শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি, ১৯ আগস্ট (পিটিআই): নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়েছে। খুলেছে স্কুল। সকাল সকাল কাজে গিয়েছেন শিক্ষকরাও। শুধু এল না ছাত্রছাত্রীরা। সোমবার এই ছবি দেখা গেল কাশ্মীরের সর্বত্র। একমাত্র বেমিনার পুলিস পাবলিক স্কুল এবং কয়েকটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে হাতেগোনা পড়ুয়াদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। তবে এগুলি সবই সরকারি স্কুল। টানা ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে শ্রীনগর শহরের সমস্ত বেসরকারি স্কুল। গত ৪৮ ঘণ্টায় উপত্যকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পাননি বলেই মনে করছেন সরকারি আধিকারিকরা। এদিন থেকে প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলি এবং সব সরকারি দপ্তর খোলার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। শ্রীনগর শহরের ১৯০টি প্রাথমিক স্কুল খোলার জন্য উপযুক্ত বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু, মাত্র কয়েকটি স্কুল খোলা হয়। ওল্ড সিটি এবং সিভিল লাইন্স এলাকায় গত দু’দিনের হিংসার জেরে স্কুলগুলি বন্ধ ছিল।
একজন অভিভাবক ফারুক আহমদ দার বলেন, ‘এরকম অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর কোনও প্রশ্নই নেই।’ বারামুলা জেলার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পত্তন, পালহালন, সিংপোরা, বারামুলা এবং সোপোর- এই পাঁচটি শহরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল না হওয়ায় সমস্ত স্কুল বন্ধ ছিল। জেলার অন্যত্র প্রাথমিক স্কুলগুলি খোলা রয়েছে। জম্মুতেও টানা ১৫ দিন বন্ধ থাকার পর সীমান্তবর্তী পাঁচটি জেলায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে সরকারি বেসরকারি সমস্ত স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরুর কথা জানিয়েছেন রাজৌরির ডেপুটি কমিশনার আজিজ আসাদ।
অন্যদিকে, গত ৪ আগস্ট থেকে উপত্যকায় ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির বাড়িতে ৮ আগস্ট সকাল পর্যন্ত ল্যান্ডলাইন এবং ব্রডব্যান্ড সংযোগ অব্যাহত ছিল। ওই সময় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ট্যুইটও করেছেন তিনি। নজরে আসার পরই হুরিয়ত নেতার বাড়ির ফোন ও নেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গিলানিকে এব্যাপারে সহায়তা করেছিলেন দুই বিএসএনএল আধিকারিক। তদন্তে বিষয়টি সামনে আসার পর তাঁদের সাসপেন্ড করেছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিসের পক্ষ থেকে ট্যুইটার কর্তৃপক্ষের কাছে গিলানি সহ আটজনের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করার আর্জিও জানানো হয়। এদিকে, উপত্যকায় আধাসেনার অত্যাচারের ‘ভুয়ো’ খবর ছড়ানোর অভিযোগে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন নেত্রী শেহলা রশিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অলোক শ্রীবাস্তব।
জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন ফের কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। ব্যঙ্গের সুরে তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। স্কুল খোলা, পড়ুয়া নেই। আবারও ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। মেহবুবা মুফতির মেয়েকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেছেন কেন? উত্তর নেই। যদি আপনি ভাবেন কী হচ্ছে, দয়া করে বুঝুন, এটা হল নতুন স্বাভাবিক অবস্থা।’
নিষেধাজ্ঞার জেরে ধাক্কা খেয়েছে কাশ্মীরের ঐতিহ্যশালী বিয়ের বাজার। হাজার হাজার দম্পতি জাঁকজমকের পরিবর্তে সাধারণ অনুষ্ঠানকেই বেছে নিচ্ছেন। ফলে মার খাচ্ছেন মাংস বিক্রেতা, ক্যাম্পিং এজেন্সি , গয়না প্রস্তুতকারক, বিয়ের দর্জি এবং বিখ্যাত কাশ্মীরি খাবার ওয়াজান বাবুর্চিরা। অল্প হলেও যে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলি প্রকাশিত হচ্ছে, তাদের একটি পাতা বরাদ্দ করা হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ বাতিলের বিজ্ঞাপনের জন্য। সোমবারও এমন অন্তত ২৫টি বিজ্ঞাপন ছিল স্থানীয় একটি উর্দু সংবাদপত্রে। বাজারগুলি এখনও বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের।