খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
এখন প্রায় নিয়ম করে নিজের গড়া দরের রেকর্ড নিজেই ভাঙছে হলুদ ধাতু। শুক্রবার কলকাতায় বুলিয়ান বাজারে ২৪ ক্যারেট ১০ গ্রাম সোনার দর পৌঁছয় ৪২ হাজার ৯৪৫ টাকায়। অথচ তার আগের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দর ছিল ৪২ হাজার ২২৫ টাকা। সোনা কিনতে গেলে ক্রেতাকে তিন শতাংশ হারে জিএসটি মেটাতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবারের দর ৪৪ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। এদিন গয়নার জন্য ২২ ক্যারেটের সোনার দর ছিল ১০ গ্রাম পিছু ৪০ হাজার ৭৫০ টাকা টাকা। হলমার্কযুক্ত গয়না কিনলে, তার দর ঘোষিত হয় ৪১ হাজার ৩৬০ টাকা। এই সব দরের উপরই তিন শতাংশ জিএসটি যোগ করে ক্রেতাকে সোনা কিনতে হয়েছে।
বিগত কয়েক মাস ধরেই গোটা বিশ্বে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ভালো নয়। আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ এবং আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে তুমুল সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হওয়ায় গোটা দেশেই বারবার ধাক্কা খেয়েছে শেয়ার বাজার। ভারতও তার বাইরে বেরতে পারেনি। এই সমস্যায় বিষফোঁড়ার মতো সামনে এসেছে করোনা ভাইরাস। সেই আতঙ্ক ভীষণভাবে পড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর। ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের ঝুঁকি ছেড়ে মন দিয়েছেন সোনা কেনায়, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। টাকার দামের পতনের কারণেও সোনা কিনতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে ভারতকে। তার জেরেও হু হু করে চড়ছে সোনার দর। আর তাতেই দফারফা সোনার গয়নার বাজারে।
এখন লগনসা চলছে। তবুও কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্রই মুখ থুবড়ে পড়েছে সোনার ব্যবসা। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি বাবলু দে বলেন, আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত লগনসা আছে। এর মধ্যে যাঁরা বিয়ের গয়না কিনেছেন, তাঁরা তবু কিছুটা নিস্তার পেয়েছেন। কিন্তু যাঁরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন, তাঁদের অবস্থা সত্যিই খারাপ। আমরা ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা বাড়ানোর জন্য লগনসার দিকে তাকিয়ে থাকি। চৈত্রমাসে এমনিতেই বাজার কমে যায়। অথচ এই সময়টাতেই যেভাবে দাম চড়ছে সোনার, তাতে সবমহলই দিশাহারা। যে কারিগররা এই শিল্পের উপর ভরসা রেখে রুটিরুজির ব্যবস্থা করেন, তাঁদেরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার ধারণা, সোনা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ৪৫ হাজারে পৌঁছবে। তার অন্যতম কারণ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের আরোপ করা উৎপাদন শুল্ক। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছে। তার উপর ১২.৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে ভারতে যখন সোনা আসছে, তা আরও মহার্ঘ হয়ে যাচ্ছে।
বাবলুবাবুর সঙ্গে সহমত পোষণ করে সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেন বলেন, সোনার উপর বেশি করে শুল্ক চাপালে সোনার কালোবাজারি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এতে সরকারের যেমন রাজস্ব কমছে, তেমনই বাজারেও খারাপ প্রভাব পড়ছে। শুভঙ্করবাবুর মতে, যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে গোটা বিশ্বেই মানুষ বিভ্রান্ত এবং আতঙ্কগ্রস্ত। একমাত্র সোনাকেই বিশ্বাস করছেন সবাই। সোনা কিনলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে না, এই আস্থা এসেছে। তাই যাঁদের সুযোগ আছে, তাঁরা সোনা কিনছেন। আমাদেরও বক্তব্য, সুযোগকে কাজে লাগাতে সোনা কিনুন।