আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, খেলা বাঁচে সমর্থকদের জন্য। কলকাতাকে বলা হতো ফুটবলের মক্কা। দু’টি দল—ইস্ট বেঙ্গল এবং মোহন বাগান। কলকাতা লিগ হোক, শিল্ড বা ডুরান্ড... গ্যালারির প্রত্যেকটি কোণা ভরে না গেলে তা ছিল তিলোত্তমার অপমান। শুধুই দুই বড় দল নয়, মহমেডান কিংবা অন্য দলের খেলাতেও অফিস ফেরত ময়দানে ভিড় জমাত বাঙালি। সাতের দশকে মহমেডান মাঠের গ্যালারি ভেঙে মৃত্যু দেখেছে এ শহর। ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট ইডেন গার্ডেনসে ইস্ট বেঙ্গল-মোহন বাগানের ম্যাচে মারামারি এবং তারপর পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের। আর ছিল ১৯৬৯ সালের ইডেন। বিল লরির অস্ট্রেলিয়া টিমের সঙ্গে মনসুর আলি খান পতৌদির ভারতের টেস্ট ম্যাচ। ডেইলি টিকিট দেওয়া হবে... এই ঘোষণার পরই লাইন পড়ে গিয়েছিল ইডেনের সামনে। ভিড়ের চাপ সামলানো যায়নি। ইডেনের ৬ নম্বর গেটে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন ছ’জন। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল... সমর্থনের জোয়ার তারপরও স্তিমিত হয়নি। অতীতকে মনে রেখেও ক্রীড়াপ্রেমীরা দৌড়েছে ময়দানে। স্টেডিয়ামে। একবারের জন্যও কি ভাবা যায় সম্পূর্ণ ফাঁকা মাঠে বিশ্বকাপের কথা? যায় না। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নার্ভাস হওয়ার নেপথ্যে যেমন দর্শক... দর্শকের তাঁর প্রতি আশা, ঠিক তেমনই ভরা গ্যালারি সেই ক্রিকেটার বা ফুটবলারের অনুপ্রেরণা।
২০০৩ সাল থেকে সুধীর চৌধুরী দেশের মাটিতে হওয়া ভারতের সব ম্যাচ দেখেছেন। বিহারের মুজফফরপুরের বাসিন্দা তিনি। পেশায় শিক্ষক। কিন্তু আবেগ তাঁর ক্রিকেট। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে শচীন তেন্ডুলকার। সংস্থান খুব বেশি ছিল না, তাই সাইকেলে করে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যেতেন। বিহারের মুজফফরপুর থেকে মুম্বই পর্যন্ত ২১ দিন সাইকেল চালিয়ে গিয়েছিলেন সুধীর চৌধুরী। প্রত্যেক ম্যাচে মাঠে যাওয়ার আগের দিন রাতে নিজের শরীর তেরঙ্গা রাঙান সুধীর। আর গেরুয়ার উপর লেখা থাকে ‘তেন্ডুলকার ১০’। ২০১১ সালে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ জয়ের পর স্বয়ং শচীন তেন্ডুলকার মাঠে ডেকে এনেছিলেন তাঁকে। জাহির খানকে বলেছিলেন, বিশ্বকাপটা নিয়ে আসতে। শচীন সেই কাপ তুলে দিয়েছিলেন সেই মহান ক্রিকেট ফ্যানের হাতে। গোটা দুনিয়া আজ চেনে সুধীরকে। কেউ সুধীর চৌধুরী বলে। কেউ সুধীর গৌতম। কিন্তু ভারতের ক্রিকেট ফ্যান বলতে তাঁর নামই যে আসে সবার আগে! তিনি বাংলাদেশে গিয়েছেন সাইকেলে চেপে। মীরপুরে বাংলাদেশ সমর্থকদের হাতে মারও খেয়েছেন। কোনওমতে প্রাণে বাঁচেন সে দেশের পুলিসের হস্তক্ষেপে।
শচীন বুঝেছিলেন, তাঁর ক্রিকেট আজ পৃথিবী বিখ্যাত এই ভক্তদের জন্যেই! ভক্ত বা দর্শকরা না থাকলে একজন খেলোয়াড় অপূর্ণ। মারামারি, দুর্ঘটনা, মৃত্যু... যাই হোক না কেন, সমর্থক ভিড় করে গ্যালারিতে। আর্থিক সংস্থানের কথা না ভেবে, বয়সের তোয়াক্কা না করে। তাই তো চারুলতা প্যাটেল ৮৭ বছর বয়সেও গ্যালারিতে এসে বসেন। বিরাট কোহলির খেলা দেখতে। তাঁর পছন্দের খেলোয়াড়ও যে বিরাট। তিনি বিশ্বাস করেন, ভারত এবারও বিশ্বকাপ জিতবে। কাপ হাতে উঠবে কোহলির। ভারতের অধিনায়কই যে তাঁকে টিকিট দিয়েছেন শেষ তিনটি ম্যাচের। ফাইনাল পর্যন্ত। এমন সমর্থকরা না থাকলে যে আজ শচীন বা কোহলির জন্মই হতো না!