ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
গ্রামে ঢোকার রাস্তার দু’পাশে পাট কেটে রাখা রয়েছে। একদিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে খড়ি নদী। রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় বসে বিভিন্ন জায়গায় জটলা বেঁধে রয়েছে। সব অলোচনাতেই একটাই প্রশ্ন, স্যারকে মারল কে? পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক কারণেই ওই প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর সঙ্গে বিরোধী গোষ্ঠীর লড়াই পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই তীব্র হয়েছে। কয়েক মাস আগে বালির বাসিন্দা সনাতন মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে দুষ্কৃতীরা বাড়ির কাছে গুলি করে। তিনি কোনও রকমে প্রাণে বাঁচেন। তাঁর হাতে গুলি লাগে। ওই তৃণমূল কর্মী নিমাইবাবুর বিরোধী শিবিরের লোক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তাই ওই ঘটনার পর দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়। সম্প্রতি বাংলা আবাস যোজনার কাটমানি নিয়ে সেই বিরোধ আরও বেড়ে যায়।
গ্রামে দাঁড়িয়ে এক প্রবীণ নেতা বলেন, দলের কথা আর কী বলব বলুন। যারা ওই প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছে তাদের কাছে থেকে আগে ওরা পাঁচ হাজার টাকা করে নিত। এখন প্রত্যেকের কাছে ২০হাজার টাকা দাবি করছে। তাতে প্রধান শিক্ষক আপত্তি করেছিলেন। গরিব লোকের টাকা নেওয়া যাবে না বলে তিনি সাফ জানিয়েছিলেন। সেটাই কাল হল। নিমাইবাবুর মেয়ে শাওনী মণ্ডল বলেন, বাবা চাকরি করত। কোনওদিনই কারও টাকা নেয়নি। গরিব লোকের টাকা কেউ নিলে বাবা প্রতিবাদ করত। সেকারণেই মেরে ফেলা হল। নিমাইবাবুর ছেলে যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। তিনিও বাবার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন।
এদিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাসিন্দারা শোকার্ত নিমাইবাবুর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভিড় করেছেন। পাড়ার অনেকে বাড়িতে হাঁড়িও চড়াননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, স্যারকে যে কায়দায় খুন করা হয়েছে তা দক্ষিণ ভারতের হিন্দি সিনেমায় দেখা যায়। হঠাৎ করেই পাঁচ যুবক নাইন এমএম জাতীয় পিস্তল হাতে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। প্রধান শিক্ষক রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ার পর নিশ্চিন্তে তারা বাড়ি ফিরে যায়। ঘটনার পর থেকেই গ্রামের সকলেই আফশোস করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী সিরাফ আলি বলেন, আমার চোখের সামনে ওঁকে ওরা মেরে দিল। বাঁচাতে পারলাম না। কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
টুঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসার পর গোঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেও দেখা গেল জটলা। সেখানে দাঁড়িয়ে এক মহিলা বলেন, স্যার আর নেই ভাবতেই পারছি না। ওঁকে যারা মেরেছে তারা ঠিক করেনি। উপরওয়ালা ওদের ছাড়বে না।