আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
স্কুলছুট আটকাতে সারা দেশে গত কয়েক দশক যাবৎ যতগুলি সরকারি প্রকল্প চালু রয়েছে তার শীর্ষে রাখা যায় মিড ডে মিলকে। আমরা জানি, এই প্রকল্পে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে স্কুলে দুপুরের আহার দেওয়ার কথা। কারণ, এমন যেন না-হয় যে ঘরে খাবার নেই বলে ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারেনি। বরং উল্টোটা—স্কুলে গেলে তারা পড়ার সুযোগের পাশাপাশি খেতেও পাবে। আদর্শগত বিচারে এই কর্মসূচির বিকল্প হয় না। কিন্তু গলদটা গোড়ায়। অর্থ বরাদ্দের পরিমাণটা এই রকম—প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চাদের জন্য মাথাপিছু ৪ টাকা ৩৫ পয়সা আর উচ্চ প্রাথমিকের বাচ্চাদের জন্য ৬ টাকা ৫১ পয়সা। এর মধ্যে চাল ডাল সব্জি ডিম তেল নুন মশলা গ্যাসের খরচ রাঁধুনির মাহিনা সবই ধরা আছে। যে-দেশে পাঁচ টাকার নীচে ছোট এক ভাঁড় চা মেলে না সেই দেশে এই বরাদ্দে বাড়ন্ত বাচ্চাদের একবেলার প্রধান আহার দেওয়ার ব্যবস্থা কতটা হাস্যকর তা ভেবে দেখতে হবে এই পরিকল্পনা যাঁরা রচনা করেছেন তাঁদেরকে। তার মধ্যে আবার চুরি বাটপাড়ির অভিযোগও ওঠে। ধন্য সেই বিবেক! হাস্যকর বরাদ্দটা বাড়িয়ে যুক্তিসংগত করে দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। এই দাবি শুধু বাংলা বা অন্যকোনও একটি রাজ্যের নয়, সারা দেশের। অবশেষে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে ‘সুখবর’ দিয়েছে যে এবার থেকে মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু সেটা কত? প্রাথমিকের বাচ্চাদের জন্য মাথাপিছু ১৩ পয়সা আর উচ্চ প্রাথমিকের বাচ্চাদের জন্য ২০ পয়সা। অর্থাৎ নতুন বরাদ্দ হচ্ছে প্রাথমিকে ৪ টাকা ৪৮ পয়সা আর উচ্চ প্রাথমিকে ৬ টাকা ৭১ পয়সা।
লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকাকে যে-দেশে প্রতিনিয়ত পয়সার চেয়েও হালকা মনে হচ্ছে সেই দেশে এর চেয়ে বড় রসিকতা কী হতে পারে? শিক্ষা এবং মিড ডে মিল শিশুদের অন্যতম এক অধিকার। সেটা তাদের দিতেই হবে এবং যুক্তিগ্রাহ্য ভাবে—এখনকার মতো খাতাকলমে নয়। পুষ্টিকর মিড ডে মিল দেওয়া দরকার ৩৬৫ দিন। তার জন্য শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়ে অন্তত দ্বিগুণ করা জরুরি। বাকি টাকা জোগাড় করা খুব কঠিন নয়। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছাটাই বড়। সহজ উপায়গুলি হল—শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ; সরকারের ফালতু ব্যয়ে কাটছাঁট; ধনীদের উপর কর হার বৃদ্ধি; আন্তরিকতার সঙ্গে কালো টাকা উদ্ধার; প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে জোরসহ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে লাগাম টানা। আর যেটা উহ্য থাকে সেটাই মুখ্য—মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করার মানসিকতা, ক্ষমতার আসন যেটা সবসময় বিস্মৃত হয়ে গর্ব অনুভব করে।