মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
শ্রীরামকৃষ্ণের লৌকিক জীবনের অন্য একদিকে আমরা দেখিতে পাই—তাঁহার বিবাহ। বিবাহ-সংস্কার তিনি স্বীকার করিয়াছিলেন, কিন্তু সহধর্মিণীতে তাঁহার স্ত্রী-বোধ ছিল না, পত্নীর মধ্যে তিনি মহাশক্তির উপলব্ধি করিয়াছিলেন। তিনি সাধক এবং সন্ন্যাসী, তথাপি সংসারের মধ্যেই বাস করিয়া শিক্ষা দিয়া গেলেন,—সংযম এবং ঐকান্তিকতা থাকিলে সংসারে থাকিয়াও মানুষ জীবনের পরম সার্থকতা লাভ করিতে পারে। এইজন্যই শ্রীরামকৃষ্ণ গৃহী এবং ত্যাগী সকলেরই আদর্শ এবং উপাস্য।
তাঁহার সকল উপদেশের সার, এক কথায় বলিতে গেলে—কামিনীকাঞ্চন-ত্যাগ। ইহাতে অনেকে মনে করিয়া থাকেন, তিনি নারীকে অবজ্ঞার চক্ষে দেখিতেন। প্রকৃতপক্ষে নারীজাতির প্রতি তাঁহার যে বিন্দুমাত্র ঘৃণা বা হীন ধারণা ছিল না, তাহার যথেষ্ট প্রমাণ রহিয়াছে। তাঁহার জীবনচরিত আলোচনা করিলে সকলের বড় যে কথাটি মনে আসে তাহা এই,—শ্রীরামকৃষ্ণ ভগবানের মাতৃরূপের পূজারী।
“যে মহীয়সী নারীর গর্ভে শ্রীরামকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহাকে তিনি আজীবন ভক্তির সহিত পূজা করিয়াছেন, উপনয়ন-কালে ধাত্রীমাতা জনৈকা কর্মকারপত্নীর হস্ত হইতেই ব্রহ্মচর্য-ব্রতধারী এই ব্রাহ্মণকুমার প্রথম ভিক্ষা গ্রহণ করেন। সুদীর্ঘকাল তিনি যে মন্দিরের পূজারী এবং যেস্থানে তিনি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন, সেই দক্ষিণেশ্বর মাতৃমন্দিরের প্রতিষ্ঠাত্রীও ছিলেন নারী। তন্ত্রসাধনকালে তিনি বহুশাস্ত্র-পারদর্শিনী এক নারীকেই গুরুরূপে স্বীকার করিয়াছেন; আবার নারীকে তিনি দীক্ষাদানও করিয়াছেন। সকল নারীতেই ছিল তাঁহার মাতৃভাব, এমন-কি অবজ্ঞতা নারীর মধ্যেও তিনি জগজ্জননীর প্রতিমূর্তি দর্শন করিয়া তাঁহাদিগকে প্রণাম করিয়াছেন। তাঁহার জীবনচরিত অনুশীলন করিলে ইহাই বুঝা যায় যে, তিনি নারীকে লেশমাত্র অবজ্ঞা বা অগ্রাহ্য করেন নাই, বরং আজীবন মাতৃজ্ঞানে তাঁহাদের পূজাই করিয়াছেন।” সংযমের অভাবে ভারতের বর্তমান অধঃপতন, নরনারী শৌর্যবীর্যহীন, মনুষ্যত্বহীন। তাহা লক্ষ্য করিয়াই শ্রীরামকৃষ্ণের এই সতর্কবাণী,—কাম ও কাঞ্চনের বিরুদ্ধে, ভোগ-সর্বস্বতার বিরুদ্ধে, কিন্তু নারীজাতির বিরুদ্ধে নহে। তাহা না হইলে, তিনি নিজে বিবাহ করিলেন কেন? দক্ষিণেশ্বরে কামিনীকাঞ্চন-ত্যাগের শিক্ষা-দানকালেও তিনি পত্নীকে ত্যাগ অথবা অবহেলা করেন নাই।