সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
পোশাকে ফুল-পাতার নকশা নয়, বরং কবিতা বা গানের লাইন। এমন অভিনব ধারণা মাথায় এল কী করে? প্রশ্ন করেছিলাম চৈতালি দাশগুপ্তকে। তাঁর বুটিক শ্রাবস্তী-তে এমনই বিভিন্ন নকশার টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, কুর্তা, শাড়ি বানানো হয়। চৈতালি জানালেন, ১৯৯২ সাল থেকে যখন ডিজাইনার জামাকাপড় বানানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন তখন থেকেই নাকি পদ্য পোশাকের আইডিয়া তাঁর মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে। প্রথম দিকে লোককে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই এই ধরনের পোশাক বানাতে শুরু করেছিলেন তিনি। ক্রমশ সেটাই শিল্পে পরিণত হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘বাংলা সাহিত্যে অগাধ ভাণ্ডার। বাংলা ভাষার সেই খনির সন্ধান সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই প্রথম পোশাকে কবিতার লাইন তুলে ধরেছিলাম। আমার প্রথম পদ্য পোশাকটি একটি টি-শার্ট। তার ওপর সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার দু’টি পঙ্ক্তি লিখেছিলাম। কবিতার পঙ্ক্তি দুটো— ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা।’ একটা টি-শার্টে এই লাইনগুলো লিখে ডিজাইন করলাম। দারুণ হিট করেছিল।’
পুরুষদের পোশাক দিয়েই চৈতালি তাঁর পদ্য পোশাকের নকশা শুরু করেন। তিনি মনে করেন, মেয়েদের জামাকাপড়ের প্রাচুর্য প্রচুর। তাই পুরুষদের পোশাকে নতুনত্ব আনার কথা ভেবেছিলেন তিনি। টি-শার্টে লেখা আর সঙ্গে ছোটখাট স্কেচ দিয়ে শুরু হয় চৈতালির পদ্য পোশাক। তারপর তা পাঞ্জাবি, কুর্তা, ব্লাউজ ইত্যাদিতে ছড়িয়ে যায়। তবে শাড়ি অনেক পরে করেছিলেন এই নকশায়।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন ঠিকই তবে পরে সুকুমার রায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের কবিতা নিয়েও কাজ করেছেন তিনি। আবোল তাবোল নিয়ে তো তাঁর একটা গোটা সিরিজই রয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতায় হাত দিয়েছেন অনেক পরে। তাঁর কথায়, ‘বিশ্বভারতীর কপিরাইট উঠে যাওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথ তো মুক্ত ছিলেন না, ফলে তাঁর কবিতা ছুঁতে গেলে নানা নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। তখন আমি ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইনগুলোকে ছবির মতো করে পোশাক আঁকাতাম। ২০০০ সালের বৈশাখ মাসে একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম। পুরোটাই রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতাকেন্দ্রিক। সেখানে একটা পোশাকে ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য...’ কবিতাটা ছবির মতো করে ব্যবহার করেছিলাম। এরপরেও বহুবার রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা আমার পোশাকে উঠে এসেছে। যেমন একটা কালো রঙের টি-শার্টে একবার ‘নিবিড় অমা তিমির হতে...’ গানের দু’টি লাইন লিখেছিলাম।’
‘পদ্য পোশাকের ক্ষেত্রে রংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা কালো টি-শার্ট দেখে মনে হল আবোল তাবোলের ‘পান্ত ভূতের জ্যান্ত ছানা’ ছড়ার দুটো লাইন লিখতে। বা একটা নীল রঙের পাঞ্জাবি দেখেই মনে হল ‘নীল দিগন্তে...’ গানের দুটো লাইন যেন এই পাঞ্জাবির জন্যই লেখা হয়েছে। এইভাবে পোশাকের রং দেখে তার সঙ্গে কালার কম্বিনেশন করে আমার পদ্য পোশাক তৈরি হয়। শাড়ির ক্ষেত্রে পাড় আর আঁচলে কবিতার লাইনগুলো লেখা হয়, আর বাকিটা সেই মতো ছবি আঁকা হয়। সুতি
ছাড়াও তসর, সিল্ক ইত্যাদি ফেব্রিকের ওপর কাজ করি। কাজের মাধ্যমেই রঙের সঙ্গে প্রকৃতি মিশে যায়,’ বললেন তিনি।
ভাষা দিবস মাথায় রেখে কখনও কোনও পোশাক বানিয়েছেন কি না প্রশ্ন করলে চৈতালি জানান, তাঁর কাছে প্রতিদিনই ভাষা দিবস। তাই পোশাকের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের আঙিনায় তুলে ধরার অক্লান্ত কাজটা তিনি করে যেতে চান। বিদেশের বাঙালিদের কাছে তো বটেই, এমনকী বিদেশিদের কাছেও তাঁর পদ্য পোশাক রীতিমতো জনপ্রিয় জানালেন চৈতালি। বিদেশিরা তাঁর কাছ থেকে লেখা ও আঁকা শাড়ি কিনেছেন ওয়াল হ্যাংগিং করে টাঙানোর জন্য। তাছাড়াও লন্ডনের বাঙালিদের কাছে তাঁর পদ্য লেখা পাঞ্জাবি এবং টি-শার্ট খুবই হিট। তাঁর এই পদ্য পোশাকের মাধ্যমে মানুষকে বাঙালি সংস্কৃতি ও শিেল্পর মুখোমুখি দাঁড় করাতে চান চৈতালি। তাতে একজন ক্রেতাও যদি অনুপ্রাণিত হন তাহলে সেটাই তাঁর কাছে বড় পাওনা।