আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
যাঁর প্রশ্নের জেরে এদিন প্রশ্নোত্তর পর্বে কৃষিমন্ত্রীর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরের ওই জমিতে কৃষিকাজের বিস্তারিত তথ্য-পরিসংখ্যান জানান, সেই বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী সহ গোটা বিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব অবশ্য সরকারের শীর্ষ পদাধিকারীর এই বক্তব্যকে তাঁর বিরুদ্ধেই হাতিয়ার করেছে। তাদের কথায়, অহেতুক জেদ করে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করতে গিয়ে সাময়িকভাবে রাজনৈতিক লাভ করেছিলেন মমতা। কিন্তু তাতে যে আখেরে সিঙ্গুরের কৃষকদের লাভ হয়নি, এখন সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হচ্ছে। আর সেই কারণে গত কয়েক বছরে সিঙ্গুরের বিভিন্ন নির্বাচনে শাসক দলের ভোট কমছে। বিগত লোকসভার ভোটে ওই তল্লাটে তারা কার্যত গোহারা হয়েছে।
এদিন সুজনবাবু কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে লিখিত প্রশ্ন করে ২০১৭-১৮ সালে সংশ্লিষ্ট জমিতে কত রকমের ফসল উৎপাদিত হয়েছে এবং তার মূল্য কত, তা জানতে চান। তার উত্তরে আশিসবাবু জানান, ওখানে বর্তমানে ১৯২০ বিঘে জমিতে ধান, পাট, কলাই, সব্জি, আলু ইত্যাদি চাষ হচ্ছে। সুজনবাবু কৃষিমন্ত্রীর এই হিসেব বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না বলে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানান। তাঁর কথায়, ওখানে বড়জোর ৫০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে। আর ওখানে কোথায় পাট চাষ হচ্ছে, তা জানি না। তবে উৎপাদিত ফসলের মূল্য নিয়ে মন্ত্রী কোনও উত্তর না দেওয়ায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্বাস করতে না চাইলেও তর্কের খাতিরে তা মেনে নেওয়ার কথা বলে সিঙ্গুরের ওই কৃষকদের বার্ষিক আয় নিয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন করেন সুজনবাবু। এরপরই এ নিয়ে বিশদে বলতে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সিঙ্গুরে টাটাদের জন্য নেওয়া ওই ৯৯৭. ২১ একর জমিতে ইচ্ছুক কৃষকের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৩৭৩ জন। তাঁদের জমির পরিমাণ ছিল ৭০২.৫১ একর। অনিচ্ছুক কৃষকের সংখ্যা ও জমির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৭১৬ জন এবং ২৯৩.৬০ একর। এর মধ্যে আমরা আইন করে ৯৫৫.১১ একর জমি ফেরত দিয়েছি। বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও বাকি ৪১.২১ একর জমির মালিকরা কেউ দাবি জানাতে আসেননি এখনও। তবে আমরা ওখানকার কৃষকদের জন্য অনেক বাড়তি সাহায্য দিচ্ছি। চাষের জন্য সার, বীজ ছাড়াও মাসে দু’হাজার টাকা, পরিবারপিছু ১৬ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ওখানে চাষ করছে এখন। ২০১৭-১৮ সালে ওখানে ৬৪১ একর জমিতে চাষ হয়েছিল। ২০১৮-১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২৬০ একরে। সেখানে এখন ৭৯২ জন চাষি কৃষিকাজে যুক্ত। তবে কৃষিকাজ কমার জন্য সরকার কী করবে? কৃষকরা জমির মালিক। ওঁরা সেখানে কী করবেন, তা নিয়ে সরকার মাথা গলাতে পারে না। আপনার পাঁঠা আপনি ল্যাজে, না মুড়োয় কাটবেন, সেটা আপনার ব্যাপার। পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের কারণে ওখানে জমির দাম বেড়েছে। অনেকে হয়তো জমি বিক্রিও করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ চাষ না করে অন্য কিছু করার কথাও ভাবতে পারেন।
সদনের বাইরে সুজনবাবু এবং কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী এক সুরে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঝোলা থেকে বেড়াল বের করে দিয়েছেন। সিঙ্গুরের কৃষকদের সঙ্গে তৃণমূল প্রতারণা করেছে। ওখানে কৃষি বা শিল্প কোনওটাই না হওয়ার জন্য শাসক দলই দায়ী। ইতিহাস তাদের এজন্য ক্ষমা করবে না। কেন ওখানে কৃষিকাজ কমে যাচ্ছে তা নিয়ে আত্মসমীক্ষা করা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। দিল্লিতে বিজেপি এমপি লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, সিঙ্গুরের ওই জমি আর কৃষিকাজের উপযুক্ত নয়। এটা স্বীকার করতে মুখ্যমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন। নিজের রাজনীতির স্বার্থে উনি সিঙ্গুরের কৃষকদের ব্যবহার করেছেন। পরে নাটক করে উনি ওখানে গিয়ে সর্ষে ছড়িয়েছেন। কিন্তু তাতে ঘাসফুল গজিয়েছে। আমরা চাই, সিঙ্গুরে টাটারা ফিরে আসুক।