হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
বর্ষায় বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়। তাই ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। দাগ, ছোপ, র্যাশের বিরাম থাকে না। এই সময় ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। শুধু ত্বকই বা বলি কেন? চুলও এই সময় রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে যায়। ফলে চুলের যত্নও এই মরশুমে প্রয়োজন। কিন্তু কেমন যত্ন নেবেন ত্বক ও চুলের? সেই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলাম বিশেষজ্ঞ বিউটি থেরাপিস্ট শেহনাজ হুসেনের কাছে। তাঁর মুখেই শোনা যাক বর্ষায় ত্বক ও চুলের যত্নের সাত সতেরো।
সাধারণত বর্ষাকালে ত্বকের কেমন সমস্যা দেখা দেয়?
বর্ষায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় তৈলাক্ত ত্বকের। এই সময় বাতাসে একটা ভিজে ভাব থাকে বলে আমরা ঘামি বেশি। আর বেশি ঘামলে তৈলাক্ত ত্বক থেকে অয়েল সিক্রেশন বেশি হয়। অনেক সময় বারবার ঘাম মুছতে গিয়ে তৈলাক্ত ত্বকের ছিদ্রগুলো খুলে যায়। তখন বাতাসের ধুলোময়লা সবই ত্বকে গিয়ে জমা হয়। এবং ত্বকের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। এছাড়াও বারবার রগড়ানোর ফলে অনেক সময় ত্বক লাল হয়ে যায়। ওপেন স্কিন পোরস বা ত্বকের উন্মুক্ত ছিদ্রে ধুলো জমে তা থেকে র্যাশ বের হয়। এই ধরনের সমস্যা তৈলাক্ত ত্বকে হতেই পারে বর্ষাকালে।
তাহলে কি শুধু তৈলাক্ত ত্বকেই সমস্যা হয় বর্ষায়?
তৈলাক্ত ত্বক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঠিকই, তবে শুষ্ক ত্বকও যে একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তা কিন্তু নয়। শুষ্ক ত্বক এই মরশুমে প্রাণহীন হয়ে যায়। একটু হয়তো রুক্ষও দেখায়। তাই বর্ষায় সঠিক স্কিন কেয়ার বা ত্বকের যত্ন অত্যন্ত জরুরি। রোজ নিয়ম করে একটা স্কিন কেয়ার রুটিন বানিয়ে ফেলতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
কেমন রুটিন বর্ষার স্কিন কেয়ারের জন্য মেনে চলা উচিত?
বর্ষার রূপ রুটিনে যা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হল ক্লিনজিং। হাল্কা গরম জলের সঙ্গে অল্প ঠান্ডা জল মিশিয়ে তা দিয়ে রোজ অন্তত তিন থেকে চারবার মুখ ধুতে হবে। এই সময় মুখে সাবান বা ফেস ওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না। তারপর মুখ আলতো করে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে। এরপর মুখে ওয়াটার বেসড কোনও ক্রিম বা লোশন হাল্কা হাতে নীচ থেকে ওপরের দিকে তুলে মাসাজ করে নিতে হবে। বেশ খানিকক্ষণ মাসাজ করার পর যখন মুখে ক্রিম মিশে যাবে তখন তুলো একটু গরম জলে ভিজিয়ে মুখটা মুছে ফেলবেন। ত্বকের ভেতর ঢুকে থাকা ময়লা তাতে অনেকটা বেরিয়ে যাবে। এরপর মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিতে মুখ পরিষ্কার করাকে বলা হয় ক্লিনজিং রুটিন। এতে ত্বকে আটকে থাকা তেল ও ময়লা অনেকটাই বেরিয়ে যায়। এরপর চাই ডিপ পোর ক্লিনজিং। তার জন্য সপ্তাহে এক দিন মুখে লাইট ফেস স্ক্রাব দিয়ে মাসাজ করতে হবে। মুখটা অল্প জলে ভিজিয়ে নিয়ে ফেস স্ক্রাব দিয়ে হাল্কা হাতে অন্তত মিনিট দশেক মাসাজ করার পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে স্কিন পোরস পরিষ্কার হয়ে যায়। বর্ষায় অতিরিক্ত ঘামে এই ছিদ্রগুলো আটকে যায় বলেই ত্বকে ব্রণ, অ্যাকনে, র্যাশ ইত্যাদির সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয় স্কিন পোরস আটকে গেলে ব্ল্যাক হেডসও হতে পারে। ফলে ত্বক নিয়মিত স্ক্রাব করলে সেই ব্ল্যাক হেডসও থাকে না।
বর্ষায় ত্বক শুষ্ক, প্রাণহীন লাগলে কী করা উচিত?
শুষ্ক ত্বককে প্রাণোজ্জ্বল করে তুলতে গেলে সপ্তাহে দু’বার একটা ফেশিয়াল স্ক্রাব ব্যবহার করা যেতেই পারে। এই স্ক্রাবের ব্যবহারে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। স্ক্রাব বানানোর জন্য চালের গুঁড়োর সঙ্গে দই মিশিয়ে নিতে হবে। পরিমাণটা এমন নেবেন যাতে পেস্টটা থকথকে হয়। এই পেস্ট মুখে সমানভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর তা শুকিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে হাল্কা হাতে নীচ থেকে ওপরের দিকে গোলাকারে মাসাজ করতে করতে তা তুলতে হবে। তারপর বেশ ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। মুখ পরিষ্কার হয়ে গেলে ফ্রিজে রাখা গোলাপ জল তুলোয় করে গোটা মুখে মেখে নিন। এই গোলাপ জল মুখে বারবার মাখতে পারেন, ত্বকের জেল্লা বাড়বে। আর ত্বক তরতাজা থাকবে। ঘাম হলেও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে।
বর্ষায় মুখে অতিরিক্ত ব্রণ হয়। কী করলে সমস্যা মিটবে?
বর্ষায় শুধু নয় যে কোনও মরশুমেই ব্রণর সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটা ঘরোয়া টোটকার কথা বলি। বাড়িতে গুঁড়ো চন্দন কিনে তা অল্প জলে পেস্ট করে নেবেন। তারপর মুখ ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন। তারপর মুখ মুছে তুলোয় করে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন লাগিয়ে নিন। এরপর মুখ একটু শুকিয়ে নিয়ে ব্রণর ওপর চন্দনের পেস্ট লাগিয়ে রাখুন। এরপর মুলতানি মাটির সঙ্গে ঠান্ডা গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেই পেস্ট সারা মুখে সমানভাবে লাগিয়ে নিন। পেস্ট শুকিয়ে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া একটা প্যাক বানিয়ে রোজ লাগাতে পারেন। তার জন্য নিম পাতা জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর তা ছেঁকে নিতে হবে। ছাঁকা জল দিয়ে নিম পাতা বেটে নিন। একটা পেস্টের মতো হবে। সেই পেস্ট রোজ দিনের যে কোনও সময় মুখে সমানভাবে লাগিয়ে নিন। মোটামুটি আধ ঘণ্টা মেখে রাখার পর তা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মুখ উজ্জ্বল হবে এবং ব্রণর সমস্যাও কমবে।
ত্বক থেকে এবার একটু চুলের সমস্যার দিকে নজর দেওয়া যাক। বর্ষায় চুলে বড্ড ময়লা বসে যায়। সেক্ষেত্রে চুল পরিষ্কার রাখতে কী করা উচিত?
প্রথমে চুল ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। তারপর তা আধ শুকনো করে আঁচড়ে নিন। এরপর লেবুর রস চুলে মেখে নিন। খানিকক্ষণ রেখে চুলে শ্যাম্পু করুন। শ্যাম্পু করার পর চুল যখন ধোবেন তখন শেষবার চায়ের লিকার দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এরপর আর চুলে জল দেবেন না। চায়ের লিকার দিয়ে ধোয়ার পর চুল মুছে নিন। এই লিকার চুলের পক্ষে খুব উপকারী। এতে চুল পুষ্টি পায়। চুলে একটা ঔজ্জ্বল্য আসে। এবং তা পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়।
বর্ষায় মাথায় ঘাম হয় বলে চুল বড্ড তৈলাক্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কী করা উচিত?
বর্ষায় চুলে কখনও কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না। তাতে চুল আরও তৈলাক্ত হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোজ বা একদিন অন্তর চুলে শ্যাম্পু করতে হবে। তারপর তাতে লেবুর রস মাখিয়ে রাখতে হবে। এরপর তা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়া অ্যাপেল সিডার ভিনিগারও চুলের জেল্লা বাড়ায়। একমগ জলে বড় দু’চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। তারপর শ্যাম্পু করে চুল ধোয়ার পর শেষবার অ্যাপেল সিডার মেশানো জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এরপর হাল্কা হাতে নরম তোয়ালে দিয়ে তা মুছে নিন। অনেকের চুল অতিরিক্ত রুক্ষ, তারা চুল ধোয়ার পর একটা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। জল, বিয়ার ও লেবুর রস এক সঙ্গে মিশিয়ে রাখুন। চুল ধুয়ে এই লোশন স্ক্যাল্পে মাসাজ করে নিন। তারপর তা শুকিয়ে গেলে আঁচড়ে নিন। চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
অনেক সময় বর্ষাকালে চুলে খুশকির সমস্যা দেখা যায়। তখন কী করা দরকার?
বর্ষায় স্ক্যাল্প ঘেমে যায় বলে খুশকির সমস্যা বেশি হয়। সেক্ষেত্রে হট অয়েল থেরাপি সবচেয়ে উপকারী। তিলের তেল বা অলিভ অয়েল গরম করে তা সারা মাথায় মাসাজ করে লাগিয়ে নিন। এরপর ফুটন্ত গরম জলে তোয়ালে ভিজিয়ে তা নিংড়ে নিয়ে সেই তোয়ালে দিয়ে মাথা মুড়িয়ে নিন। পাঁচ মিনিট পর তোয়ালে খুলে ফেলে তা আবারও গরম জলে চুবিয়ে নিংড়ে মাথায় বেঁধে নিন। এইভাবে পাঁচ থেকে ছ’বার করবেন। তারপর তেল সারা রাত মাথায় বসিয়ে নিয়ে পরের দিন প্রথমে চুলে লেবুর রস মেখে নেবেন। তারপর তা মিনিট কুড়ি রেখে জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন। বেশ খানিকক্ষণ ধরে চুল ধুয়ে তারপর শ্যাম্পু করে নেবেন। ড্যানড্রাফ বা খুশকির সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল