বিকিকিনি

রাজকীয় রামনগর দুর্গ

বারাণসীর গঙ্গার পুব পাড়ে তুলসীঘাটের প্রায় উল্টোদিকে শতাব্দীপ্রাচীন দ্রষ্টব্য রামনগর। লিখেছেন মধুছন্দা মিত্র ঘোষ।

ভগবতী গঙ্গে তার বিপুল তরঙ্গের সুভাষিত লাবণ্য চিত্রবৎ এঁকে রেখেছে এ পথে। গঙ্গার কোল ঘেঁষে ‘প্রাচীনতম জীবন্ত শহর’ কাশী। পবিত্র গঙ্গা তো আছেই। সঙ্গে আছে অমূল্য সাক্ষ্যস্বরূপ ঐতিহ্যপ্রসূত সৌধ-প্রাসাদ-ইমারত-দুর্গ-মন্দিররাজি-শ্মশানঘাট। গঙ্গাতীরস্থ ৮৪টি ঘাটের মহিমা। বারাণসী গঙ্গার পুব পাড়ে তুলসীঘাটের প্রায় উল্টোদিকে এক শতাব্দীপ্রাচীন দ্রষ্টব্যস্থল রামনগর। 
রামনগরের প্রধান আকর্ষণ সপ্তদশ শতকের ঐতিহ্যসম্পন্ন সুবিশাল রাজবাড়ি তথা দুর্গ। বারাণসী থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কাশীনরেশের এই রামনগর দুর্গ। কাশীর রাজবংশীয়রা বংশপরম্পরায় এখানে আজও বসবাস করেন। ১৭৫০ সালে কাশীরাজ বলবন্ত সিং প্রথম রাজ্য স্থাপন করেন। প্রবেশপথেই রাজকীয় তোরণ। দু’পাশে ঝকঝকে দু’টি লোহার কামান। লালচে রঙা চুনাপাথর ও বাদামি বেলেপাথরের মিশ্রণে নির্মিত মোগল স্থাপত্যশৈলী। দেখলে চোখ জুড়ায়। একেবারে গঙ্গার ধারেই, তবে নদী থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে রাজপ্রাসাদটির অবস্থান। তৈরির সময় খেয়াল রাখা হয়েছিল, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসে যাতে দুর্গের ক্ষতি না হয়। সামনে বিশাল উন্মুক্ত প্রান্তরে ফোয়ারা। উন্মুক্ত প্রান্তরটির চারপাশে ঘিরে রেখেছে রাজভবন। অলিন্দ, বাতায়ন, ঝরোকা, ঝুলন্ত বারান্দা সহ অট্টালিকাটির সৌকর্ষ বনেদিয়ানায় ভরপুর। প্রাসাদচত্বরে রয়েছে রাজা জিৎ সিং নির্মিত চতুর্ভুজা দুর্গার মন্দির। 
প্রায় তিনশো বছরের পুরনো প্রাসাদের মূল আকর্ষণ দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহভাণ্ডার। রাজশাসনকালে যেটি ছিল ‘দরবার হল’ বা ‘জনতার দরবার’, আজ সেটি ‘সরস্বতী ভবন’ সংগ্রহশালা। এটি রাজপরিবার ব্যবহৃত দ্রব্যাদির সংগ্রহ দেখা যায় এখানে। সপ্তদশ শতক থেকে রাজপ্রাসাদে ব্যবহৃত অলঙ্কার, সিংহাসন, বাদ্যযন্ত্র, সোনা-রুপোর পদ্ম আকৃতিবিশিষ্ট পালকি, গজদন্তের সামগ্রী, তামাকসেবন যন্ত্র, রাজপোশাক, বন্দুক, মুদ্রা, কাচের সামগ্রী, ঘড়ি, তলোয়ার, প্রথম প্রজন্মের বিদেশি মোটরগাড়ি, প্রাচীন পুঁথিপত্র, তুলসীদাসের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, বাঁধাই ছবি, দেওয়ালচিত্র, ঝাড়বাতি কী নেই! বিদেশি গাড়ি ও অস্ত্রের সম্ভার রীতিমতো তাক লাগানো। 
অবাক করে সেই আমলের বিশাল এক জ্যোতিষ ঘড়ি। ১৮৫২ সালে ভারতীয় খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী দ্বারা নির্মিত দুর্লভ এই মহাকাশ ঘড়িটিতে দেখা যায় চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থানের নির্ভুল মাপ। জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত যাবতীয় গ্রহনক্ষত্রের নির্ভুল বিবরণ দেয় ঘড়িটি। গজদন্তের কারুকার্য শোভিত ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে গঙ্গাদর্শন করে মন অপূর্ব প্রশান্তিতে ভরে যায়। দৃষ্টি আরও প্রসারিত করলে দেখা মিলবে ওপারের সারিবদ্ধ ঘাটের নয়নাভিরাম দৃশ্য। 
রামনগরে গঙ্গাপাড়েই শতাব্দীপ্রাচীন ব্যাসকাশী মন্দির এবং দক্ষিণমুখী হনুমানমন্দির। ব্যাসদেব ছিলেন বেদান্ত সূত্র ও অদ্বৈত বেদান্তের সংকলনকারী। ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব বেদের রচয়িতা। ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতেরও রচয়িতা স্বয়ং তিনি। ব্যাসকাশী মন্দিরে অষ্টধাতুর তিনটি মূর্তি। মাঝেরটি স্বয়ং ব্যাসদেবের। তাঁর দুই পাশে অবস্থান করছেন শুকদেব ও বিশ্বনাথ মূর্তি। স্থানীয় জনশ্রুতি, মহাভারতের মহামান্য কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস স্বয়ং বলেছিলেন, ‘ভক্তের কাশী দর্শনে পুণ্যলাভ তখনই হবে, যখন তার ব্যাসমন্দির দর্শন সম্পূর্ণ হবে।’ যার প্রমাণস্বরূপ আজও ব্যাসকাশীতে ব্যাস মহোৎসব পালিত হয় এবং যার শুভসূচনা ব্যাসমন্দির থেকেই পরম্পরা অনুসারে হয়ে আসছে। রামনগর অঞ্চলটি ব্যাসনগর বা ব্যাসকাশী নামেও পরিচিত। আষাঢ় পূর্ণিমা রামনগরে ব্যাসজয়ন্তী বা ব্যাসপূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয়। স্কন্দপুরাণে কথিত, বেদব্যাস গঙ্গার পূর্বপাড়ে রামনগর এলাকায় ‘দ্বিতীয় কাশী’ নির্মাণ করে নিজেই সেখানে নিজের মূর্তি গড়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। 
রামনগর তথা ব্যাসকাশী অঞ্চলে যে আর একটি বস্তুর খ্যাতি আছে, তা হল বেগুন। স্বাদ ও গুণমানে সেরা এত বিশাল আকৃতির বেগুনের ফলন বিশ্বে নাকি আর কোথাও দেখা যায় না। আরও একটি মজার বিষয়, পথে অগণিত বেওয়ারিশ গাধার অবাধ বিচরণ। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ব্যাসকাশী এলাকায় মৃতরা পরবর্তী জন্মে গর্ধভরূপে জন্মগ্রহণ করেন। তাই রামনগরে যত্রতত্র গাধা ঘোরে। এখানকার মানুষ তাদের খুবই ভক্তিশ্রদ্ধা করে। সামর্থ‌্য অনুযায়ী যত্নআত্তিও। 
কাশীনরেশ যখন রামনগর কেল্লায় অবস্থান করেন, তখন প্রাসাদের বাইরে পতাকা উড্ডীন থাকে। 
রামনগরে একমাসব্যাপী ‘রামলীলা’ ও দশেরায় ‘রাবণ দহন’ অনুষ্ঠিত হয়। সেসব দেখার মতো! সম্পূর্ণ রামনগর তখন রামলীলা ময়দান। শহরের দু’টি পৃথক স্থানে লঙ্কা ও অশোকবনের জন্য মঞ্চ নির্মিত হয়। ‘দশেরা’-য় কাশীমহারাজ স্বয়ং উপস্থিত থাকেন। কাশীনরেশ ওইদিন সুসজ্জিত হাতির পিঠে সিংহাসনে আসীন হয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। আড়ম্বরপূর্ণ ‘রামলীলা’ অনুষ্ঠানও অপরূপ। ফাল্গুন মাসে ‘রাজমঙ্গল’ উৎসবটিও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। নৌকার উপর সাধারণের নৃত্যগীতের মাধ্যমে পালিত হয়। আদপে গঙ্গাবক্ষে নৌকামিছিল। অসিঘাট থেকে শুরু হয়ে গঙ্গাপাড় বরাবর চলতে থাকে। ব্যাসকাশী থেকে দশাশ্বমেধ ঘাটের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। ব্যাসকাশী গঙ্গানদীর পূর্ব পাড়ে, আর বারাণসীর বাকি সমস্ত ঘাটই পশ্চিম পাড়ে। সেখানে প্রতি সন্ধ্যায় জমকালো সন্ধ্যারতি উৎসর্গ করা হয় ভগবান শিব, সূর্য, অগ্নি, গঙ্গামাতা ও তাবৎ বিশ্বকে। সে দৃশ্য আকুল করে তোলে পর্যটকমন। 
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে কাশীর সড়ক দূরত্ব ৬৭৫ কিলোমিটার। রেলপথে অনেক ট্রেন রয়েছে। সময় লাগে সাড়ে ন’ঘণ্টার মতো। উড়ানপথেও কলকাতা থেকে বারাণসী লালবাহাদুর শাস্ত্রী বিমানবন্দর। সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। বারাণসী থেকে গঙ্গানদীর উপর লোহার ব্রিজ পেরিয়ে রামনগর দুর্গ ১১ কিলোমিটার, সময় লাগে মিনিট ২০ মতো। 
কোথায় থাকবেন: ধর্মশালা, আশ্রম এবং নানা দামের ও মানের প্রচুর হোটেল রয়েছে।
স্বাদগ্রহণ: রামনগরের দোকানের লস্যি-মালাই স্বাদ ও গুণে অসাধারণ। স্পেশাল আলুটিক্কারও স্বাদ নেওয়া যেতে পারে। রামনগরে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বাড়ির জন্য রামনগরের স্মারক হিসেবে বেগুন কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
ছবি: লেখক
 
15Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা