পারিবারিক ক্ষেত্রে বহু প্রচেষ্টার পর শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা। সন্তানের কর্ম উন্নতিতে আনন্দ লাভ। অর্থকর্মে শুভ। ... বিশদ
সুদূর ইংল্যান্ডে বাঙালি খাবার পরিবেশন করেন সোহিনী বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবানীপুরের বঙ্গকন্যাটি অনেক ছোটবেলাতেই ইংল্যান্ড পাড়ি জমিয়েছিলেন বাবা মায়ের সঙ্গে। বড় হয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনার পরেও রান্নাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। লন্ডন নিবাসী এই বাঙালি মেয়েটি আপাতত কলকাতায় এসেছেন একটি নতুন ভাবনা নিয়ে। নিজের বাড়িতে ‘সাপার ক্লাব’-এর আয়োজন করছেন তিনি আজ। সেখানে বাঙালি খাবার পরিবেশন করবেন ভিন্ন স্বাদে, অন্যভাবে। সোহিনীর ভাষায় ‘বেঙ্গলি কুইজিন উইথ আ টুইস্ট’।
‘সাপার ক্লাব’টা কী? বিষয়টা পরিষ্কার করে দিলেন তিনি। ‘খাওয়াদাওয়া সহ আড্ডার এক অসাধারণ পরিবেশ বলা যেতে পারে একে। রেস্তরাঁ বা পপ-আপ নয়। একেবারে ব্যক্তিগত একটা জমায়েত। নিজের বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়। আমি রান্না করি, অতিথি আপ্যায়ন করেন আমার স্বামী। সেখানে একে অপরকে চেনা যায়। তবে খাবারটা কিনতে হয়।’ কলকাতায় এই কনসেপ্টটা নতুন হলেও বাঙালির আড্ডার কালচারের সঙ্গে এই সাপার ক্লাব খুবই মিশ খাবে বলে মনে করছেন সোহিনী। বললেন, ‘বাঙালি বাড়িতে একটা প্রথা আছে, কেউ এলে অন্তত জল মিষ্টি না খেয়ে যায় না। সেই প্রথাটাই একটু ব্যবসায়িকভাবে তুলে ধরেছি সাপার ক্লাবে।’
ছোটবেলায় মাকে দেখতেন বিদেশি উপকরণ দিয়ে বাঙালি ধাঁচে রান্না করতে। সেই থেকে একটু ‘টুইস্ট’ সহ বাঙালি রান্না করা ও তার মাধ্যমে রোজগেরে হয়ে ওঠার সাধ জাগে সোহিনীর। তিনি ভাজা মশলা দিয়ে আলুর দম বানিয়ে স্টার্টার হিসেবে পরিবেশন করেন, বেগুন পোড়ার সঙ্গে নিম পাতা দিয়ে বিদেশিদের খাওয়ান! তাঁর হাতে তৈরি যদুবাবুর আলুর দম লন্ডনে খুবই জনপ্রিয়। সম্প্রতি একটি আর্ট এগজিবিশনে, যেখানে অতিথিরা সকলেই ব্রিটিশ— নিমবেগুন পরিবেশন করেছিলেন স্টার্টার হিসেবে। বেগুনটা পুড়িয়ে নিয়ে সর্ষের তেল সহযোগে মেখে উপর থেকে কুরমুরে নিম পাতা ভাজা ছড়িয়ে দেন। আর তার উপর একটু মিষ্টি স্বাদ আনতে গাজর দিয়ে ক্যারামেল তৈরি করে ঢেলে দেন। ব্যস, বিদেশি সভায় নিমবেগুন দারুণ হিট। বাঙালির প্রিয় পাতা বাটাও একটু ভিন্ন স্বাদে পরিবেশন করেন সোহিনী। ফুলকপির পাতা ডাঁটা সহ ছোট টুকরো করে কেটে তা আভেনে দিয়ে সর্ষের তেল ও নুন-সহ সেদ্ধ করে তা বেটে নেন রসুন ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে। সবুজ ডিপ তৈরি হয়। ইতালিয়ান ব্রেডের সঙ্গে এটিকে ফুলকপির হামাস হিসেবে পরিবেশন করেন।
বিদেশিরা ইন্ডিয়ান খাবার বলতে মূলত উত্তর ভারতীয় খাবারই বুঝত। সম্প্রতি তা খানিকটা বদলেছে। প্রায় এক দশক ধরে নিজের রান্নার ধারা ও পরিবেশনের স্টাইল একেবারে ভিন্নভাবে সাজিয়ে সোহিনী গড়ে তুলেছেন বাঙালি রান্নার নতুন ধরন।
আলু ভর্তা উইথ পিকলড অনিয়ন
উপকরণ: বড় আলু ২-৩টে, নিমপাতা ১ মুঠো, কাঁচালঙ্কা কুচি ২টো, নুন স্বাদ মতো, আচারি পেঁয়াজ ২টো। (আচারি পেঁয়াজ তৈরি করতে ছোট পেঁয়াজ ২ কাপ ভিনিগার, ৪ টেবিল চামচ চিনি ও ১ চা চামচ নুনে ভিজিয়ে রেখে দিন।)
পদ্ধতি: আলু সেদ্ধ করে নিন। নিম পাতা শুকনো খোলায় ভেজে নিন। এবার আলু মেখে নিন। তাতে কাঁচালঙ্কা মেশান। নিমপাতা মিশিয়ে মেখে নিন। উপর থেকে বেশ খানিকটা সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিন। তারপর আচারি পেঁয়াজ কুচিয়ে কেটে নিন। এবার আলুসেদ্ধর মাঝখানে গর্ত করে বেশ কিছুটা সর্ষের তেল ঢেলে তার সঙ্গে আচারি পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন। পুরো মিশ্রণটাকে ঢিমে আঁচে পাঁচ মিনিট গরম করে পরিবেশন করুন।
অন্যরকম কুমড়ো ছেঁচকি
উপকরণ: মিষ্টি কুমড়ো ১ ফালি, পোস্ত ৪ টেবিল চামচ, পেঁয়াজের বেরেস্তা (ঘিয়ে ভাজা) ১ টেবিল চামচ, মোটা শুকনো লঙ্কা ১টা, গুড় ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ও নুন স্বাদ অনুযায়ী।
পদ্ধতি: কুমড়োর খোসাটা না ছাড়িয়ে তা টুকরো করে কেটে নিন। এবার তাতে সামান্য নুন ও সর্ষের তেল মাখিয়ে তা আভেনে দিয়ে গ্রিল করে নিন। অন্তত ২৫ মিনিট ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে গ্রিল করবেন। অথবা গ্রিল প্যান আঁচে বসিয়ে মোটামুটি দশ মিনিশ ধরে কুমড়োর টুকরোগুলো এপিঠ ওপিঠ করে ভেজে নেবেন। ইতিমধ্যে পোস্ত, পেঁয়াজের বেরেস্তা, মোটা শুকনো লঙ্কা, নুন, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো, গুড় ও লেবুর রস একসঙ্গে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন। এরপর একটা প্লেটে গ্রিল করা কুমড়ো সাজান। তার উপর এই বাটা মিশ্রণটি ঢেলে দিন। উপর থেকে অল্প নুন ছড়িয়ে দিন। বিভিন্ন ধরনের ব্রেড সহযোগে পরিবেশন করুন।