অমৃতকথা

শক্তিবাদ ও মহাপ্রভু

শক্তিবাদ হইল ভারতীয় তন্ত্রশাস্ত্রের ভিত্তি। “যা দেবী সবর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।” ইহা হইল শক্তিবাদের মূলমন্ত্র। শক্তি হইতেই জগৎ জাত, শক্তিতেই জগৎ স্থিত, শক্তিতেই জগৎ বিলয়-প্রাপ্ত। তন্ত্রশাস্ত্রমতে শক্তিই পরব্রহ্ম। পুরুষতত্ত্ব শিব আছেন, শবতুল্য। বেদশাস্ত্রের ভিত্তি হইল পুরুষবাদে। “পুরুষ এবেদং সর্ব্বং যদ্ভুতং যচ ভাব্যং”—ইহা হইল পুরুষবাদের মূল মন্ত্র। পুরুষ হইতেই জগৎ সৃষ্ট, পুরুষাশ্রয়েই জগতের স্থিতি, পুরুষেই চরম লয় প্রাপ্তি। বৈদিক শাস্ত্র মতে পুরুষই পরব্রহ্ম। নিগম ও আগম, বৈদিক ও তান্ত্রিক চিন্তাধারা দুই-ই ভারতীয় ঋষির সাধনার সম্পদ্‌। ভারতীয় আধ্যাত্মিক সম্পদ্‌কে অখণ্ডভাবে গ্রহণ করিতে হইলে শক্তিবাদ ও পুরুষবাদের সুষ্ঠু সমাধান ও সামঞ্জস্য অপরিহার্য্য। ভারতীয় প্রধান দর্শনশাস্ত্রসমূহে এই সমাধান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাই পরিস্ফুট।
পুরুষ হইতেছেন শক্তিমান্‌। প্রকৃতি শক্তিরই নামান্তর। শক্তি হইতেই শক্তিমান্‌ কিংবা শক্তিমানেরই শক্তি? শক্তিবাদী বলেন, ধন আছে বলিয়াই ধনবান্‌। শক্তি আছে বলিয়াই শক্তিমান্‌। আগে ধন, পরে ধনশালী। আগে শক্তি, পরে তারা হইতে শক্তিবিশিষ্ট শক্তিমান্‌। পুরুষবাদী বলেন, ধন তো ধনবানেরই করায়ত্ত সম্পদ্‌। শক্তি তো শক্তিমানের অধীন তত্ত্ব। যে অধীন, সে তো গুণীভূত, যাহার অধীন সে-ই বস্তু, সে-ই স্বাধীন। স্বাধীন, স্বরাট্‌ বস্তুই প্রধান। অতএব শক্তিমান্‌ বা পুরুষতত্ত্বই মৌলিক। এখানেই সমস্যা। সকল শাস্ত্রেই এই সমস্যা-সমাধানের প্রচেষ্টা। আদি-তত্ত্ব কে? অনাদি চরম বস্তু কোন্‌টি? শক্তিমান্‌, না শক্তি? পুরুষ না প্রকৃতি? ভগবান্, না ভগবতী‌? কৃষ্ণ, না কালী? তন্ত্রবাদ শক্তিকে প্রধান প্রধান স্থান দিয়াছেন, তদ্বিপরিত অদ্বৈত-বেদান্ত শক্তির কোন স্থানই রাখেন নাই। অদ্বৈত-বেদান্তমতে পরব্রহ্ম নির্ব্বিশেষ, সুতরাং নিঃশক্তিক। শক্তির কার্য্য হইল ক্রিয়া। অদ্বৈত মতে ব্রহ্ম নিষ্ক্রিয়। ব্রহ্ম শক্তি-সম্পর্কবর্জ্জিত পুরুষ। বস্তুতঃ অদ্বৈত ব্রহ্ম পুরুষও নহেন, প্রকৃতিও নহেন। ব্রহ্ম শব্দ ক্লীবলিঙ্গ। শক্তির ক্রিয়া ছাড়া তো জগৎ চলিতে পারে না। ব্রহ্ম যদি নিঃশক্তিক, তাহা হইলে জগতের কি গতি? ইহার উত্তরে অদ্বৈতবাদী বলেন, জগৎ কোন বস্তু নহে। ইহা মিথ্যা। মিথ্যা পদে অলীক নহে, সতে অসতের ভান। রজ্জুতে সর্পভ্রম।
অদ্বৈতমতে শক্তি মায়া। মায়া সদ্বস্তু নহে। ব্রহ্মই সদ্বস্তু। মায়া সৎ হইলে দুইটি সৎ বস্তুর আশঙ্কা হয়, অদ্বৈতবাদই বিপন্ন হয়। মায়া সর্ব্বতোভাবে অসৎও নহে, কারণ অসতের ভান হয় না। সুতরাং মায়া বা শক্তি সৎ ও অসতের মধ্যবর্ত্তী কোন অনির্ব্বচনীয় স্থিতি। এই মতে শক্তি উপেক্ষিত, মিথ্যা বলিয়া গৃহীত। অনিত্য বস্তুতেই শক্তি খেলা। নিত্য সত্য ব্রহ্মে শক্তির বিদ্যমানতা নাই। সাংখ্যদর্শন পুরুষ-প্রকৃতি উভয়কেই সমান মূল্য দেওয়ায় দ্বৈতবাদী। এই মতে পুরুষের ঈক্ষণে প্রকৃতি ক্রিয়াবতী। প্রকৃতির পরিমাপই জগৎপ্রপঞ্চ। প্রকৃতির বন্ধনে পুরুষ বদ্ধ। প্রকৃতি বন্ধন খুলিলে পুরুষ মুক্ত। এই সমাধান সুন্দর, কিন্তু সুদৃঢ় নহে। দুইটি দুর্ব্বলতায় এই মত অদৃঢ়। (১) পুরুষের বহুত্ব। (২) প্রকৃতির জড়ত্ব। সাংখ্যে পুরুষ এক নহে, বহু। অসংখ্য পুরুষ, প্রত্যেকেই কেমন করিয়া নিত্য ও চরম বস্তু, ইহা ভাবিতে বুদ্ধি বিদ্রোহী হয়। সাংখ্যে পুরুষ চৈতন্যময়। প্রকৃতি কিন্তু অচেতনা, জড়া। জড়ের কর্ত্তৃত্ব থাকিতে পারে না। সুতরাং প্রকৃতি অকর্ত্তা। এই দুই অকর্ত্তার মিলেন অন্ধ-খঞ্জ ন্যায়ে অদ্ভূতভাবে জগৎকর্ত্তৃত্ব হয়, ইহা বুঝিয়া লইতে বুদ্ধি বিভ্রান্ত হইয়া পড়ে। বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ মতে চরম তত্ত্ব পরব্রহ্ম পুরুষোত্তম। তিনি প্রকৃতি সম্পর্কহীন নহেন। তিনি প্রকৃতি দ্বারা বিশেষিত। 
মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘সপ্তশতী সমন্বিত চণ্ডীচিন্তা’ থেকে
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা