সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
ট্যান রুখতে
গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা ঘাম হওয়া। আর সেই ঘাম মুছতে মুছতে মুখের ত্বক সেনসিটিভ হয়ে যায়। তাই কাজের জন্য যাঁদের রোজ বেরতে হয়, তাঁদের জন্য শর্মিলার পরামর্শ, দু’ঘণ্টা অন্তর অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন লাগান। আজকাল অনেকেই ওয়েট ওয়াইপস দিয়ে মুখ মোছেন। ঘেমেনেয়ে একসা হলে মুখে ওয়াইপস দিলে আরাম বোধ হয় বইকি। এক্ষেত্রে শর্মিলা বলছেন, ওই ওয়াইপস-এর প্যাকেটেই গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। তারপর গোলাপ জল মেশানো ওয়াইপস দিয়ে মুখ মুছে সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে ফেলুন। এটা তো গেল অফিসে থাকার সময়কার রূপচর্চা। বাড়িতেও সানস্ক্রিন লোশন প্রয়োজন, জানালেন শর্মিলা। আমরা সবাই ভাবি রান্নাঘরে সানস্ক্রিন লোশন লাগানোর কোনও দরকার নেই। কিন্তু বিউটিশিয়ান বলছেন, অবশ্যই দরকার আছে। তাছাড়া ঘরোয়া কাজের মধ্যে ছাদে গিয়ে জামাকাপড় মেলা-তোলা ইত্যাদির সময় তো সানস্ক্রিন লোশন মাস্ট। এসপিএফ ৩০ বা ৪০-এর মধ্যেই সানস্ক্রিন লোশন খুঁজুন। আমাদের এশীয় ত্বকে এমনিতেই পিগমেন্ট থাকে, তাই তার বেশি এসপিএফ কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানালেন তিনি। সানস্ক্রিন লোশনের পাশাপাশি এখন সানস্ক্রিন পাউডারও মেলে বাজারে। তবে সেটা ব্যবহার না করাই ভালো, মনে করেন শর্মিলা। কারণ যে কোনও পাউডারই স্কিনের উপরিভাগে থেকে যায়। রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু লোশন স্কিনের ভিতরে গিয়ে কাজ করে, ত্বক শ্বাস নিতে পারে।
অফিস বা কাজের জায়গা থেকে বাড়িতে ফিরে এসেও কিন্তু যত্নের কথা খেয়াল রাখতে হবে। ওই সময়ে মুখে ট্যান ক্লিয়ার স্ক্রাব লাগানোর কথা বলছেন এই বিউটিশিয়ান। আলগা করে কোনও স্ক্রাব শুধু মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট মতো রেখে দিন। কিন্তু সেটা স্ক্রাবিং বা ঘষার দরকার নেই। ৫ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এর পাশাপাশি অফিস যাওয়ার আগে বাড়িতে একটা জিনিস তৈরি করে রাখতে বলছেন তিনি। একটা আইস ট্রে-তে গোলাপ জল আর এমনি জল মিশিয়ে রাখুন। সেটা ফ্রিজারে রেখে দিন। এরপর বাড়ি ফিরে এসে স্ক্রাব লাগিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলার পর গোলাপ জল মেশানো ওই আইসকিউব নিয়ে ভালো করে সারা মুখে বুলিয়ে নিন। সব ধরনের স্কিনেই এই প্রক্রিয়া চলতে পারে বলে জানালেন শর্মিলা। অয়েলি, ড্রাই, সেনসিটিভ বা কম্বিনেশন— সব ধরনের স্কিনেই সানবার্ন হবে। কারও কম, কারও বেশি। কিন্তু স্কিনের পোরস (ছিদ্র) যখন খুলে যায়, তখন তা দ্রুত বন্ধ না করলে ত্বকের সমূহ ক্ষতি হতে পারে। শর্মিলার মতে, রোজ ওয়াটার মেশানো আইস কিউব তারই মহৌষধ। ওটা মেখে মুখ মুছে তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তা না হলে কিন্তু মুখ টানবে।
আর্দ্রতা রাখতে
মুখ পরিষ্কারের সহজ পথ বলে দেওয়ার পরে শর্মিলা সিং ফ্লোরা কথা বললেন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার বিষয়ে। যাঁদের খুব শুষ্ক ত্বক এবং বয়স তিরিশ পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁরা রাতে শোওয়ার আগে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম লাগাতে পারেন, বললেন তিনি। তবে এ ক্ষেত্রেও ক্রিমের সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে সেটাকে আরও ডায়াল্যুট করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই বিউটিশিয়ান। তিনি বলছেন, এসি ঘরে যাঁরা শোবেন তাঁরা ক্রিম লাগিয়ে শুতে পারেন। কিন্তু এসি ঘরে যদি না ঘুমান, তাহলে ক্রিমটা লাগানোর কিছুক্ষণ পরে গোলাপ জল দিয়ে ক্রিম মুছে তবেই শুতে যাবেন। আর যাঁদের অয়েলি বা তৈলাক্ত ত্বক, তাঁদের জন্য ফ্লোরার একটি বিশেষ স্কিন কেয়ার ক্রিম রয়েছে। যাঁরা সেটা কিনতে পারবেন না, তাঁদের জন্যও উপায় বাতলে দিলেন তিনি। ক্লোভ অয়েলের সঙ্গে চন্দন বেটে মুখে লাগিয়ে রাখুন ৫-১০ মিনিট। সেটা তুলে ফেলার পরে হালকা করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তারপর রাতে রোজ ওয়াটার বা টোনার দিয়ে মুখ মুছে তবেই শুতে যাবেন। ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে শুয়ে পড়বেন না। যদি এসিতে শোন, তাহলে ওয়াটার বেসড লাইট ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন।
কিন্তু বেরনোর সময় সানস্ক্রিন লোশন লাগালে অনেকেরই প্রচণ্ড ঘাম হয়। সেটা কীভাবে এড়ানো সম্ভব? ফ্লোরা বললেন, ‘এটা একটা মিথ। বেরনোর দশ-পনেরো মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে বলা হয়। ওসব কিছু নয়। সানস্ক্রিন লোশনের সঙ্গে দু’ফোঁটা জল মিশিয়ে লাগান। তার ওপরে কমপ্যাক্ট লাগিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন। কেউ কেউ বেশি ঘামেন। তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। অফিস পৌঁছে তাঁরা মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে আবার সানস্ক্রিন লোশন লাগিেয় নিন। সানস্ক্রিন লোশনে জল মেশালে সেটা ডায়াল্যুট হয়ে যাবে। সেটা হলে পোরস থেকে ভিতরে ঢুকে থ্রি লেয়ারে সেই লোশন কাজ করতে পারে। তা না হলে একেবারে টপ লেয়ারে সানস্ক্রিন লোশন থেকে গেলে কোনও কাজ হবে না। এটা কিন্তু অনেকেই জানেন না, আর সেই ভুল থেকেই পরিচর্যায় ফাঁক থেকে যায়’, দাবি করলেন শর্মিলা।
উপকারি অ্যান্টিসেপটিক
গরমকালে ত্বকের পরিচর্যায় অ্যান্টিসেপটিক কাজ দেয় খুব। তাই প্রাকৃতিক উপকরণ হাতের কাছে রাখুন। নিমপাতা সেদ্ধ করা জল কিংবা তুলসীপাতা-পুদিনা সেদ্ধ করা জল ঠান্ডা করে রেখে দিন। সেই জলটা স্নানের সময় মিশিয়ে ব্যবহার করুন। স্কিন-ক্লিয়ার নামে ফ্লোরার একটি ক্রিম রয়েছে, যেটি লাগালে ঘামাচির সমস্যা এড়ানো যাবে বলে জানালেন শর্মিলা। কেউ যদি সেই ক্রিম না কিনতে পারেন, তার জন্য তাঁর পরামর্শ, নিমপাতা বেটে গলার কাছে লাগান বা ওটা মেখে স্নান করুন। তাহলে ঘামাচির সমস্যা একেবারে চলে যাবে।
ফেসপ্যাকে যত্ন
অফিসের ব্যস্ততা না থাকলে ছুটির দিনে ত্বকের দেখভালে আরও একটু বেশি সময় দেওয়া যায়। তখন নানারকম ঘরোয়া ফেসপ্যাক সহায় হয়। শর্মিলা জানালেন, অলিভ অয়েলের সঙ্গে একটু মেয়োনিজ বা সাদা মাখন, হলুদ, নিমপাতা, চন্দন মিশিয়ে একটা ফেসপ্যাক বানিয়ে শুষ্ক ত্বকে লাগাতে পারেন। পনেরো-কুড়ি মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পুদিনা, নিম, তুলসী, হলুদ বেটে নিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ চালের গুঁড়ো মিশিয়ে তারপর মুখে লাগাতে পারেন। অয়েলি স্কিনের জন্য খুব ভালো কাজে দেবে এই প্যাক। কম্বিনেশন স্কিনেও এটা কার্যকর। তবে যাঁদের সপ্তাহ জুড়ে শুধু রোদ্দুরে বেরিয়ে কাজ করতে হয়, তাঁদের মাসে একবার অন্তত পার্লার যেতেই হবে, বলছেন শর্মিলা। ‘সবটা বাড়িতে বসে সেক্ষেত্রে করা যাবে না। স্কিনের ধরন অনুযায়ী পার্লারে নানারকম ট্রিটমেন্ট আছে। সেটা বিউটিশিয়ান দেখে বলে দেবেন। তাছাড়া বাড়িতে করলে আর একটা অসুবিধে, কোনও প্যাকের উপকরণ বা তার পরিমাণ ঠিকমতো নেওয়া হল কি না, সেটা বোঝার উপায় থাকে না। নাছোড় ট্যান ওঠাতে গিয়ে কেউ বেশি করে কোনও উপকরণ হয়তো লাগিয়ে ফেললেন, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। স্কিন প্যাম্পার করার জিনিস। তাকে সুদিং রাখা দরকার। সারাক্ষণ প্যাক লাগাতেই হবে, এমনও কিন্তু নয়’, বললেন শর্মিলা। তাঁর মতে, স্কিনে বেশি ঘষাঘষি করা বরং ক্ষতিকর। ফেসপ্যাকের বদলে কেউ অয়েলি স্কিনে শুধু শসার রসে বরফ ডুবিয়ে তা দিয়েও মুখটা পরিষ্কার করতে পারেন। রোজ ওয়াটার তখন না দিলেও চলবে। কখনও আবার আপেলের রসও দিতে পারেন।
গরমে মেকআপ
শর্মিলা জানালেন, এখন বাজারে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের ভালো রেঞ্জ রয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটা বেছে নিলেই হল। কারণ গরমে ঘামের কথা মাথায় রেখেই এগুলো তৈরি করা হয়েছে। তাই বেস থেকে শুরু করে কমপ্যাক্ট, ব্লাশ অন সবই ওয়াটারপ্রুফ রয়েছে। কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। স্টেপ বাই স্টেপ করে নিলেই হল। যেমন প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তারপরে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এরপর ফাউন্ডেশন, কমপ্যাক্ট লাগান। এরপর নজর দিন কন্ট্যুর লাইনের দিকে। তারপর ব্লাশ অন। তারপর চোখের জন্য আই শ্যাডো। তাতে অনেকরকম কালার ব্যবহার করা যায় স্কিন টোনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। চোখে প্রথমে ন্যুড কালার দিন, তারপর একটা কালার দিয়ে ওপরে হাইলাইটার দেওয়া যেতে পারে। তারপর আই ব্রাও পেন্সিল দিয়ে ভ্রু-এর শেপ ঠিক করে নিতে পারেন। এরপর চোখের জন্য মাস্কারা, আইলাইনার, কাজল তো আছেই। লিপলাইনের জন্যও লাইনার আছে। জ লাইন ঠিক করার জন্যও হাইলাইটার পাওয়া যায়। ফলে গরমে মেকআপ এখন চিন্তার কোনও বিষয়ই নয়, জানালেন শর্মিলা।