আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
তবে শুধুই মমতার ঘোষিত রেলপ্রকল্প নয়। সামগ্রিকভাবেই বাংলার বিভিন্ন রেলপ্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। একই অবস্থা কলকাতা মেট্রো রেলের একাধিক প্রকল্পেও। বেশিরভাগ মেট্রো প্রকল্পেই বরাদ্দের পরিমাণ হয় কমেছে, নাহলে তা একই রেখে দেওয়া হয়েছে। বাংলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ এবার বেড়েছে শুধুমাত্র দুটো ক্ষেত্রে। নোয়াপাড়া-বারাসত ভায়া বিমানবন্দর প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেল প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১৭৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের (সিএলডব্লু) আধুনিকীকরণ এবং লোকো উৎপাদনের বার্ষিক পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি ২ লক্ষ টাকা। এখানে এবার বছরে ২০০টির বদলে ২৭৫টি লোকো তৈরি হবে।
২০১০ সালের রেলবাজেটে পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোট সাতটি নতুন রেললাইনের ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ রেলের পিঙ্ক বুক প্রকাশ হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, সেই সাতটি নতুন লাইনের মধ্যে নিউ কোচবিহার থেকে গোলোকগঞ্জ হয়ে যোগীঘোপা পর্যন্ত রেললাইন তৈরির প্রকল্পের কোনও উল্লেখ পিঙ্ক বুকে নেই। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন নিয়েই প্রশ্ন থাকছে। কারণ রেলের পিঙ্ক বুকে একবার কোনও প্রকল্পের উল্লেখ চলে আসার অর্থ, কোনও না কোনও সময় তার রূপায়ন ঘটবেই। কিন্তু পিঙ্ক বুকে প্রকল্পের উল্লেখ না থাকার অর্থ, নির্দিষ্ট প্রকল্পটি নিয়ে আর অগ্রসর হচ্ছে না রেলমন্ত্রক। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা ঘোষণা করেছিলেন ভাগীরথী নদীর উপর রেল সেতু সহ আজিমগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত নতুন রেললাইন তৈরি হবে। কিন্তু এই প্রকল্পে এবার গতবারের থেকে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমেছে বালুরঘাট-হিলি নতুন রেললাইন তৈরির প্রকল্পে অনুমোদিত বরাদ্দের পরিমাণও। ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে যা ছিল প্রায় ১২ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা, তা এবার কমিয়ে করা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দ হয়েছে নামমাত্র। সম্প্রতি বালুরঘাট-হিলি প্রকল্প নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রক লিখিতভাবে জানিয়েছে, রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণের কাজে দেরি করায় এই প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঘোষণা হওয়া একাধিক রেললাইন ডাবলিংয়ের কাজেও অর্থবরাদ্দ হয়েছে নামমাত্র। অথবা প্রকল্পটি উধাও হয়ে গিয়েছে পিঙ্ক বুক থেকে। তবে শুধুই মমতার ঘোষিত প্রকল্প নয়। রেলের বঙ্গ খাতে সার্বিকভাবেই এই বঞ্চনার ছবি স্পষ্ট। যেমন তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর নতুন রেললাইনের জন্য এবার বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকা। গত বছর এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৪১ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। দেওঘর-সুলতানগঞ্জ নতুন রেললাইন তৈরির জন্য যেখানে গতবার বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় ৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা, সেখানে এবার বরাদ্দ হয়ছে নামমাত্র। ১০ লক্ষ টাকা। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আওতায় থাকা অধিকাংশ রেললাইন ডাবলিং প্রকল্পে এবার আর কোনও অর্থ বরাদ্দই করেনি কেন্দ্র। বাংলার সর্বত্রই রেললাইন নবীকরণ, গেজ কনভেনশন প্রভৃতি খাতেও বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। অথবা নামমাত্র বরাদ্দ হয়েছে। কলকাতা মেট্রো রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের অবস্থাও তথৈবচ। দমদম-বরানগর, নোয়াপাড়া-এয়ারপোর্ট রুট সম্প্রসারণ সহ সংশ্লিষ্ট মেট্রো প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। দমদম এয়ারপোর্ট-নিউ গড়িয়া ভায়া রাজারহাট মেট্রো প্রকল্পেও বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ কমেছে। প্রায় ৩৫৫ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৩৪৫ কোটি টাকা। সেন্ট্রাল পার্ক-হলদিরাম মেট্রো প্রকল্পে এবার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১০ লক্ষ টাকা। গত ৫ জুলাই সাধারণ বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তারপর আজই সংসদে রেলের ‘ডিমান্ডস ফর গ্রান্টস’ পেশ করেন রেলের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গারি। সংসদে তা পেশের পরেই এদিন জোনভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য সংবলিত ‘পিঙ্ক বুক’ প্রকাশ করে দেয় রেলমন্ত্রক।