আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধির হার সন্তোষজনক, কিন্তু দুই সংখ্যার বৃদ্ধির লক্ষ্যের ধারেকাছেও যে পৌঁছানো গেল না। পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে গত পাঁচ বছরের বিকাশ-পথরেখাটা ছিল এইরকম—বৃদ্ধির হার ৭.৪, ৮.০, ৮.২, ৭.২ এবং ৬.৮ শতাংশ। প্রথম তিন বছরে ৭.৪ থেকে ৮.২ শতাংশে উন্নীত হওয়ার ঘটনায় ড. অরবিন্দ সুব্রামনিয়ন নিশ্চয় প্রীত হয়ে থাকবেন, কিন্তু আমার সন্দেহ হয় যে, ২০১৬-র নভেম্বরে ডিমনিটাইজেশনের আঘাতটা দেশের উপর এসে পড়াতেই সেটা নিশ্চিতরূপে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকেই অর্থনীতির বিকাশ-পথরেখাটি ৮.২ থকে ৭.২ এবং সেখান থেকে ৬.৮ শতাংশে নেমে গিয়েছে।
অর্থনৈতিক অবনমনটা যখন আরও বেশি তখনই দ্বিতীয় মোদি সরকার দায়িত্বভার নিয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হারের ত্রৈমাসিক হিসেবটা ছিল এইরকম: ৮.০,৭.০, ৬.৬ এবং ৫.৮ শতাংশ। আজকের শোচনীয় পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় মোদি সরকারের জন্য নতুন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নিম্নরূপ লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন:
‘‘২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের ভিতর ভারত ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতি রূপে বিকাশলাভের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যে লক্ষ্য ভারতকে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তুলবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জন্য মনিটারি পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে ৪ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, এর জন্য প্রয়োজন জিডিপির ৮ শতাংশ প্রকৃত বার্ষিক বৃদ্ধির হার।’’
এটা একটা ঠিকঠাক লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের সামনে যে প্রশ্নটা এসে পড়ছে, তা হল, অর্থনৈতিক সমীক্ষা যে লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছে নির্মলা সীতারামনের প্রথম বাজেট সেটাকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে?
আমরা প্রত্যেকে কয়েকটি বক্সের তালিকা বানিয়ে ফেলতে পারি এবং নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, বাজেট বিবৃতির ভিত্তিতে, অর্থমন্ত্রী ক’টা বক্সে টিক চিহ্ন দিয়েছেন।
২০১৮-র অক্টোবরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তেরোজন অর্থনীতিবিদ, তাঁদের কেউ ভারতীয় অথবা ভারত-বংশোদ্ভব, তাঁদের লেখা ১৪টি নিবন্ধ ২০১৯-এ ‘অর্থনীতি এখন কী চায়’ (হোয়াট দ্য ইকনমি নিডস নাও) শিরোনামের একটি বইতে ছাপা হয়েছে। ড. অভিজিত ব্যানার্জি এবং ড. রঘুরাম রাজন বেশকিছু আইডিয়া বের করেছেন এবং তারপর ‘ভারত যে আটটি মস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি’ নামে একটি সংযোজন তালিকা দিয়েছেন। সবগুলোই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে অর্থনীতি নিয়ে ভাবিত। ওই বই থেকে ধার করা পাঁচটি আইডিয়া নিয়ে আমি আমার বক্সগুলির তালিকা তৈরি করেছি।
নীচে বক্সগুলোতে দেখুন কেন ‘টিক’ অথবা ‘ক্রস’ চিহ্ন দিলাম:
ý ফিসকাল ঘাটতি শাসন: ফিসকাল ঘাটতি শাসনে মোদি সরকারের রেকর্ড মোটে ভালো না। প্রথম পাঁচ বছরের ভিতর এই সরকার ফিসকাল ঘাটতি ৪.৫ শতাংশ থেকে ৩.৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছিল। সত্যি বলতে কী, ফিসকাল ঘাটতিটা বছর চারেক ৩.৪ থেকে ৩.৫ শতাংশের ভিতর আটকে ছিল এবং ২০১৯-২০ সালের বাজেট সেটাকে ৩.৩ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের সংখ্যাটি সন্দেহজনক, কেননা, ওই বছরে রাজস্বের যে ক্ষতি হয়েছিল
এবং বাজেটবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হয়েছিল তার পরিমাণটা বিপুল।
ý চাপে যেসব ক্ষেত্র (কৃষি, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক): কৃষিক্ষেত্রের উদ্বেগ কমানোর কোনও সূত্র দিশা বাজেট ভাষণে পাওয়া গেল না। বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে তিনি স্রেফ চালু কর্মসূচির কথারই পুনরাবৃত্তি করে গেলেন, ‘উদয়’, এটার লক্ষ্য হল বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক এবং চালনা সংক্রান্ত দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এটাতে যোগ করেছে ‘পুরনো এবং অদক্ষ প্ল্যান্টগুলোর অবসর’ এবং ‘প্রাকৃতিক গ্যাসসঙ্কটের কারণে গ্যাস প্ল্যান্টগুলির ক্ষমতার চেয়ে কম ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে’। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে নতুন করে মূলধন জোগানোর (রিক্যাপিটালাইজেশন) জন্য ৭০ হাজার কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হবে, মনে রাখতে হবে যে অঙ্কটা একেবারেই যথেষ্ট নয় এবং আর্থিক দিক থেকে ভালো অবস্থায় আছে এমন নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলির (এনবিএফসি) ‘পুলড অ্যাসেটস’ কিনে নেওয়ার জন্য কিছু ব্যাঙ্ককে ‘এককালীন ছয় মাসের জন্য আংশিক ক্রেডিট গ্যারান্টি’ দেওয়া হবে—লিকুইডিটির অপ্রতুলতার বিষয়টি কিন্তু পুরোপুরি ভুলে যাওয়া হয়েছে।
ý আরও উন্নত বাণিজ্য পরিবেশ: বাণিজ্য পরিবেশ (বিজনেস এনভায়রনমেন্ট) আরও উন্নত বা ‘বেটার’ করার জন্য সামনে অনেকগুলি আইডিয়া ছিল। কোন ভালোটা হবে যদি ব্যবসা একই ধরনে একই কাজটিই করে এবং শুধু সেটা ‘করা’ মানেই ব্যবসা বাণিজ্য বেশি সহজ সরল হয়ে গেল? বিশেষ শিল্পাঞ্চলগুলোতে (এসআইজেড) অবধারিতরূপে রপ্তানিতে লক্ষ্য স্থির করা নয়; শ্রম আইন পাল্টে ফেলা, স্রেফ বিধিবদ্ধ করা নয়; স্টার্ট-আপ’দের শুরু করতে দেওয়া এবং তিন বছরের জন্য ব্যবসাটা তাদের করতে দেওয়া অনুমতি বা লাইসেন্স নেওয়ার জোরাজুরি ছাড়াই; এই আইডিয়াগুলো গ্রহণ করা যেতেই পারত।
ý কম পীড়াদায়ক নিয়মকানুন: সর্বোত্তম সমাধান হল ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ। শুরু করতে হলে স্কুলশিক্ষাটাকে অবশ্যই রাজ্যগুলির হাতে ছেড়ে দিতে হবে—যেহেতু মূল সংবিধানে এমনই সংস্থান ছিল—এরপর যুগ্ম তালিকা থেকে আরও কিছু বিষয় রাজ্য তালিকায় হস্তান্তর করা জরুরি। উল্টোদিকে, অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রের তরফে স্কুল এবং কলেজ শিক্ষার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণের কথা শুনিয়েছেন! আরবিআই, সেবি, কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া, সিবিডিটি, সিবিআইসি প্রভৃতি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ বেড়ে গিয়েছে, হ্রাসের পরিবর্তে, যা বোঝাস্বরূপ।
þ আরও নগদ হস্তান্তর (ক্যাশ ট্রান্সফার): ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার আরও প্রসারের লক্ষ্যে সরকার বেশি উৎসাহ দিচ্ছে এবং মোটা অঙ্কের নগদ অর্থ তোলার (লার্জ ক্যাশ উইথড্রালস) অভ্যাসটাকে নিরুৎসাহিত করছে। এটাই স্বাভাবিক যে আরও বেশি ভর্তুকি এবং নগদ প্রাপ্য (ক্যাশ বেনিফিট) সরাসরি হস্তান্তর ব্যবস্থার মাধ্যমে (ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার রুট) প্রকৃত প্রাপকদের হাতে পৌঁছাবে। যদিও এই ‘সংস্কার’টি সাত বছরের পুরনো, তবুও আমি এই বক্সটাতে টিক চিহ্নই দিলাম। ১৯৯১-৯৬ পর্বে যে-ধরনের আমূল সংস্কারের (র্যাডিক্যাল রিফর্মস) পথ গ্রহণ করা হয়েছিল আজকের অর্থনীতির জন্য সেটাই দরকার। সরকারের এই ধরনের সংস্কার চালিয়ে যাওয়ারই নির্দেশ ছিল। সেখানে কোনও যুক্তি ছাড়াই সরকার কেবল ‘ইন্টারনাল রিফর্মস’-এর পথ বেছে নিয়েছে। এতে তেরোজন অর্থনীতিবিদ—যাঁরা সকলেই ভারতীয় অথবা ভারত-বংশোদ্ভব—হতাশ হবেন। সুতরাং হতাশ হবেন আমূল সংস্কারপন্থী অন্য অনেকেও।