সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
ব্যাগ বলুন বা জুতো, দুই অ্যাক্সেসরিজই সামগ্রিক সাজগোজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের যত্নে রাখতেই হয়। কীভাবে ভালো রাখবেন আপনার প্রিয় জুতো বা ব্যাগটি, লিখেছেন অন্বেষা দত্ত। মলিন ধুলো থেকে চরণযুগল বাঁচাতে একজোড়া জুতো বানিয়ে হবুচন্দ্র রাজাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন চামার-কুলপতি। রবি ঠাকুরের কবিতা অনুযায়ী সেই থেকে জুতো পরা চললেও আজকাল আর মাত্র একজোড়া জুতো-চটিতে মন ভরে কই! নানা পোশাকের সঙ্গে মানানসই অনেক জুতো চাই। কিন্তু বিনা পরিচর্যায় তাদের জেল্লা যাবে কমে। একই কথা প্রযোজ্য ব্যাগের ক্ষেত্রেও। নানারকম ব্যাগ সংগ্রহে থাকলেও তাদের ঠিকমতো রাখতে না পারলে উপযুক্ত সময়ে আর ব্যবহার করাই হল না হয়তো।
ব্যাগের যত্ন
ব্যাগের ক্ষেত্রে লেদারের আভিজাত্য চিরন্তন। এর ক্লাসিক লুক খুবই স্টাইলিশ। টিকেও থাকে বহুদিন। তবে তার জন্য দরকার সঠিক পরিচর্যা। কারণ অরিজিনাল লেদার ব্যাগ বেশ দামি। তাই আপনিও চাইবেন এমন একটা জিনিস যত্ন করে ব্যবহার করতে। যত্ন করলে লেদার শুকিয়ে যাবে না এবং ফেটেও যাবে না। লেদার ব্যাগ পরিপাটি রাখতে আধভেজা সাদা কাপড় দিয়ে ব্যাগটা ওপর ওপর মুছে নিতে পারেন। কাপড়টা যেন বেশি ভিজিয়ে ফেলবেন না। কারণ লেদার শুকিয়ে যেতে সময় লাগে। এক ধরনের সফট সোপ পাওয়া যায় শুধু লেদার পরিষ্কােরর জন্যই। সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। অল্পভেজা কাপড়ে সফট সোপ মিশিয়ে সার্কুলার মোশনে মুছে নিন। বছরে মাত্র এক-দু’বার এভাবে সাফ করলে আপনার লেদার হ্যান্ডব্যাগ একদম নতুনের মতো থাকবে। বেশি পরিষ্কার করলে কিন্তু উল্টো ফল। লেদার ব্যাগে যদি কোনও খাবারের দাগ বা কোনও কড়া ছোপ পড়ে যায়, তাহলে সাদা চকের গুঁড়ো তার ওপর ছড়িয়ে দিন। দাগের ওপরে সেটা একটু বসতে দিন। সারা রাত রেখে দিতে পারেন। সকালে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঝেড়ে ফেলুন। তবে ব্যাগ প্রস্তুতকারক সংস্থা কী পরামর্শ দিচ্ছে, প্রয়োজনে সেটাও দেখে নিন। অনেক সময় সাধারণ ইরেজার দিয়েও ছোট স্পট লেদার ব্যাগ থেকে উঠিয়ে ফেলা যায়। এই ধরনের ব্যাগের শেপ ঠিক রাখাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন ব্যবহার করছেন না, তখন সেটিকে চেনবন্ধ করে পাতলা সাদা কাপড়ের ব্যাগে (আজকাল খুবই সহজলভ্য) ভরে রাখুন। প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখলে লেদারের ক্ষতি হবে। শেপ ঠিক রাখতে ব্যাগে অনেক পুরনো খবরের কাগজ ঠেসে অথবা বাবল র্যাপ ঢুকিয়ে দিতে পারেন। ভরে রাখতে পারেন কোনও বড় সোয়েটারও। আর একটা কথা, হ্যান্ডব্যাগ কখনওই মাটিতে রাখবেন না। তা সে যত ভালো জায়গাই হোক। বাইরে যেখানেই যান, যখন বসবেন তখন চেয়ারের পিছন দিকে ঝুলিয়ে দিন, নয়তো নিজের কোলে রাখুন বা জায়গা থাকলে পাশের চেয়ারে রেখে দিন। অন্য যে কোনও মেটিরিয়ালের ব্যাগ মাঝেমধ্যে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। ব্যাস, ওইটুকু যত্নেই ভালো থাকবে তারা। কাপড়ের ব্যাগ তো কেচেও নিতে পারেন।
জুতোর পরিচর্যা
রোজকার পরার সাধারণ জুতো বা চটি নিয়মিত একটা ব্রাশ বা কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। মনে রাখবেন ব্রাশের ব্রিসল যেন লম্বা এবং নরম হয়। সেটা দিয়ে ঠিকমতো পালিশ করলে জুতোর উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। এ তো সাধারণ জুতোর পরিচর্যা। কিন্তু চামড়ার জুতোর ক্ষেত্রে যত্নের রকমসকম আলাদা।
চামড়া বেশ ডেলিকেট। তাই তার জন্য চাই যথার্থ ক্রিম কন্ডিশনিং, যা লেদারকে ভালো রাখে। লেদারের জন্যই বাজারে খুঁজে পাবেন এমন বিশেষ ক্রিম। তবে যে ধরনের জুতোই পরিষ্কার করতে যান, মনে রাখতে হবে সেই জুতো যেন একেবারে শুকনো থাকে। এবার খুব সামান্য পরিমাণে ক্রিম কন্ডিশনার নিয়ে আস্তে আস্তে ‘অ্যাপ্লিকেটর ব্রাশ’ বা নরম কাপড় দিয়ে গোটা জুতোয় লাগান। প্রয়োজনে আর একবার রিপিট করতে পারেন। তবে বেশি ক্রিম দিলে কিন্তু ফল হবে উল্টো। তাতে চামড়া বেশিদিন টিকবে তো না-ই, উল্টে খারাপ হবে তাড়াতাড়ি। ক্রিম লাগিয়ে সারা রাত ওভাবেই রেখে দিন। চেহারা ফিরে পাবে আপনার সাধের লেদার।
লেদারের জুতো কখনওই যেন আগুনের কাছাকাছি না থাকে। বেশি উষ্ণতায় চামড়া শক্ত হয়ে যায়। লেদার শ্যু কোনও কারণে ভিজে গেলে তার মধ্যে হ্যান্ড-টাওয়েল ভরে রাখতে পারেন কিছুটা সময়। পুরো জলটা শুষে নিলে টাওয়েল বের করে বাইরে শুকোতে দিন জুতো। তবে লেদারের জিনিস যাতে না ভেজে, সেটা খেয়াল রেখে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। লেদারের জুতো একদিন পরলে পরদিন তাকে বিশ্রাম দিন। পরার একদিন পরে সেটিকে আবার জুতোর আলমারিতে ভরে রাখতে পারেন। এতে চামড়া শুকনো থাকে। শ্যু পরলে অবশ্যই সঙ্গে মোজা পরুন। লেদার তাতে ভালো থাকে। এর সঙ্গে যেটা মাথায় রাখা দরকার, সেটা হল জুতোর ভেতরের অংশও নিয়মিত পরিষ্কার করুন। তা না হলে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। যাদের পায়ে বেশি ঘাম হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা বড় সমস্যা। মোজা কেচে পা পরিষ্কার করলেন। তারপর জুতোর কথা ভুলে গেলেন। তা কিন্তু চলবে না।
জুতোর ভেতরের অংশ পরিষ্কার করার জন্য অ্যালকোহল বা এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল (অ্যান্টি ফাঙ্গাল) কাপড়ে দিয়ে সাফ করে নিতে পারেন। এটা জুতো ভালো রাখার জন্যও প্রয়োজন। ঘামের লবণাক্ত উপাদানে লেদার দিনে দিনে শুকনো হয়ে যায়। লেদারে নিয়মিত পালিশ করাটা এই কারণেই জরুরি। তাতে তা নরম থাকে। শ্যু র্যাকে বা হ্যাঙ্গিং ব্যাগে জুতো বা চটি যখন তুলছেন, তখন সেটা পরিষ্কার করে তবেই রাখুন। হাতে সময় না থাকলে র্যাকের কাছে সাদা কাপড় রেখে দিন। শুধু জুতোর ধুলোটুকু মুছে অন্তত তুলে রাখতে পারবেন। বেশি ধুলো বসে গেলে তখন সাফ করাও বেশ ঝক্কির। যে জুতো বহুদিন পরা হচ্ছে না, তার মধ্যে পুরনো কাগজ বা টিসু পেপার ভরে রেখে দিন। জুতোর শেপ ভালো থাকবে। আর যদি জুতো রাখার অঢেল জায়গা থাকে বাড়িতে, তাহলে প্রতিটিকে নিজস্ব বাক্সে ভরে রাখুন, সঙ্গে লেবেল করে নিন। যেটা যখন দরকার, সহজেই পেয়ে যাবেন।
জুতো যদি সোয়েডের হয়, তাহলে তাকে সাফসুতরো রাখার অন্য পন্থা। কারণ সোয়েড শ্যু পালিশ করা যায় না। সোয়েড ফেড হওয়া আটকাতে সময় থাকতে সামান্য শ্যাম্পু জাতীয় সলিউশন (সোয়েডের জন্য বিশেষভাবে তৈরি) দিয়ে হালকা হাতে স্পাঞ্জ করে নিতে পারেন। তারপর নাইলনের ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে নিন। সব ময়লা উধাও। সোয়েডের রং ফেরানোর কন্ডিশনারও বাজারে পাওয়া যায়। ব্যবহার করতে পারেন সেটাও। এছাড়া ক্যানভাস শ্যু থাকলে তো কথাই নেই। সাধারণ গুঁড়ো সাবান জলে গুলে তাতেই ঘষে পরিষ্কার করে নিন। তারপর রোদে শুকিয়ে নিন।
তাই পরুন ঝকঝকে জুতো আর সঙ্গে রাখুন স্টাইলিশ ব্যাগ। আপনার ব্যক্তিত্বে যোগ হবে অন্য মাত্রা।