পুরুষদের নিরাশ করেননি। এবারও ল্যাকমের আসরে নজর কাড়ে স্টেফ্যানো ফুনারি এবং পুর্ণিমা পান্ডের ‘আই ওয়াজ অা শাড়ি’। পুরনো শাড়ি দিয়ে স্টেফ্যানো এবং পূর্ণিমা স্টাইলিশ পোশাক, জুতো, ব্যাগ,পাগড়িসহ নানান জিনিস বানিয়েছেন। অল্কা শর্মা তাঁর সৃষ্টির রঙ হিসাবে বেছে নেন চা পাতা, হলুদ, ফুল সহ প্রকৃতির নানান রঙ। এই ডিজাইনার মেওয়াড় শিল্পকলা ‘ডাবু’-কে তুলে ধরেছিলেন।
বিয়ের সাজ
এবারের ল্যাকমের মঞ্চে নামজাদা ডিজাইনাররা হাজির করেছিলেন বিয়ের সাজের নতুন কথা। গৌরাঙ্গ শাহ, অর্পিতা মেহেতা,অনুশ্রী রেড্ডি, জয়ন্তী রেড্ডি সহ আরো অনেক ডিজাইনারের ডিজাইন করা শাড়ি, লেহেংগা-চোলি-তে ঝলমলিয়ে উঠেছিল ল্যাকমের আসর। মুগ্ধ করে গৌরাঙ্গ শাহের অভিনব আয়োজন। তাঁর ‘পেশওয়াই’ কালেকশনে ছিল শাড়ি, লেহেঙ্গার বৈচিত্র্য। জয়ন্তী রেড্ডির আয়োজনে ছিল র-সিল্ক, বেনারসি, শীর অরগেঞ্জা, এবং নেট দিয়ে আনারকলি, লেহেঙ্গা-চোলি, লম্বা ঝুলের কুর্তা, ধোতি সহ বিয়ের অনুষ্ঠানের পোশাকের নানান বাহার। অরগ্যাঞ্জা, সিল্ক, র-সিল্কের উজ্জ্বল লাল, শ্যাম্পেন গোল্ড, পিঙ্ক রঙের লেহেঙ্গা-চোলি ছিল তাঁর সম্ভারে। ডিজাইনার অর্পিতা মেহেতা বিয়ের মেহেন্দি, সঙ্গীত, মালা বদল সব অনুষ্ঠানের পোশাকের বাহার হাজির করেছিলেন তাঁর প্রদর্শনে। হাল্কা রঙের পোশাকেও যে কনে হয়ে উঠতে পারেন অপরূপা তা তিনি আবারও প্রমাণ করলেন। ডিজাইনার ঋধি মেহেরা উৎসবের পোশাকের প্রথাগত চিন্তাভাবনা ভাঙলেন।
শীতের বেড়ানো
সফরপ্রেমীদের জন্য ল্যাকমে সন্ধান দিল নানান পোশাকের বাহার। ‘যাযাবর’-এর বাঙালি ডিজাইনার নীলাঞ্জন ঘোষ এবং কানিকা সচদেব তাঁদের আয়োজনে রেখেছিলেন মধ্যবিত্তের সফরকালীন পোশাকের রকমারি। তাঁদের ‘চায়ে অ্যাট মুঘলসরাই জংশন’ কালেকশনে উঠে আসে নানান জীবজন্তু, কিছু ব্যস্ত স্টেশনের নাম, তাজমহল, জগন্নাথ, মীনাক্ষী মন্দির, কারিগর, মিনিয়েচার, আর্কাই, সহ আরও অনেক কিছু। খাদি, সিল্ক চান্দেরি, অরগ্যাঞ্জা, জামদানি, তসর, জর্জেট, চান্দেরির উপর বেনারসি তাঁতের নানান ধরনের জ্যাকেট, টিউনিক, লেয়ার স্কার্ট, কিমানো, লেয়ার শাড়ি ছিল তাঁদের পরিবেশনে। জনপ্রিয় ডিজাইনার রীতু কুমার এবার ল্যাকমের মঞ্চে নিয়ে আসেন সফরকালীন হাল্কা অথচ ট্রেন্ডি পোশাক। মহিলা ঘোড়সওয়ারির জন্য নতুন ধারার পোশাক এনে তিনি সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। রীতু কুমারের শো-এর শো-স্টপার ছিলেন বলিউডের নবাগতা সুন্দরী তারা সুতারিয়া।
পাঁচমেশালি
সলিতা নন্দা পোশাকের গায়ে রঙ তুলির আঁচড় টেনে তাঁর আয়োজনকে রঙিন করে তোলেন। এ-লাইন ফ্রক, স্লিট টিউনিক, শর্ট জাম্প স্যুট, হাই নেক ফ্রক, ডিপনেক শর্ট ফ্রক, লং স্লিভলেস গাউন সহ আরও নানান পোশাকের উপর নীল, বেগুনি, গোলাপি, হলুদ, লালের আঁচড় এক নতুন শিল্পকলার জন্ম দেয়। ‘কাবেরি’-র চোখ জুড়ানো আয়োজন এই আসরের বুকে এক মুঠো তাজা হাওয়া নিয়ে আসে। তবে এদের শো-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলেন শাবানা আজমি। তাঁর ব্যক্তিত্বময় উপস্থিতিতে আবিষ্ট ছিলেন সকলে। দিয়া-রাজবীর সাবেকি এমব্রয়ডারিকে নতুন রূপে পরিবেশন করেন। পুনিত বালানা-র আয়োজনে ফুটে ওঠে রাজস্থানি বাঁধনি এবং কাঁচের কাজ। পুনিতের রাজস্থানি সাজে শিল্পা শেট্টি ছিলেন যেন অষ্টাদশী।
সাহসী আশি
ওজন তাঁদের আশি বা তারও বেশি। তবুও সাহসী পোশাকে রীতিমত র্যাম্প কাঁপালেন এক ঝাঁক স্থূলকায় মডেল। ল্যাকমের মঞ্চে শেষ দিনের শেষ বেলায় ডিজাইনার রীনা ঢাকা আবার প্রমাণ করলেন ফ্যাশন সকলের জন্য। তিনি দেখান সাহসী পাশ্চাত্য পোশাকের রকমারি। রিস্কি এবং টিংকা ভাটিয়া-র আয়োজনেও ছিল স্থূলকায় নারী-পুরুষের জন্য সাবেকি থেকে পাশ্চাত্য পোশাকের বাহার। তাই অফসোল্ডার স্লিট গাউন পরতে শারীরিক মাপকাঠি আর কোনোও বাধা নয়।
প্রথম এবং শেষ রজনী
ল্যাকমে ফ্যাশন উৎসবের শুভ সূচনা হয় অত্যন্ত খ্যাতনামা ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রার শো-এর মাধ্যমে। উৎসবের শুরুর রাতই জমকালো হয়ে ওঠে বলিউড সুন্দরী ক্যাটরিনা কাইফের দ্যুতিতে। এই রাতে তাঁর পরণে ছিল মনীশের ডিজাইন করা কালো রঙের লেহেঙ্গা-চোলির উপর রূপালী জরির কাজ। ল্যাকমের শেষ দিনের শেষ রাতেও কালো পোশাকে মোহময়ী হয়ে উঠেছিলেন আর এক বলিউড রূপসী করিনা কাপুর খান। গৌরী-নয়নিকা তাঁদের আয়োজনে ৮০ দশকের সাহসী লুক তুলে ধরেন। কালো গাউন পরে করিনা ল্যাকমের শেষ রাতকে আরও উজ্জ্বল করে তোলেন।