হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
ছোট থেকেই নানা ধরনের কম্বিনেশন মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতে ভালোবাসতেন বেহালার বাসিন্দা সোমা ভট্টাচার্য। বোনের সঙ্গে মিলে স্কুলজীবনের শেষ দিকে পালাজো-কুর্তা বানানো দিয়ে পোশাক তৈরির কাজ শুরু। ওই সব পালাজো-কুর্তা দুই বোন একে অপরের জন্যই বানাতেন। তার আগে মেশিনে সেলাইটা শেখা হয়ে গিয়েছিল অবসরকে কাজে লাগিয়ে। ফলে তখন শুধু কাপড় কিনে নিজেরা বানিয়ে নিলেই হল। সোমা বলেন, শাড়ির প্রতি তখন এতটা ঝোঁক ছিল না। কিন্তু তাঁদের বানানো সেই পালাজো-কুর্তা অনেকেরই মনে ধরেছিল। তারপর থেকেই সকলের জন্য পোশাক বানানোর কথাটা মাথায় এসেছিল তাঁর। পরবর্তীকালে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাড়ির প্রতি ভালোবাসা বাড়ে, আর সেভাবেই শাড়ির ডিজাইনিং করার প্রতিও আগ্রহ জন্মায়, বলছিলেন সোমা।
অফিসের ঝক্কি সামলেও অনলাইনে বুটিক ‘সোমাজ ক্রিয়েশনস’ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ডিজাইনিংয়ের প্রতি নিখাদ ভালোবাসাই তাঁকে এগতে সাহায্য করেছে বলে তাঁর দাবি। পুজোর সময় তাঁর শাড়ির এত চাহিদা থাকে যে অনেক রাত ঠিক করে ঘুমানোও হয় না। কিন্তু এটা পছন্দের কাজ। তাই উদ্দীপনাও এতটাই বেশি যে কোনও ক্লান্তি তিনি অনুভব করেন না। সোমার বোন ব্রিটেনে থাকেন। সেই সূত্রে প্রবাসী বাঙালিদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছে তাঁর কাজ। জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। ১০টা-৫টা অফিসের দায়িত্ব সামলে সপ্তাহান্তে তিনি সময় বের করেন নিজের প্যাশনের জন্য।
তাঁর সংগ্রহে নানারকম কালার কম্বিনেশনে হ্যান্ড পেন্টেড তসর রয়েছে। তাতে পদ্মের কাজ। বেঙ্গল কটনের মধ্যে সরু পাড়ের ধনেখালিতে (পাড়ে ছোট দাঁতের নকশা) কাঁথাকাজে ফুল পাতা ইত্যাদি নকশা রয়েছে। যার আঁচলে ঘন কাজ আর গোটা শাড়িতে ছোট ছোট ফুলের মোটিফ। সোমা এর নাম দিয়েছেন ‘বাগিচা কালেকশন’। এছাড়াও তাঁর সংগ্রহে আছে এ বাংলার কটনের মধ্যে কচ্ছের মিরর ওয়ার্ক। এক একজন দক্ষ শিল্পী তাঁর আঁকা থেকে শাড়িতে কাজগুলো ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর সাদা লাল কম্বিনেশনের বাংলার সুতি শাড়িতে ভেলভেট বর্ডারে (দাঁত কাজ) গুজরাতি মোটিফ খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রয়েছে মলমলে বাঁধনি শাড়ির কালেকশন। দড়ি দিয়ে বেঁধে ডাই করে তৈরি এই শাড়ির আঁচলে আলাদা করে লাগানো ট্যাসেল বেশ নজর কাড়ে। ‘এই সব নরম শাড়ি গরম দেশের জন্য খুবই আরামদায়ক,’ বললেন তিনি। রং ওঠার সমস্যাও নেই। প্রথমবার ড্রাই ওয়াশ করে নিলে পরবর্তীকালে বাড়িতেই এসব শাড়ি হাতে ধোয়া সম্ভব। সঙ্গে আছে বাংলার তসরের উপর সুতো দিয়ে ডোরি কাজ। সুতো ঘুরিয়ে ফোঁড় তোলা হয় তাতে। এরও নানা কম্বিনেশন পাওয়া যাবে চাইলে।
এসব শাড়ির দাম মোটামুটি সাধ্যের মধ্যেই। তবে লকডাউনের জেরে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁতিদের দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে কিছুটা দাম বাড়াতে হয়েছে বলে জানালেন তিনি। শাড়ির পাশাপাশি ইদানীং খাদি জামদানির উপরে নানারকম ড্রেসও করছেন তিনি। এসময়ে শাড়ি অনেকেই নিয়মিত পরতে পারছেন না। নিয়ম মেনে কাচাধোয়ার ঝঞ্ঝাটের জন্যই। তাই সেসব দিকে থেকে ড্রেস অনেকটাই সহজে পরার মতো পোশাক। চাহিদা বুঝে তাই ড্রেস তৈরিতে মন দিয়েছেন সোমা।
বাংলার সুতির শাড়ি নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন বর্ধমানের রোশনী দাস ভট্টাচার্যও। বহুদিন ধরেই তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘আরবী’-কে সাজিয়ে তুলেছেন সেভাবে। কখনও কাঁথা কাজ, কখনও এমব্রয়ডারির নকশায় সুতি, খেস, খাদির উপরে কাজ করেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘এখন গোটা রাজ্যে সবাই নানা ধরনের মিক্সড শাড়িকেও খাদি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। খুব সস্তায় দেওয়ার নাম করে যে কোনও মেটিরিয়ালকে খাদি বলে দেওয়া হচ্ছে।’ রোশনী নিজের এলাকার, কালনা-কাটোয়ার তাঁতিদের সঙ্গে কাজ করেন। কাপড়ের মান যাতে বজায় থাকে, তার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করেন তাঁরা সবসময়।
ফুলিয়া কটন এবং লিনেনের উপরেও কাজ করেছেন তিনি। কাঁথাকাজ এমনিতে বেশি হয় সিল্কে। কিন্তু রোশনী সেক্ষেত্রেও কটনকেই এগিয়ে রাখেন। তাঁর মতে, তাতে কাজের কিন্তু কোনও হেরফের হয় না। যত্ন করে বুনিয়ে তোলা শাড়িতে সূক্ষ্ম কাঁথাকাজ যাতে ফেঁসে না যায়, তিনি খেয়াল রাখেন সেদিকে। আর্ট কলেজের ছাত্র চন্দনের সঙ্গে বসে তিনি মাছ বা অন্যান্য নকশা ফুটিয়ে তোলেন ট্রেসিং পেপারে। পরে শাড়িতে ঘন সুতোয় সেই নকশা তুলে আনেন তাঁতিরা। এধরনের শাড়ি খুবই জনপ্রিয় বলে জানালেন রোশনী। একটা শাড়ি তৈরি করতে প্রায় মাস পাঁচেক সময় লেগে যায়। এই প্রক্রিয়ায় একটা ঝুঁকিও আছে। শাড়ির জমির সঙ্গে ম্যাচ করে সুতো দিয়ে রোশনী হয়তো বুনতে দিয়ে দিলেন। কখনও সুতো ফুরিয়ে গেলে তাঁতি হয়তো তাঁকে আর জানাতে পারলেন না, স্থানীয়ভাবে কেনা সুতো দিয়ে একটা মাছ শেষ করলেন। এমনিতে হয়তো খালি চোখে তফাতটা বোঝা গেল না। কিন্তু পাঁচ মাসের কাজে নোংরা হয়ে যাওয়া শাড়ি তাঁরা না ধুয়ে বিক্রির জন্য আনতে পারেন না। এবার অন্য সুতো ব্যবহারের ফলে দেখা গেল, কাচার সময়ে সেই রংটা শাড়িতে উঠে গেল। পুরো পরিশ্রম মাটি। তাই আগে থেকে অর্ডার নিয়ে কাজ এগন না রোশনী। শাড়ি তৈরির পরে ফিট সার্টিফিকেট পেলে তবেই তিনি সেটা ক্রেতাদের সামনে আনেন। তাঁর সব ডিজাইনই সিঙ্গল পিস। তবে একই ধরনের নকশা তিনি অন্য রঙের শাড়িতে করে দিতে পারেন বলে জানালেন।
বছর সাত আগে হ্যান্ডলুমের কাজ দিয়ে শুরু করেছিলেন রোশনী। তারপর ২০১৭ সাল থেকে কাঁথাকাজে মন দিয়েছেন। লিনেন বা খাদিতে কাঁথাকাজের চাহিদাও আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে বলে তাঁর দাবি। গত বছরেও যেভাবে সাড়া পেয়েছেন, তাতেই সেটা স্পষ্ট। এ রাজ্য ছাড়াও উত্তর ভারতের বেশ কিছু জায়গায় পৌঁছে যায় তাঁর সামগ্রী। তবে সেখানে শাড়ির তুলনায় ড্রেস মেটিরিয়াল, দোপাট্টা ইত্যাদি বেশি চলে।