নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাম জমানায় বরাদ্দের পুরো অর্থ খরচ হয়নি, অথচ মা-মাটি-মানুষ সরকারের আমলে বরাদ্দের তুলনায় বাড়তি প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে পরিকাঠামো গড়েছে পূর্ত দপ্তর। বুধবার বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ত দপ্তরের বাজেট বিতর্কের জবাবি ভাষণে পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এই তথ্য পরিবেশন করেন। তিনি বলেন, ২০০৩-’০৪ আর্থিক বছর থেকে ২০১০-’১১ সাল পর্যন্ত বামফ্রন্ট জমানায় পূর্ত দপ্তরের বাজেট ছিল ৬১১৩.৯৪ কোটি টাকার। তারমধ্যে খরচ হয়েছিল ৩৪৯৮.০৬ কোটি টাকা। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই আর্থিক বছর থেকে ২০১৮-’১৯ সাল পর্যন্ত পূর্ত দপ্তরের বাজেট বরাদ্দ আড়াইগুণের বেশি বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১৬,৮০১.০৮ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এই আট বছরে বাজেট বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত আরও ৩,৭৬৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। মা-মাটি-মানুষের সরকার এই আট বছরে পূর্ত খাতে খরচ করেছে মোট ২০,৫৬৫ কোটি টাকা। পূর্তমন্ত্রী বলেন, এই পরিসংখ্যান বিধানসভায় দাঁড়িয়ে দিলাম। যে কেউ তার সত্যাসত্য যাচাই করতে পারেন। এদিন বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেসের ভূপেন্দ্রনাথ হালদার ও মুস্তাক আলম, সিপিএমের প্রদীপকুমার সাহা ও ফরওয়ার্ড ব্লকের আলি ইমরান রামজ পূর্ত দপ্তরের বরাদ্দ নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন। এমনকী জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নির্মীয়মাণ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে কাজের ঢিমেগতি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। জবাবি ভাষণে মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, ওই সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের নয়।
পূর্তমন্ত্রী জানান, শুধু সড়ক বা সেতু নির্মাণ করাই নয়, এই রাজ্যের সমস্ত সরকারি ভবন ও অধিকাংশ সড়ক যোগাযোগ পরিকাঠামো নির্মাণ, তার উন্নতি সাধন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সামলাতে হয় তাঁদের। এই দপ্তর বর্তমানে ৩,৬১২ কিমি রাজ্য সড়ক, ৯,৫০০ কিমি প্রধান জেলা সড়ক, ২,৪১৭ কিমি গ্রামীণ সড়ক এবং প্রায় ২,২০০টি সেতু এবং উড়ালপুল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। এছাড়াও চলতি বছরের গত মার্চ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা পরিষদ ও পুরসভা থেকে আরও প্রায় ৪,০০৭ কিমি রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে দপ্তর। অরূপবাবু বলেন, নানা আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু পরিকাঠামো গঠনে কোনও ত্রুটি যাতে না থাকে, তার চেষ্টা সর্বদা চালানো হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে পূর্তমন্ত্রী জানান, বাম আমলে ২০০৩-’০৪ থেকে ২০১০-’১১ আর্থিক বছর পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৫,৬৯১ কিমি রাস্তা তৈরি করেছিল এই দপ্তর। আর ২০১১-’১২ থেকে ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছর অর্থাৎ আট বছরে পূর্ত দপ্তর তৈরি করেছে ১৬,৭৩৭.৭৬ কিমি রাস্তা।