গুয়াহাটি, ১৪ ডিসেম্বর (পিটিআই): সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় শনিবারও উত্তাল রইল অসম। তবে, রেল অবরোধ, অবস্থান বিক্ষোভ, অনশনের মাঝেই এক তেলের ট্যাঙ্কারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় ওই ট্যাঙ্কারের চালকেরও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। প্রশাসন জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে সোণিতপুরে ঘটেছে ঘটনাটি। পেট্রল ভরার জন্য উদলগিরি জেলার সিপাঝার থেকে রওনা দিয়েছিল ফাঁকা ট্যাঙ্কারটি। ঢেকিয়াঝুলির কাছে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা আটকে ট্যাঙ্কারে আগুন লাগিয়ে দেয়। চালককে উদ্ধার করে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই বিক্ষোভকারীদের। বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন এএএসইউ, অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আন্দোলন-বিক্ষোভ চলবে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে তিনদিনের ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনও চালানো হবে বলে জানিয়েছে এএএসইউ।
এদিকে শনিবার গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড় টাউনে ১৪৪ ধারা কয়েক ঘণ্টার জন্য শিথিল করেছিল প্রশাসন। এক আধিকারিক জানান, গুয়াহাটিতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে এবং ডিব্রুগড়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত কার্ফু শিথিল করা হয়। কার্ফু শিথিল হতেই গুয়াহাটি শহরের দোকানপাটগুলিতে হামলে পড়েন সাধারণ মানুষ। লক্ষ্য ছিল, যতটা বেশি পরিমাণে সম্ভব রসদ মজুত করে নেওয়া। দিসপুর, উজানবাজার, চাঁদমারি, শিলপুখুরি, জু রোড সহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানগুলির বাইরে মানুষের লম্বা লাইন পড়ে যায়। রাস্তাঘাটে ইতিউতি অটো এবং সাইকেল রিকশ চোখে পড়লেও কোনও বাসের দেখা মেলেনি। স্কুল-কলেজ এবং অফিস এদিনও বন্ধই ছিল। তবে, ওই কয়েক ঘণ্টার জন্য শহরের বেশ কয়েকটি পেট্রল পাম্প খুলেছিল। সেখানেও জ্বালানি ভরতে আসা যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে যায়। গুয়াহাটি কিছুক্ষণের জন্য স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও উজান অসমের তিনসুকিয়া, জোরহাটের মতো এলাকা এদিনও থমথমে ছিল। শনিবার এই অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে যানবাহনে আগুন লাগানো এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর মিলেছে। জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী হিংসাত্মক বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬৫০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক হয়েছেন আরও ১ হাজার জন। অন্যদিকে, অসমের সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আগামী ১৮ ডিসেম্বর কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।
এদিকে, অসমজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে স্বাভাবিক হবে না বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর মিলেছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার করে রাজ্যের শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টাকে প্রতিহত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সঞ্জয় কৃষ্ণ জানান, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সময়সীমা ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। গত বুধবার রাজ্যের ১০টি জেলায় ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই সময়সীমা আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়। যা শনিবার দুপুরে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
নাগাল্যান্ডেও সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল বিরোধী বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। নাগা স্টুডেন্ট ফেডারেশনের (এনএসএফ) ডাকা ৬ ঘণ্টার বন্঩ধে শনিবার আংশিকভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় নাগাল্যান্ড। কোহিমা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এদিন যানবাহন তেমন চলেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মার্কেটগুলিও ছিল বন্ধ। যদিও বন্ধ ঩ঘিরে বড় কোনও অঘটন ঘটেনি। পরীক্ষার্থী, কর্মক্ষেত্রে যাওয়া চিকিৎসাকর্মী, সংবাদমাধ্যমের কর্মী এবং বিয়েবাড়ির লোকেদের আটকায়নি ধর্মঘটীরা।
অন্যদিকে, মেঘালয়ে এদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু, তার মধ্যেই একটি অপ্রীতিকর ঘটনা তাল কেটে দেয়। এদিন মেঘালয় রাজভবনের মূল গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখান একদল আন্দোলনকারী। বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করার চেষ্টা করলে পুলিসের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। লাঠিচার্জ করে পুলিস। কাঁদানে গ্যাসও ব্যবহার করতে হয়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন বলে খবর। জখম হন দুই পুলিসকর্মীও।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কড়া নজরদারি,
গেট বন্ধ দিল্লির জনপথ মেট্রো স্টেশনের
আলিগড় (উত্তরপ্রদেশ), ১৪ ডিসেম্বর (পিটিআই): সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাতে পারে। এই আশঙ্কায় শনিবার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বাড়াল কর্তৃপক্ষ। পুলিস জানিয়েছে, ক্যাম্পাসের ভিতরে এবং চারপাশে টহলদারি চালানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার প্রতিটি গেটেও সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র ড. রাহাত আবরার জানান, বার্ষিক পরীক্ষা নির্ধারিত সূচি মেনেই চলছে। জেলা প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে।
এদিকে, যন্তরমন্তরে নাগরিকত্ব বিল বিরোধী বিক্ষোভের জেরে শনিবার দিল্লি মেট্রোর জনপথ স্টেশনটি বন্ধ করে দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ডিএমআরসি ট্যুইটারে জানিয়েছে, দিল্লি পুলিসের পরামর্শ মেনে জনপথ স্টেশনের প্রবেশ ও বেরনোর পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই স্টেশনে কোনও ট্রেনই থামবে না।’ গত শুক্রবারও জনপথ এবং প্যাটেল চক স্টেশনের গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিক্ষোভের কথা মাথায় রেখেই মেট্রো কর্তৃপক্ষকে ওই পরামর্শ দেয় দিল্লি পুলিস।