ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
ছবির গল্প সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই পরিচালক নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানান, ‘মানুষের প্রকৃত গোত্র কী! কাছের মানুষ হতে গেলে কি গোত্র লাগে নাকি? ভগবানের কাছে পুজো দেওয়ার সময় গোত্র কি খুব গুরুত্বপূর্ণ? এইসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই ছবিতে। ধর্মের অর্থ হল, যা তোমাকে ধারণ করে। যেটা তোমার একদম নিজের। সব ধর্মের মানুষের অধিকার আছে নিজের মতো করে ধর্ম পালন করার এবং ভগবানকে আরাধনা করার। সব ধর্মকে আপন করে নেওয়ার কথা যে বলি সেটা আমার মতে বাড়ির থেকেই শুরু হওয়া উচিত। মুক্তিরানি দেবী একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা। তিনি একসময়ে শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর স্বামী নেই। তাঁর নিজের ছেলে অনির্বাণ বিদেশে থাকে। মুক্তিরানি দেবীকে দেখাশোনার জন্য বাড়িতে রয়েছে তারেক আলি। কীভাবে তারেক আলি মুক্তিরানি দেবীর নিজের ছেলে হয়ে গেল ছবিতে সেটাই দেখা যাবে।’ বাকিটুকু জানতে ছবি মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ছবিতে শিল্পীরা হলেন, অনসূয়া মজুমদার (মুক্তিরানি দেবী), নাইজেল আকারা (তারেক আলি), সাহেব চট্টোপাধ্যায় (অর্নিবাণ)। এছাড়াও অন্য শিল্পীরা হলেন মানালি দে, খরাজ মুখোপাধ্যায়, সন্তু মুখোপাধ্যায়, বাদশা মৈত্র, অম্বরীশ ভট্টাচার্য প্রমুখ। একটি গানের দৃশ্যে ওমকে দেখা যাবে।
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রদের সাজপোশাক সম্পর্কে কসটিউম ডিজাইনার ও স্টাইলিস্ট অনুপম চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘ক্যারেক্টর ডিজাইন মানে যে শুধু তার মতো জামাকাপড় তৈরি করলাম তা নয়। ছবিতে মুক্তিরানি চরিত্রটি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করা। ফলে তাঁর জামাকাপড় থেকে ব্লাউজ, গয়নার ধরন, চুলের স্টাইল ইত্যাদি খুঁটিনাটির প্রতি নজর রাখতে হয়েছে। ছবিতে মুক্তিরানি দেবী অর্থাৎ অনসূয়া মজুমদারকে সারা ছবিতে ধনেখালি শাড়িতে দেখা যাবে। বর্ডার ছাড়াও শাড়ির জমিতে রয়েছে পেজলি বা জুঁই ফুলের মোটিফ। তার সঙ্গে মিক্স ম্যাচের কলমকারি কাট ওয়ার্কের ব্লাউজ তাঁকে পরানো হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু দৃশ্যে তিনি বটলগ্রিন বা ব্লু অথবা ব্রাউন বর্ডারের অফ হোয়াইট কালারের কটকি শাড়ি পরেছেন। সারা ছবিতে ঘাড়ের কাছে হাতের ‘এলো’ খোঁপা করা। একটি দৃশ্যে ঢাকাই জামদানির সঙ্গে হোয়াইট কালারের ক্রোশিয়া ব্লাউজে তাঁকে দেখা যাবে। হাতে থাকবে বল মুখের সারদা বালা, গলায় বিছে চেন, কানে ঠোকাই পাশার গয়না। আবার অপর আরেকটি দৃশ্যে তাঁকে লাইট ব্রাউন কালারের টেম্পল বর্ডারের তসর সিল্ক শাড়ির সঙ্গে অফ হোয়াইট ক্রোশিয়া ব্লাউজ পরিহিত অবস্থায় দেখা যাবে। পারিবারিক একটা অনুষ্ঠানে তাঁকে কানে টপ, হাতে দুটো করে চুড়ি, গলায় চেন পরানো হয়েছে। ওঁর কয়েকটি গয়না কাস্টমাইজড গোল্ড প্লেটিং করা। পুরনো আমলের রোল্ড গোল্ডের চশমায় তিনি ধরা দেবেন। তাঁর সম্পূর্ণ সাজপোশাকে একটা ‘ক্লাসি’ রুচির ছাপ রয়েছে।’
অনুপমের থেকে আরও জানা গেল যে তারেক আলি ওরফে নাইজেল আকারা ছবিতে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট পরেছেন। বাড়ির বাইরের দৃশ্যে কখনও তাঁকে জিনসের সঙ্গে লিনেন পাঞ্জাবিতে দেখা যাবে। নমাজ পড়ার সময়ে তাঁকে সাদা আদ্দির পাজামা-পাঞ্জাবিতে দেখা যাবে। এছাড়া একটা দৃশ্যে তিনি মেরুন রঙের পাঠানি স্যুট পরেছেন। বহিঃর্দৃশ্যে তাঁকে পায়ে কিটো পরতে দেখা যাবে। এছাড়া, অনির্বাণরূপী সাহেব চট্টোপাধ্যায় ঘরের দৃশ্যে রাউন্ড নেক টি শার্টের সঙ্গে ট্র্যাক প্যান্টে ধরা দেবেন। তবে বহির্দৃশ্যে আলিগড়ি পাজামার সঙ্গে হ্যান্ডলুমের নীল, কমলা, হলুদ ইত্যাদি একরঙা পাঞ্জাবিতে দেখা যাবে। তিনি বাঁ হাতে ক্লাসি ঘড়ি এবং পায়ে ওপেন টোস জুতো ব্যবহার করেছেন। এক-দুটি দৃশ্যে ইন্ডিগো প্রিন্টেড পাঞ্জাবি পরেছেন। ঝুমা অর্থাৎ মানালি দে মিক্সম্যাচ জামাকাপড় পরেছেন। প্রিন্টেড পাটিয়ালার সঙ্গে শর্ট লেন্থের সলিড কালারের কুর্তা, মিক্স ম্যাচ ওড়না, হাতে নানা রঙের চুড়ি, লাল, হলুদ, সবুজ ইত্যাদি রঙের গাছের বীজের তৈরি কানের দুল, চুলের লম্বা বেণীর মধ্যে রানি, গোলাপি, হলুদ রঙের পরানজি, কপালে ডট বিন্দি, চুলে রঙ্গন, কৃষ্ণচূড়া, হলুদ কলকে ফুল ব্যবহার মানালি করেছেন। সারা ছবিতে নাকে নাকছাবি পরিহিত অবস্থায় তাঁকে দেখা যাবে। দু-তিনটি দৃশ্যে তিনি হ্যান্ডলুম পরেছেন। রঙ্গবতী গানের দৃশ্যে তাঁকে সাদা-লাল কটকি শাড়ির সঙ্গে ব্যাক ওপেন জিগজ্যাগ করা ব্লাউজ, রুপোর গয়না পরানো হয়েছে। তবে রঙ্গবতী গানের দৃশ্যে ওমকে আদিবাসী খাঁটি রুপোর গয়নার সঙ্গে লাল হাতকাটা জ্যাকেট এবং টারকোয়াইশ নীল রঙের সম্বলপুরীর শাড়িকে ধুতি করে পরানো হয়েছে। সঙ্গে তাঁকে দিয়ে বাটিকের উত্তরীয় ব্যবহার করানো হয়েছে। এই দৃশ্যে দেবলীনা কুমারকে হলুদ মেরুন কটকি সিল্ক শাড়ির সঙ্গে রুপোর গয়না, আদিবাসী বিন্দি, শান্তিনিকেতনী চুলের কাঁটা ব্যবহার করেছেন বলে শোনা গেল অনুপমের কাছ থেকে। এছাড়া বাদশা মৈত্র কটন চিনোজের সঙ্গে শার্ট পরেছেন। ওঁর পোশাকের কালার প্যালেট বেজ, পিংক, হোয়াইট। অন্য দৃশ্যে তাঁকে ট্র্যাক প্যান্টের সঙ্গে রাউন্ড নেক টি-শার্টের সঙ্গে চোখে রে ব্যান ব্র্যান্ডের এভিয়েটর সানগ্লাস এবং পায়ে স্নিকার্সে তাঁকে দেখা যাবে বলে জানালেন অনুপম। সেই সঙ্গে অনুপম আরও বলেন যে, এই দুই পরিচালকের ছবির ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হয় চরিত্র অনুযায়ী সাজপোশাক যেন যথার্থ হয়। কখনও চরিত্র থেকে বেরিয়ে গিয়ে সাজপোশাক যেন ফ্যাশনেবল না হয়। বরঞ্চ চরিত্রের মধ্যে যেন নিজস্বতা থাকে। এই ছবিতে রাধাকৃষ্ণের সাজপোশাক থেকে গয়না, ঠাকুরের ভোগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ছবির শাড়ি স্পনসর করেছেন প্রিয় গোপাল বিষয়ী— এমন কথা দোকানের কর্ণধার সৌম্যজিৎ লাহা জানালেন।
কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন
নন্দিতা রায়, সংলাপ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ক্যামেরায় সুপ্রিয় দত্ত, সম্পাদনায় মলয় লাহা, সুরকার অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, গান গেয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়, অরিজিৎ সিং, শ্রেয়া ঘোষাল, ইমন চক্রবর্তী, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অদিতি মুন্সী প্রমুখ। প্রযোজনা উইন্ডোজ, নিবেদনে অক্ষয়কুমার পারিজা, সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস।