অর্থকর্মের ক্ষেত্রে প্রগতি বজায় থাকবে। মরশুমি দ্রব্যের ব্যবসায় লাভ বাড়বে। শরীর-স্বাস্থ্য এক প্রকার থাকবে। ... বিশদ
উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন, ১৯৯১ ছিল এরকমই একটি আইন। আমার মতে, এটি সংক্ষিপ্ত এবং মাত্র ৮টি ধারায় সংযুক্ত। এটির মজা এই যে, উপাসনাস্থলের চরিত্রকে স্বাধীনতার উষালগ্নের চেহারায় ফেরানোই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। কোনোরকমের ‘যদি’ বা ‘কিন্তু’ বা ‘তৎসত্ত্বেও’ বা ‘কোনও দ্বিধা ছাড়াই’ এটি পরিষ্কার ছিল।
আমি সবাইকে এই আইনের ধারা ৩ এবং ধারা ৪(১) পড়ে দেখতে অনুরোধ করব, এটি নিম্নরূপ:
৩. উপাসনাস্থলগুলির পরিবর্তন করা বা রূপান্তরে বাধা: কোনও ব্যক্তি কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কোনও উপাসনাস্থল বা তার কোনও অংশকে একই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বা ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বা তার কোনও অংশের উপাসনাস্থলে পাল্টে ফেলতে বা রূপান্তর করতে পারবেন না।
৪. নির্দিষ্ট উপাসনাস্থলগুলির ধর্মীয় চরিত্র সম্পর্কে ঘোষণার ব্যাপারে আদালতের এক্তিয়ার: (১) এতদ্দ্বারা ঘোষণা করা হচ্ছে যে, ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ তারিখ থেকে একটি উপাসনাস্থলের যে ধর্মীয় চরিত্র রয়েছে সেটাই অবিকল বজায় রাখতে হবে।
অযোধ্যায় অবস্থিত রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত বিতর্কিত উপাসনাস্থলটিই একমাত্র ব্যতিক্রম।
আইনটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, চেতনা ও পরিধির গ্রহণযোগ্যতা ছিল ব্যাপক। আমার মতে, আইনটির উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে। কারণ প্রায় ৩০ বছর ধরে উপাসনাস্থল সংক্রান্ত বিষয়ে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় ছিল। সর্বোপরি, লোকজন এটাই গ্রহণ করে নিয়েছে যে একটি মন্দির (হিন্দু ভক্তজনের উপাসনাস্থল) মন্দিরই থাকবে, একটি মসজিদ (মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের উপাসনাস্থল) মসজিদই থাকবে, একটি গির্জা (খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের উপাসনাস্থল) গির্জাই থাকবে, একটি গুরুদ্বার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনাস্থল) গুরুদ্বারই থাকবে, একটি সিনাগগ (ইহুদিদের ধর্মচর্চার কেন্দ্র) একটি সিনাগগই থাকবে। এছাড়াও অন্য যত ধর্মীয় উপাসনাস্থল রয়েছে, ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ তারিখে তাদের যে চরিত্র বৈশিষ্ট্য ছিল প্রতিটির জন্য সেটাই বজায় রাখতে হবে।
সচেতনভাবে উপেক্ষা
দুর্ভাগ্যবশত, আইনটির কার্যকারিতা সম্পর্কে হাতে তথ্যের পরিমাণ যৎকিঞ্চিৎ। কিছু প্রশ্নের প্রেক্ষিতে PRISM নামে একটি পার্লামেন্টারি রিসার্চ ফেসিলিটি থেকে জানা গিয়েছে যে, এই আইনে গ্রেপ্তার এবং আদালতে অভিযুক্তকরণ সংক্রান্ত তিনটি ক্ষেত্রে তৎকালীন সরকার কৌশলী জবাব দিয়েছিল। আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে এটুকুই বলা যেতে পারে যে, পরবর্তী সরকারগুলি আইনটিকে সচেতনভাবে উপেক্ষা করেছে।
এবার আদালতের দিকে নজর রাখা যাক। ২৮ অক্টোবর, ২০২০। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। আর্জিগুলি নির্দেশনামূলক: উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২, ৩ ও ৪ অকার্যকর এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করুন। কারণ বর্বর হানাদারদের দ্বারা অবৈধভাবে নির্মিত ‘উপাসনাস্থলগুলি’কে বৈধতা দিতে চায় আইনের ওই ধারাগুলি৷ উল্লেখ্ করার মতো বিষয় এই যে, ৩ ও ৪ নম্বর ধারা দুটির উপরেই আইনটি দাঁড়িয়ে আছে। ৩ ও ৪ ধারা দুটি বাদ দিলে এই আইনে আর কিছুই থাকে না। এই ব্যবস্থাগুলি ভারতের সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১, ২৫, ২৬ ও ২৯ অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছে, এমন যুক্তি দেখিয়ে আইনটিকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে৷ আরও উল্লেখ্য যে, এই ‘উপাসনাস্থলগুলি’ পিটিশনারের মতে, বর্বর হানাদারদের হাতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। আর্জি তিনটির উদ্দেশ্য, এবং সেখানে লক্ষ্য নির্দিষ্টভাবে কোন সম্প্রদায়, পিটিশনার তা গোপন করেননি। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ এবং শিখ’ সম্প্রদায়ে ধর্মস্থানগুলি পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছেন তিনি। এই রিট পিটিশন ২০২০ সাল থেকে শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন।
জ্ঞানবাপী নিয়ে বিবাদ
২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারাণসীর আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ পরিচালনা কমিটির তরফে দায়ের করা একটি স্পেশাল লিভ পিটিশন গ্রহণ করে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২০২৩ সালের ৩ আগস্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল ওই এসএলপি’তে। জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে বা প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট জেলা জজ। হাইকোর্ট এই সংক্রান্ত একটি আপিল খারিজ করে দেয়। এরপর পিটিশনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট এক আদেশে বলেছে যে, ‘আমরা হাইকোর্টের দৃষ্টিভঙ্গির থেকে ভিন্নমত হতে পারছি না, বিশেষত সংবিধানের ১৩৬ অনুচ্ছেদের অধীনে এক্তিয়ার প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে, ... এবং সলিসিটর জেনারেলের দাখিলটি আমরা নথিভুক্ত করেছি ... সমগ্র প্রক্রিয়াটি শেষ করতে হবে ‘নন-ইনভেসিভ মেথডলজি’ বা নির্মাণের কোনও ক্ষতি করবে না এমন পদ্ধতিতে। এএসআই’কে (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) এই সতর্কতার সঙ্গেই কাজটি করতে হবে।’
প্যান্ডোরার বাক্সটি খোলা হয়েছিল এমনভাবেই। আদালত বাদীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করেনি। বাদীরা ২০২২ সালের ১৮ নম্বর দেওয়ানি মামলা দাখিলসহ দাবি করেন যে জ্ঞানবাপী মসজিদ প্রাঙ্গণে নাকি তাঁদের দেবতা আছেন, তাঁকে ঘিরেই আচার অনুষ্ঠান করার অধিকারী তাঁরা। বাদীদের স্পষ্ট প্রচেষ্টা এটাই ছিল যে, একটি মসজিদের ভিতরে হিন্দু দেবতাদের পূজা-অর্চনা করা, ওই দেবতা নাকি সেখানেই রয়েছেন! যদি তাঁদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন এবং দেবতাদের পুজো করার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তাতে মসজিদটি অন্তত আংশিকভাবে একটি মন্দিরে রূপান্তরিত হবে। সেটি ১৯৯১ আইনের ৩ এবং ৪ ধারার সরল ভাষাতেই বলা ছিল।
চেইন রিয়্যাকশন
এই মামলায়, বাদীর উদ্দেশ্য এবং নামাজের অনুমতি দেওয়ার ফলাফল দেখে নেওয়া কি কঠিন ছিল? আমার মতে, মামলাটিতে সংবিধানের
১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে ‘সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার’ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের উচিত ছিল নিজ ক্ষমতা
প্রয়োগ করা। ৩০ বছর যাবৎ মান্য করা হয়েছে যে আইনটি সেটি বহাল রাখার নির্দেশদানসহ মামলাটি খারিজও করা যেত।
জ্ঞানবাপী মামলার আদেশ অনুসরণে একাধিক বিবাদ উপস্থিত হয়েছে: উত্তরপ্রদেশে মথুরার ইদগাহ মসজিদ ও সম্ভল, দিল্লিতে কুতুব কমপ্লেক্স এবং রাজস্থানে আজমিরের দরগাহ। এই সঙ্কট তবে কোথায় গিয়ে থামবে?
জ্ঞানবাপী অর্ডারের পরিণতি হবে কুখ্যাত ‘এডিএম জবলপুর মামলা’র মতোই।