হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
জগন্নাথদেবের প্রতি বরাবরই একাগ্র তিনি। সুরত্না দত্ত বলেন, তাঁর এই ভক্তি এসেছে ঠাকুরমার কাছ থেকে। ছোটবেলা থেকে রথযাত্রার দিন ঠাকুরমার বাপের বাড়ি যাওয়া, একদল কচিকাঁচা মিলে হইহই করে রথ সাজিয়ে টানা— সবই তাঁর সুখস্মৃতি। তাই রথযাত্রার আগে গয়নার ডিজাইনে তিনি নিয়ে এসেছেন মনের ঠাকুরকেই। নানা ধরনের জিনিস দিয়ে গয়না বানান তিনি। তবে মাটির গয়নার কাজ শুরু করেছিলেন জগন্নাথের মুখ দিয়েই। রথের দিন থেকে শারদোৎসবের একরকম সূচনা হয়ে যায়। সুরত্না জানালেন, জগন্নাথ দিয়ে শুরু করে তিনি এক এক করে অনেক ঠাকুরই ডিজাইনে এনেছেন। কিন্তু জগন্নাথ সবসময়েই স্পেশাল তাঁর ব্র্যান্ড ‘সৌখিন’-এর কাছে।
চার বছর আগে শুরু হয়েছিল পথ চলা। আঁকতে ভালোবাসেন সুরত্না। স্কুলে সরস্বতী পুজোর আলপনা দেওয়ার দায়িত্ব থাকত তাঁর। তবে আঁকিবুকির কাজ স্কুলের গণ্ডি পর্যন্তই ছিল। ২০১৭ সালে কমার্সে স্নাতক হওয়ার পর একটি সংস্থায় চাকরিতে ঢোকেন। কিন্তু খুব দ্রুত মন উঠে যায়। বুঝতে পারছিলেন, তাঁর শিল্পীসত্তা কোথাও যেন ধাক্কা খাচ্ছে। সুরত্নার কথায়, ‘সৃষ্টিশীল মানুষ কাজের স্বাধীনতা খোঁজে। ৯-৫টার কাজে দমবন্ধ লাগত। তাই চাকরি ছেড়ে দিই।’ এরপরে নিজের মতো কাজ করার ইচ্ছেটা জেগে ওঠে। পাশে ছিলেন বাবা। পরিবারে জুয়েলারির ব্যবসা যেভাবে চলত, তা দেখে উৎসাহ জাগত। একবার জার্মান সিলভারের কিছু র-মেটিরিয়াল দিয়ে বানিয়েও ফেলেন। তারপর থেকে নতুন ধাঁচে গয়না বানানো শুরু। এর পাশাপাশি পুরনো দিনের গয়নার ক্যাটালগ দেখতেন। কাজ শুরুর পরে দেখা গেল সুরত্নার তৈরি গয়নায় অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এক-দেড় বছর এভাবে চলার পরে তাঁর মনে হয়েছিল বাঙালির যে বারো মাসে তেরো পার্বণ, সেই অনুষ্ঠানগুলো মাথায় রেখে গয়না বানালে কেমন হয়? দুর্গাপুজো, কালীপুজো বা লক্ষ্মীপুজো, অথবা নববর্ষ, রথযাত্রা— তা সে যাই হোক না কেন, সবাই ভালোবাসে সাজতে। তাই তিনি জোর দিলেন পুজোপার্বণে। তাঁর কথায়, ‘চারপাশে যা দেখি, তাই থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজি। ঠাকুরের ছোট থালা, পঞ্চপ্রদীপ, ত্রিশূল, কাজললতা সবই এসেছে গয়নার নকশায়।’ বছর দুই আগে নববর্ষে ঠাকুরের জন্য ব্যবহৃত পিতলের সরঞ্জাম দিয়ে বানানো সেই গয়নার কালেকশন প্রকাশ্যে আনেন সুরত্না। ভালো সাড়া পেয়েছিলেন। পরে শুরু করেন মাটির গয়নার কাজ। কাগজের ড্রয়িং থেকে শুরু হয়ে তা মাটির কলেবর নেয়। মাটির গয়না তৈরি ও শুকোতে একটু সময় লাগে। তাঁর গয়নায় কোনও ছাঁচ ব্যবহার করা হয় না, পুরোটা হাতে করা হয়, দাবি তাঁর। গত দু’বছর ধরে মাটির গয়নাই করছেন। পুজোর পাশাপাশি কলকাতা শহরের অনুষঙ্গও এসেছে তাঁর কাজে। পেন্ডেন্টে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রতিকৃতিও রয়েছে সংগ্রহে।
বহু বছর আগে জগন্নাথের থিমে গয়না বানিয়েছিলেন আর এক ডিজাইনার দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ‘কারুকথা’-র গয়না সাজিয়েছেন জগন্নাথের মুখের উপরে। কখনও ছবি কার্ডবোর্ডে পেস্ট করে, কখনও বা কাপড়ে সেলাই করে লকেট তৈরি হয়েছে। কখনও আবার ছবিটা হাতে এঁকে তাতে বিডস আটকে তৈরি করা হয়েছে লকেট। কিছু প্যানেলে স্টিচ করে কড়ি দিয়েও করেছেন এমন গয়না। ইলেকট্রিক তারের টুকরো কেটে কেটেও গয়না বানিয়েছিলেন। তিনিও জগন্নাথের একনিষ্ঠ ভক্ত। তাঁর তৈরি করা গয়না বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমি থেকে শুরু করে টাবুর মতো অভিনেত্রীর কাছেও সমাদর পেয়েছে বলে জানালেন। পুরীর মন্দিরে নিজের মাকেও ওই গয়না পরিয়ে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন। মায়ের চিন্তা ছিল, এমন গয়না দেখে সমালোচিত হবেন কি না! যদিও মন্দিরের পাণ্ডারা পছন্দ করেছিলেন সে গয়না, জানাচ্ছেন দেবমাল্য। এখনও সেসব গয়না জনপ্রিয়। এভাবেই জগন্নাথদেব মানুষের মনের বড় কাছাকাছি রয়েছেন সদাই।