আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
বিপদের বাস্তব দিকটি গুরুত্ব পেলে পথনিরাপত্তার জন্য অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ট্রাফিক আইন এখন আগের চেয়ে অনেক কঠোর নিঃসন্দেহে। একইসঙ্গে কলকাতার মতো শহরগুলিতে নিয়ম করে পথনিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। তার পরেও নিয়ন্ত্রণে আনা মুশকিল হচ্ছে বেপরোয়া কার ড্রাইভিং, হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানো প্রভৃতি। গাড়ি চালানোর পক্ষে অনুপযুক্ত ব্যক্তিরাও (মত্ত এবং/অপ্রাপ্তবয়স্ক, উপযুক্ত ড্রাইভিং ট্রেনিং নেয়নি) ব্যস্ত রাস্তায় স্টিয়ারিং ধরে বেড়িয়ে পড়ছে, সিগন্যাল ভেঙে গাড়ি চালানোর ঘটনা আকছার ঘটছে। গাড়ির বিমা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের ছাড়পত্রও অনেকে হালফিল করে রাখেন না। পণ্যবাহী গাড়িগুলির একাংশ বহনক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য বহন করছে। নিয়ম ভেঙে দিনের বেলাতেই শহরের ব্যস্ত এলাকায় ঢুকে পড়ছে অনেক পণ্যবাহী গাড়ি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক গাড়ি অ্যাম্বুলেন্সকে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার মানবিকতা দেখাচ্ছে না। বাস, ট্যাক্সির মধ্যে অন্যায় রেষারেষির ফলেও দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু যে গাড়ি উল্টে পড়ছে বা মানুষ গাড়িচাপা পড়ছে তা নয়, যাত্রীদের হাত পায়ের মতো অঙ্গ বাদও চলে যাচ্ছে। বাসস্টপে বাস থামাতে আপত্তি থাকে অনেক বাসের। তারা বরং রাস্তায় যেখানে সেখানে যাত্রী তোলে। ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে বেপরোয়াভাবে রাস্তা পারাপার করতে গিয়েও বহু মানুষ বিপদ ডেকে আনছে। নতুন বিপদ হয়েছে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে অথবা কানে মোবাইল রেখে কথা বলতে বলতে রাস্তা অনেকে পেরচ্ছে এবং গাড়িতে ওঠানামা করছে। মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলায়, অনেকে এর ফলে, মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এই শ্রেণীর মধ্যে কমবয়সি ছেলেমেয়েই বেশি। আর একটি পরিতাপের বিষয় হল, পুলিসকর্মীদেরও একটি অংশ ট্রাফিকবিধি সম্পর্কে সচেতন নন অথবা জেনেশুনেই তা ভঙ্গ করছেন। তা দেখে যুবকদের একটি অংশ প্ররোচিত হচ্ছে।
কিন্তু, এই অন্যায় যে আর চুপচাপ মেনে নেওয়া হবে না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফে। আঠারোটি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীদের সুপারিশ মেনে কেন্দ্র একটি সংশোধনী বিল আনছে। কঠোরতর এই মোটর ভেহিকলস সংশোধনী বিলটিকে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র দিয়েছে। ট্রাফিক এবং মোটর ভেহিকলস আইনলঙ্ঘনের প্রতিটি পর্যায়ে অনেক বেশি অর্থদণ্ড এবং প্রয়োজনে কারাদণ্ডের ব্যবস্থা থাকছে। ওইসঙ্গে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করারও সংস্থান থাকছে। ড্রাইভিং ট্রেনিংয়েও কিছু বদল আনা হচ্ছে। বিলটি সংসদের চলতি অধিবেশনেই পেশ করা হবে। বিগত লোকসভায় পাশ হয়ে গেলেও এটি রাজ্যসভায় পাশ করানো যায়নি। রাজ্যসভায় পাশ করানোর আগেই বিলটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আশা করা যায়, এবার সর্বসম্মতিক্রমেই রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয়ে যাবে। এবং, তার ভিত্তিতে সারা দেশেই একই কঠোরতর আইন বলবৎ হবে। ট্রাফিক আইনভঙ্গকারী পুলিসকর্মীদের বিরুদ্ধেও কঠোর মনোভাব নিয়েছেন কলকাতা পুলিস কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে পথদুর্ঘটনা এবং তার কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষের অকালমৃত্যু ঠেকাতে যে পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা স্বাগত। কারণ, আইনের প্রয়োজনে মানুষ নয় মানুষের প্রয়োজনেই আইন।