বিকিকিনি

মা লক্ষ্মীর ঘরে একদিন

ফেলে আসা বিশেষ দিনগুলো কত যে মধুর স্মৃতি জমিয়ে রাখে। তাদের ফিরে দেখার চেষ্টায় অন্বেষা দত্ত।

লক্ষ্মীপুজোর দিনগুলো ঠিক কেমন যেন ছিল? শৈশব হাতড়ে দেখতে গেলে শুধু যেন ভেসে আসে নাড়ু, ভোগ আর পুরোহিত মশাইয়ের দেরি করে আসা। দেরি করে আসা মানে দেরি করে পুজো। অর্থাৎ মায়েদের ভারি কষ্ট। সেই কোন সকাল থেকে মুখে কুটোটি না কেটে মা-জেঠিমা-কাকিমা পুজোর জোগাড় করে চলেছে। তাদের তদারকিতে আবার ঠাকুরমা। নাড়ুর পাক থেকে মোয়ার গুড় জ্বাল, কোথাও যেন ফাঁক থাকে না এতটুকু। ঠাকুরমার কড়া নজর। পুজো শেষে সবাই যেন প্রসাদ ভোগ খেয়ে ধন্য ধন্য করে। সে তো করবেই। তার জন্য বাড়ির বউগুলোর সারা দিন ধরে এত কষ্ট করতে হবে? 
বোঝার বয়সে প্রশ্ন করে জুটেছিল বকুনি। দিদি ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বুঝিয়েছিল, সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করে কাজ নেই। চুপচাপ কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঠাকুরমা আর মায়েদের জন্য চা, শরবত বানিয়ে ফেল। একটু হলেও স্বস্তি দে ওদের প্রাণে। হেমন্তের হালকা পরশে শৈশব মন পড়ে নিয়েছিল দিদির চোখের ভাষা। বাড়ির লক্ষ্মীদের জন্য লক্ষ্মীঠাকুর কখন মুখ তুলে তাকাবেন জানতাম না। ঠাকুরমার চোখ এড়িয়ে মা-কাকিমাদের শরবত চা খাইয়ে আসা ছিল জরুরি কাজ। সেদিনটা শুধু লক্ষ্মীপ্রতিমার মুখ নয়, চোখ ভরে থাকত মা ও মাতৃসমাদের মুখগুলোও। 
উপোসী শরীরে নিজেদের যত ক্লান্ত লাগুক, তাদের মায়াভরা চোখ সবসময় সজাগ: বাড়ির ছোটগুলো খেল তো? কর্তারা? সেদিন বাড়ির রান্নায় অন্য কারও হাত লাগাতে হতো। হয়তো বা কুটনো কেটে দেওয়া রাজুর মায়ের। সেদিন গিন্নিরা আমিষ ছোঁন না। তাই নিয়ে কর্তাদের আপত্তির শেষ ছিল না। মা লক্ষ্মীর মুখ চেয়ে তবু তাদের মানতে হতো। একটু সাদামাঠা পদ দিয়ে খাওয়া সারতে হবে। মুখ ব্যাজার হলেও। বাড়ির ছোটরা খাওয়ার পরে ঘুমাতে যাওয়ার ফিকির খোঁজেনি কোনওদিন। ভরা ছুটির মরশুমে তো আদপেই নয়। দিদির হাত ধরে একতলা থেকে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওঠা। হাতে খড়িমাটি আর জলের মিশ্রণ। মা লক্ষ্মী এলেন ঘরে, একটা একটা করে কাঁপা হাতে রূপ পায় পায়ের ছাপ। দিদি বোঝায় এক সিঁড়িতে বাঁ পায়ের ছাপ আঁকলে পরেরটায় কিন্তু ডান পা। গুলিয়ে ফেলিস না। প্রথমবার আলপনা দিতে যাওয়া ছোট্ট হাত হিসেব গোলাবেই। বকুনি খেয়ে বুঝে নেওয়া সিঁ‌঩ড়ি ওঠার হিসেব। ওরে...আমরা কি পরপর দুটো সিঁড়ি একই পা ফেলে ভাঙি? তাই তো? এই সহজ বুদ্ধি মাথায় ঢোকেনি। সিঁড়ি শেষ হলে এবার জোড়া পা। মা লক্ষ্মী দাঁড়িয়েছেন যে দোড়গোড়ায়! এইবার লক্ষ্মীদেবী আসবেন ঘরে।
এসব ছিল ছোটদের হাতের টুকরো আলপনা। পুজোর জায়গায় কিন্তু মায়েদের নিপুণ হাতের ছাপ। লক্ষ্মীর অধিষ্ঠানে কোনও ত্রুটির চিহ্ন নেই। সেসব শুধু মুগ্ধ চোখে চেয়ে দেখা। কী অক্লেশে নরম আঙুলে তরতর এগিয়ে চলেছে পিটুলিগোলা। যেন আলপনার নকশা দেওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছে আঙুলগুলো। লক্ষ্মীদেবীর পা এঁকে সন্তুষ্ট থাকা খুদে ভাবতে বসে, কবে এমন নিখুঁত নকশা টানবে সে? দিদির ডাকে হুঁশ ফেরে। দেখিস কেউ যেন লক্ষ্মীর পায়ে পা না দেয়। দিতে হবে পাহারা। মাটিতে থিতু হবে মা লক্ষ্মীর পা, শুকিয়ে যাওয়া অবধি। এদিক সেদিক থেকে আরও ছোটরা ধেয়ে আসে, খেলায় মত্ত সারা দুপুর। তাদের দামাল হাত পা যেন এদিকে না পড়ে।
আলপনার ডিউটি শেষ করে রান্নাঘরের দিকে ডাক। জেঠিমা পাক দিচ্ছে নারকেল গুড়ের। অনেকক্ষণ ধরে নেড়ে নেড়ে হাত টনটন। কত কত রেকাবি ভরা নাড়ু হবে। আয় তো একটু নেড়ে দিয়ে যা। এত বড় দায়িত্ব! খুশি মনে পাক দিতে হাত লাগানো। খেয়াল রাখতে হবে কড়াতে যেন লেগে না ধরে। নারকেল আর গুড় একবারে গা মাখা হয়ে মিশে যাবে। এত কি বুঝব? হেসে জেঠিমা আশ্বাস দিয়ে সরিয়ে দেন খুদের হাত। যা, এবার আমি দেখে নিচ্ছি। পাক একটু ঠান্ডা হলে কাগজ পেতে দেব, নাড়ু বানাস। আর একটা ডিউটি। বড় হতে আর দেরি নেই দেখি! হাতে অল্প সর্ষের তেল বুলিয়ে তখন থেকে বসে পড়া। পাশে জড়ো হয় আরও দু’-একটা খুদে। অল্প করে হাতে হাতে পাক তুলে গোল্লা হতে থাকে নাড়ু। এই... এই... কোনও ভাইয়ের জিভ টলটল করছে বুঝি। শিগগির উঠে পড়। এখনই খাওয়ার কথা ভাবছিস? এসব যে মা লক্ষ্মীর জন্য। বয়সে সামান্য বড় দিদি চোখ মটকে দেয়।  অনেকক্ষণের পরিশ্রম শেষ। ভাইবোনে মিলেমিশে নাড়ু সব করে রব রেকাবি ভরাইল। মায়েদের মুখ ভরা তৃপ্তি দেখে মন আরও চনমনে। অর্ধেক তবে উতরে গিয়েছি নাড়ু বানানোয়। সঙ্গে থাকে তিলের নাড়ু আর গুড়ের মোয়াও। ওটা আবার ঠাকুরমার ডিপার্টমেন্ট। এখানে কোনও আপস নেই। অভিজ্ঞতাই শেষ কথা বলে। এই পারফেকশনের ধারেকাছে কেউ নেই, কে যায় চ্যালেঞ্জ নিতে! ঠাকুরমার পাশে মুগ্ধ নয়নে সেসব নিরীক্ষণেই সুখ।  
টুকটুক করে জোগাড় এগয়। পড়ন্ত ছোট বেলা। মায়েদের সাধারণ শাড়ি ছেড়ে এবার একটু লাল পেড়ে সুন্দর শাড়ির সাজ। আর একটু গয়না দিয়ে পুজোর জন্য বসে পড়া। এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে পুরুতমশাইয়ের গলা। আমাদের ঘরে কখন আসবে? উফ, পূর্ণিমা সেই কখন লেগেছে। পুরুতমশাইয়ের নাকি এক পাড়াতেই খান বিশেক পুজো। বাপ রে বাপ, লোকটার মুখ ব্যথা হয় না মন্তর আউরে! এসব কথা বলাও পাপ, ছি ছি! ঘাড় ধরে বকুনি খেতে হয় ঠাকুরমার কাছে। মন পাগলা ভাবে আহা উপোসী মাতৃসমাদের মুক্তি মিলবে কবে?  
এক দস্যি ভাই কোত্থেকে দুর্গাপুজোয় বেঁচে যাওয়া ক্যাপ ফাটাতে শুরু করে। এই রে সেরেছে। লক্ষ্মীদেবীর যে শব্দ সহ্য হয় না। এইটুকু জানিস না? রাখ রাখ, ক্যাপ রাখ ভাই। শান্ত হ। একটু পরেই প্রসাদ পাবি। সন্ধের মুখে মুখে ভীষণ তাড়ায় পুরোহিত মশাই এন্ট্রি নেন। বাড়িসুদ্ধ লোক সেজেগুজে তৈরি। বড় ঘরে মায়েদের পিছনে পিছনে জায়গা করে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছে খুদেরা। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা খিচুড়ি ভোগ, এদিকে সুজি লুচি, ওদিকে নাড়ু আর এদিকে ফলপ্রসাদ, ধূপধুনো মিলেমিশে এক অপূর্ব গন্ধে ছোটগুলোর মন মাতাল। মায়েদের সব চোখ বন্ধ। হাতের পাঁচালির লাইন সব মনের মধে যত্নে বাঁধা। দোলপূর্ণিমা নিশীথে আকাশ সত্যি বড় নির্মল। লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ... কর্তারা এবার গিন্নিদের সমীপে এলেন পুজোর রেশ নিতে। খানিক বাদে তাদের গুরুদায়িত্ব। লোকজন আসবে। প্রসাদ বেড়ে দিতে গিন্নিদের হাতে হাত লাগাবেন তাঁরাও। নারায়ণের সে ভূমিকা দেখে খুশি হবে কৈশোরছোঁয়া ছোট মেয়ে। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এক একটা দৃশ্য নুড়ির মতো তুলে যত্নে জমিয়ে রাখবে সে। তার ঘর আলো করবেন মা লক্ষ্মী...।  
9Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা