সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
কোঁকড়ানো বা প্লেন, লম্বা বা ছোট, চুলের ধরন যেমনই হোক, তেল সবসময়েই চুলের জন্য উপকারী। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন, তেল মেখেও চুলের কোনও উন্নতি হচ্ছে না। এখানেই দরকার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। কোন তেল, কতটা পরিমাণে, কতক্ষণ মাথায় মাসাজ করলে সুফল পাবেন, তাই নিয়েই কথা হচ্ছিল ফিউজ স্যালঁর হেয়ার এক্সপার্ট অভিরূপ নন্দীর সঙ্গে। তিনি আপনাদের জন্য নানা উপায় বলে দিলেন যাতে এই সময়ে স্যালঁয় না গেলেও চুলের যত্নে কোনও ঘাটতি না হয়।
রুক্ষ চুলের যত্ন
এই মরশুমে অয়েল মাসাজের উপকার নিয়ে কোনও প্রশ্নই ওঠে না, জানালেন এই হেয়ার এক্সপার্ট। পাতলা বা ঘন চুল, যেমনটাই থাকুক, রুক্ষ শীতে তার জৌলুস কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। কেশরাশির সেই উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে তেল মাখার কোনও বিকল্প নেই। তাছাড়া যাঁদের চুল এমনিতেই ড্যামেজড, বা স্প্লিট এন্ডস-এর সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও ত্রাতা হয়ে উঠতে পারে অয়েল মাসাজ। চুলের এ ধরনের সমস্যায় অনেকেই বারবার হেয়ার কাট করতে ছোটেন। তাঁরা ভাবেন, চুল কাটলেই তার গোড়া বা শেষের অংশ আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা, জানালেন অভিরূপ। চুল যতই কাটুন, তার পুষ্টির দিকে নজর না দিলে কোনও লাভই হবে না। আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চুলের ডগা ভেঙে যাবে। এই সমস্যায় অয়েল মাসাজ খুবই কাজ দেয়। ডগা ভেঙে যাওয়া কমে। রুক্ষ, অশান্ত চুলকে বাগ মানাতেও তেল পরিচর্যার জবাব নেই। চুল আরও শক্তপোক্ত হয়।
স্ট্রেস কমানো
আজকাল টেনশন কম আছে কার? অনবরত স্ট্রেস নিয়ে চললে তার প্রভাব চুলের ওপরেও পড়ে। অন্তত ৮০-৯০ শতাংশ মহিলা ও পুরুষ এখন অভিযোগ করেন, চুল পড়ে যাচ্ছে। যাঁদের ‘সুন্দর’ চুল, তাঁদেরও অনেকে ‘হেয়ার ফল’-এর কথা বলেন। অভিরূপের বক্তব্য, রোজ ৮০-১০০ হেয়ার স্ট্র্যান্ডস এমনিই পড়ে যাওয়ার কথা। লম্বা চুলে দু’দিন পরে শ্যাম্পু করলে তাই অনেকটা চুল ওঠে। কারণ দু’দিন ধরে যে চুল পড়েছে, তা শ্যাম্পু করার সময় বেরিয়ে আসে। তাই শ্যাম্পু করার সময় অনেক চুল পড়ে গেল ভেবে মানসিক চাপের শিকার হবেন না। তাতে চুল পড়ার সমস্যা আরও বাড়বে। অয়েল মাসাজের আর একটি ইতিবাচক দিক স্ট্রেস রিলিফ। হট অয়েল থেরাপি বা অয়েল হেড মাসাজে চাপমুক্ত হয় মন।
কতক্ষণ মাসাজ, কোন তেল
অভিরূপ জানালেন, ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে তেল মাখা নিয়ে আর একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকেই ভাবেন, সারারাত তেল দিয়ে রাখলে চুল খুব ভালো থাকে। অথবা বেশিক্ষণ তেল মেখে রাখলেই চুলের পুষ্টি হবে। এটা একেবারে ঠিক নয়। আমাদের গরম দেশে এমনিতেই বেশিরভাগ মানুষের স্ক্যাল্প তৈলাক্ত থাকে। কারণ আমাদের ঘাম বেশি হয়। তার মধ্যে তেল মেখে অনেকক্ষণ রাখলে কোনও লাভ তো হবেই না, উল্টে চুল আরও চটচটে হয়ে যাবে। নিয়মিত রোদে বেরলে বা ঘনঘন ব্লো ড্রায়ার দিলেও চুলের বেশি ক্ষতি হয়। এই ধরনের চুলেও তেল লাগানো খুব ভালো। কিন্তু এক্ষেত্রেও একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে রোজ বেরতে হয় যাঁদের, তাঁরা যেন কখনওই তেল লাগিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়বেন না। আগের রাতে তেল মেখে রাখার মতোই ক্ষতিকর এই প্রক্রিয়া। কারণ রাস্তায় বেরলে ঘাম আরও বেশি হয়। তার সঙ্গে তেল মিশে থাকলে স্ক্যাল্পের ক্ষতি হয়। তাতে র্যাশ বেরতে পারে। মাথার ত্বক সেনসিটিভ হয়ে যায়, রেডনেস আসে। স্ক্যাল্পে ইরিটেশন বাড়ে। আর চটচটে স্ক্যাল্পে চুলের ভল্যুমও ভালো থাকবে না। চুলের গোড়াটাও স্টিকি হয়ে থাকে।
তাই সময় মেপে সঠিক তেল ব্যবহারই সুন্দর চুলের চাবিকাঠি। ১৫-২০ মিনিটের অয়েল মাসাজ এবং তারপরে ১-২ ঘণ্টা সেভাবেই রেখে দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। ওই সময়ের মধ্যেই চুলের পুষ্টি হবে। চুল পরিষ্কারের সময় প্রথমবার অয়েল রিমুভাল জেল বেসড শ্যাম্পু লাগান। কারণ ক্রিম শ্যাম্পুতে তেল ভালো করে ওঠে না। জেনে রাখুন, জেল শ্যাম্পু ট্রান্সপারেন্ট হয়, আর এটা স্ক্যাল্পের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি। একই কারণে অ্যান্টি ড্যান্ডরাফ শ্যাম্পুও স্বচ্ছ হয়। তাতে অনেক সময় মেন্থল গ্লোবিউলস থাকে। যেটা শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্পকে আরাম দেয়। কিন্তু ক্রিম বেসড শ্যাম্পু হল পুরো চুলের যত্নের জন্য। বিশেষ করে কোঁকড়া-শুষ্ক চুলে ক্রিম বেসড শ্যাম্পুর কন্ডিশনিং উপাদান বেশি ভালো কাজে দেয়।
তেলের ক্ষেত্রে অভিরূপ বলছেন, অলিভ অয়েল আর ক্যাস্টর অয়েলের কথা। এই দুই তেল সেনসিটিভ, ড্রাই ও অয়েলি— সবরকম চুল বা স্ক্যাল্পেরই সহায়। তাই সবার জন্য অলিভ অয়েল এবং ক্যাস্টর অয়েল উপযোগী। তবে ছেলেদের চুলে হাফ ক্যাপের বেশি পরিমাণ এই তেল লাগে না। ক্যাস্টর অয়েল একটু ঘন। অলিভ অয়েল পাতলা। তাই দু’টিকে ১:২ অনুপাতে মিশিয়ে একটি ছোট কন্টেনারে নিয়ে ৩০ সেকেন্ড মাইক্রোওয়েভে গরম করে নিন।
কেউ অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল না পেলে সাধারণ নারকেল তেলও লাগাতে পারেন। কোনও অসুবিধা নেই। তেল তুলোয় ভিজিয়ে তার অতিরিক্ত অংশ চেপে বের করে দিয়ে সেটা শুধুই স্ক্যাল্পে লাগান। মনে রাখবেন, এটা চুলের ডগা পর্যন্ত সরাসরি লাগানোর জন্য নয়।
কেউ যদি ভাবেন চুলের ডগা পর্যন্ত তেল না লাগালে কী করে ভাঙা অংশ ঠিক হবে, তাঁদের জন্য অভিরূপ জানাচ্ছেন, স্ক্যাল্পে লাগালেই পুরো চুলের পুষ্টি হবে। কারণ চুলের গোড়া (ফলিকল) ঠিক হলে বাকি অংশ ভালো থাকবে। এই তেলের মিশ্রণ মাসাজ করলে মাথার রক্ত চলাচলও ভালোভাবে হবে। তাতেও ফলিকল-এর উপকার। চুলের ন্যাচারাল রং, গ্রোথ সব সুন্দরভাবে হবে। তাই চুলে অয়েল মাসাজের কোনও বিকল্প নেই।
কীভাবে মাসাজ
কেউ যদি নিজে মাসাজ করেন, তাহলে তুলোয় তেল ভিজিয়ে মাথার পিছনে ঘাড়ের ঠিক ওপর থেকে সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে মাসাজ শুরু করুন। ধীরে ধীরে ওপরে উঠুন। কপালের কাছে পৌঁছে যান। এইভাবে ৫-১০ বার করলে ঠিকঠাক মাসাজ হবে। এই প্রক্রিয়া সপ্তাহে একদিন করে করতে পারলে উপকার পাবেন।